ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নারী পাচার

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৮ জুলাই ২০২০

নারী পাচার

সমাজের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির ধারায় সার্বিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ আবশ্যকীয় একটি পূর্ব শর্ত। সেখানে অর্ধাংশ নারী যদি সহিংসতা-বঞ্চনা আর সম্ভ্রমহানির শিকার হয় তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ সহজ আর স্বাভাবিক থাকে না। সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশ নারীদের জীবন ও জীবিকা সবক্ষেত্রে মসৃণ এবং কুসুমাস্তীর্ণ নয়। সমাজ-সভ্যতার পরিবর্তনের সমৃদ্ধ যুগে নারীরা যেমন সসম্মানে বেঁচে থাকার অধিকারে অনেক কর্মযোগ নিজেদের আয়ত্বে আনলেও এর বিপরীত ও ভয়ঙ্কর স্রোতে গা ভাসানোর ইতিবৃত্তও কম নয়। সমাজের কতিপয় ঘৃণ্য এবং অপশক্তি নারীদের যে পঙ্কিল অধ্যায়ে নিয়ে যায় তেমন দুঃসহ চিত্রও আমাদের শঙ্কিত করে। সভ্যতা সূর্য অন্ধকারে ঢেকে যায়, সমাজ প্রগতিও মাঝে মধ্যে হুমকির মুখে পড়ে। নারী নির্যাতন, নিপীড়ন নতুন কোন প্রত্যয় নয়। সভ্যতা সূর্যের ঊষালগ্ন থেকেই অর্ধাংশ নারীর যে ঐতিহাসিক বিপর্যয় সেটাও যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা এক সহিংস, পাশবিক কার্যক্রম। যা আজ অবধি নিরন্তর গতিতে বহমান। আর নারীদের অন্ধকার জগতে ফেলে দিতে কিছু পাশবিক শক্তিও সব সময় সক্রিয় ছিল, এখনও আছে। নারী পাচার শব্দটিও অতি পুরনো এবং বহুল প্রচলিত। এর কোপানলে পড়ে দুর্বল, অসহায়, নিরক্ষর এবং হতদরিদ্র নারীরা। যারা জীবিকার সন্ধানে দুর্বৃত্তদের প্রলোভনকেও উপেক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। অনেক সময় বোঝেও না কোথায় তাদের গন্তব্য। নতুবা এমন যেন বিস্তার করা হয় সে আটকানো অব্যবস্থা থেকে বের হওয়াও মুশকিল হয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অসচ্ছল নারীদের পাচারই শুধু নয়, কর্মস্থলে তাদের হঠকারিতার শিকার হওয়া ছাড়াও অনাবশ্যক অত্যাচার, নির্যাতনেরও সম্মুখীন হতে হয়। এমন অসহনীয় চিত্র বহুবার সংবাদ মাধ্যমের খবর হয়েছে। এবার রঙ্গমঞ্চের খলনায়ক বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত এবং দলীয় ক্যাডার আজম খান। এই দুর্বৃত্ত আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবেও পরিচিত। বিদেশে নিয়ে ভাল চাকরি পাওয়ার আকর্ষণে শত শত তরুণী এই পাষ-ের খপ্পরে পড়ে। অভিযুক্ত অপরাধীর বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় সদস্য হিসেবেও একটি রাজনৈতিক ছত্রছায়া আছে। দুবাইয়ের একটি পাঁচতারা রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী এই আজম খান তার নিজের হোটেলেই হরেক রকম অসামাজিক কর্যকলাপ ও কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল বলে গণমাধ্যমে খবর উঠে আসে। এই কুখ্যাত নারী পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারের নামে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তদন্তে বের হয়ে আসে লোমহর্ষক ঘটনা পরম্পরা। তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে অর্ধশত দালালচক্র সব ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। কিশোরী, তরুণী ও যুবতীদের হরেক রকম কাজের লোভ দেখিয়ে তাদের মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। অসহায় নারীরা ভাল কাজ পাওয়ার আকাক্সক্ষায় এমন ঘৃণ্য জালে আটকা পড়তে বাধ্য হয়। তার আগ পর্যন্ত তারা বুঝতেও পারে না কোথায় তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দুঃসহ পরিস্থিতি মোকাবেলার পর তাদের আর কিছুই করার থাকে না। কারণ ততক্ষণে যা ঘটনা সবই ঘটে যায়। চালাকি করত বিভিন্ন কাজকর্মে। যেমন যাওয়ার আগেই বেতনের কথা বলে ২০-২২ হাজার টাকা পরিশোধও করত এই কুখ্যাত নারী পাচারকারী। তার ওপর আস্থা রাখার জন্যই প্রথমে সে নিজেই একটা দাম দিয়ে দিত। শুধু তাই নয়, বিদেশে গিয়ে নারীদের ছোটখাটো কাজকর্মেও সম্পৃক্ত করে দিত। তারপর আস্তে আস্তে এই অপরাধীর স্বরূপ উন্মোচন হতে থাকলে সংশ্লিষ্টরা মুষড়ে পড়লেও তাদের প্রতি আর কোন সুবিচার করা হতো না বলে অভিযোগে উঠে আসছে। আরও জঘন্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে। বিএনপির বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশে উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে তার তোলা ছবি নিয়েও সে ভুক্তভোগীদের প্রতারণা করত। এই আজম খান চাঁদাবাজি, হত্যা, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এই ঘৃণ্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি সবার। নারী পাচার আইনে মূল হোতার মৃত্যুদ-াদেশও দেয়া আছে। তেমন আইনী কার্যক্রমে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এই দাগী আসামির বিচার প্রক্রিয়া যেন সম্পন্ন হয়। সর্বোচ্চ শাস্তিও যেন সে পায় এই দাবি সংশ্লিষ্টও ভুক্তভোগীদের।
×