ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ভোগ লাঘবে সহায়তা দিচ্ছে সরকার

মালয়েশিয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৭ জুলাই ২০২০

মালয়েশিয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশী

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশের ৮ লাখের বেশি কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের বৈধ-অবৈধ কর্মী রয়েছে ৫ লাখের বেশি। সম্প্রতি দেশটির পরিসংখ্যান বিভাগ (ডিওএসএম) এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ‘লকডাউন’ পালনের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্মীদের খাদ্য সহায়তা বাড়িয়েছে। এরপরেও কর্মীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। যে সব কর্মী কুয়ালালামপুরে আছেন তারাই কেবল এই সুবিধা পাচ্ছেন। অন্য প্রদেশে বসবাসকারী কর্মীরা সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ টাকার অভাবে তারা হাইকমিশন পর্যন্ত আসতে পারছেন না। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, সব কর্মীদের সহযোগিতার আওতায় আনা হবে। এ জন্য মালয়েশিয়ায় বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরেই মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশটির সরকারী পরিসংখ্যান বিভাগ (ডিওএসএম) থেকে একটি জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই জরিপে বলা হয়েছে, দেশটিতে ৮ লাখ ২৭ হাজার কর্মী বেকার জীবন যাপন করছেন। তাদের খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের অভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের কর্মীদের হাইকমিশন থেকে সাহায্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ৫ লাখ বৈধ-অবৈধ কর্মীকে সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই সহযোগিতা সবার হাতে যাচ্ছে না। কারণ মালয়েশিয়ার এক একটি প্রদেশ হাইকমিশন থেকে বহু দূরে। কুয়ালালামপুর আসতে তাদের যে খরচ হবে তাতে ওই টাকা দিয়ে তারা ৩ থেকে ৪ দিন চলতে পারবেন। এ কারণে সব কর্মী এই সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ থেকে দেশটিতে শুরু হয় লকডাউন। তখন মালয়েশিয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ লাখের বেশি। লকডাউনের সময় বৃদ্ধির কারণে বেকার হয়ে পড়া কর্মীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২৭ হাজারে। বিদেশে কর্মীদের সহযোগিতার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, বিদেশে আমাদের এক কোটির বেশি কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। তারা দেশের জন্য অনেক বড় অবদান রাখছেন। এই সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আমরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বেশ কয়েকটি দেশ থেকে দূতাবাস, হাইকমিশন ও আমাদের দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে দূতাবাস ও হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বিদেশে বৈধ কর্মীদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সব ধরনের সহযোগিতা করছে। যেসব কোম্পানি সহযোগিতা দিচ্ছে না আমরা সেই সব দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জুম মিটিং করে সমস্যা তুলে ধরে যাচ্ছি। এতে অনেক ভাল কাজ হচ্ছে। কিছু দেশে তো করোনা আক্রান্তদের সরকারীভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে। সিঙ্গাপুর তো কর্মীদের তাদের দেশের মানুষের মতো করে দেখছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে সমস্যা হচ্ছে। সেগুলোও দেখা হচ্ছে। কর্মীরা যাতে কোন ধরনের কষ্টে না থাকেন সে বিষয়ে আমরা সব সময় দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কাজ করছি। এক কোটির বেশি কর্মীদের তো সহযোগিতা করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা সব কর্মীদের খবর রাখার চেষ্টা করছি। এদিকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র বলছে, এক কোটির বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরি করছেন। এদের একটা অংশ কাজ করে চুক্তিভিত্তিক। এমন কর্মীর সংখ্যা কয়েক লাখ, যাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। তারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। এখন তাদের দৈনিক ভিত্তিক কাজ বাতিল করা হয়েছে। দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কোন প্রকার আলাপ করার সুযোগ রাখেনি তারা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে মালদ্বীপ থেকেও এক লাখের বেশি কর্মী দেশে ফিরে আসবে। বর্তমানে বিশেষ ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য ও মালদ্বীপ থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কর্মীদের পরিবারকে এককালীন তিন লাখ টাকা করে সহযোগিতা দেবে প্রবাসী কাল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুরক্ষায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনে এখন পর্যন্ত কর্মীদের জন্য ১০ কোটি টাকার সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। যে সব কর্মী খুব অসুবিধায় আছেন তাদের সহযোগিতায় এই টাকা দেয়া হয়েছে। মূলত এই টাকা বৈধ কর্মীদের জন্য দেয়া হয়। তবে মানবিক দৃষ্টি থেকে অবৈধভাবে যাওয়া কর্মীদের সহযোগিতার আওতায় আনা হয়েছে। কোভিড-১৯ চলাকালীন আমরা এই সহযোগিতা চালিয়ে যাব।
×