ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট করোনা পজিটিভ

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৭ জুলাই ২০২০

দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট করোনা পজিটিভ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জাপানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় রাজধানী টোকিওয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। করোনার হটস্পট হিসেবে পরিচিত লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো দ্বিতীয়বার করোনা পরীক্ষায়ও পজিটিভ হয়েছেন। আর ভারত প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের রেকর্ড করছে। সেপ্টেম্বর নাগাদ দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে এক সমীক্ষায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া করোনার ধাক্কা সামলে উঠে চীনের অর্থনীতিতে উর্ধগতি দেখা যাচ্ছে। করোনা নিয়ে গবেষণায় আরও তিন নতুন লক্ষণ পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, এনডিটিভি, জাপান টাইমস, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনায় এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৩৮ লাখ ১০ হাজার ২৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ২২৩ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮২ লাখ ১৭ হাজার ৭৩ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৪৯ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৪ জন। যাদের মধ্যে ৬০ হাজার ২৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৯ জন। মারা গেছেন ৫ হাজার ৭৬০ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৯৪ হাজার ৫২০ জন। টোকিওয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ॥ নতুন করে রেকর্ড করোনা রোগী শনাক্তের পর জাপানের রাজধানী টোকিওয় সতর্কতার মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে। গবর্নর ইউরিকো কোইকি পরিস্থিতি অনেকটাই গুরুতর বলে বর্ণনা করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে কোইকি জনগণকে প্রয়োজনে ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে আমাদের জনগণ ও ব্যবসায়ীদের জন্য সতর্কতা জারি করতেই হচ্ছে। আমি যা বুঝতে পারছি তাতে মনে হচ্ছে, এখন আমরা একটি গুরুতর পরিস্থিতিতে আছি। পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, টোকিওয় ভাইরাস সংক্রমণ এখন চারটি মাত্রার সবচেয়ে ওপরে ‘লাল’ এর পর্যায়ে আছে। টোকিওতে তরুণদের মধ্যে সংক্রমণ এবং আক্রান্ত উপসর্গহীনদের সংখ্যা বাড়ছে বলে মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। করোনা মহামারীতে সারা বিশ্বে পর্যটন খাত প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ভ্রমণে উৎসাহ দিয়ে দেশের পর্যটন খাতকে বাঁচাতে জাপানের কেন্দ্রীয় সরকার ‘গো টু ট্র্যাভেল’ শীর্ষক প্রচার শুরু করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় আবার কোভিড-১৯ এর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কায় সব মহল থেকে এই ভ্রমণ প্রকল্প স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের ভেতরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে টোকিওর মতো করোনা সংক্রমণ বেশি থাকা অঞ্চলগুলোতে মানুষের ঢোকা এবং বের হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যাপকমাত্রায় কমিউনিটি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। জাপানের গ্রামীণ এলাকায় করোনা এখনও সেভাবে ছড়ায়নি। তাই সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন রাজধানীর বাসিন্দাদের গ্রামে থাকা তাদের মা-বাবা কিংবা অন্য স্বজনদের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। সরকার ভ্রমণ প্রকল্পের কাজ চালিয়ে গেলে করোনা মহামারী জাপানে ‘মানুষ-সৃষ্ট দুর্যোগে’ পরিণত হবে বলে সতর্ক করেছেন মুৎসু নগরীর মেয়র। যদিও জাপানের অর্থমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরো বলেন, সরকার অত্যন্ত সতর্কভাবে এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। ভ্রমণে মানুষকে উৎসাহ দিতে সরকার থেকে কেনাকাটা ও খাবারে নানা রকম ছাড় দেয়া হচ্ছে। আমরা অবশ্যই আমাদের জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেব এবং সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখব। জাপানে ভাইরাসের প্রকোপ ॥ জাপানে কেবল রাজধানী টোকিওই নয় অন্যান্য স্থানেও সংক্রমণ বাড়ছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় ওসাকায় নতুন ৬১ জনের ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে। ২০ এপ্রিলের পর ওসাকায় এটিই একদিনে সবচেয়ে বেশি ভাইরাস সংক্রমণ। ওদিকে টোকিওয় দৈনিক ভাইরাস সংক্রমণ গত সাত দিনের মধ্যে চারদিনেই ২০০ পার হয়ে গেছে। গত শুক্রবার টোকিওয় সংক্রমণের রেকর্ড দাঁড়ায় ২৪৩ জনে। বয়স ২০ থেকে ৩০ এর কোটায় থাকা মানুষদের মধ্যেই সংক্রমণ ঘটছে বেশি। টোকিওর গবর্নর কোইকি মানুষজনকে রেস্টুরেন্টে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত সপ্তাহ থেকে করোনা রোগী দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার টোকিওর হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ছে। দ্বিতীয়বারও পজিটিভ বোলসোনারো ॥ কোয়ারেন্টাইনে থেকে বিরক্ত হয়ে ওঠা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো দ্বিতীয় দফার পরীক্ষাতেও করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। বুধবার ব্রাসিলিয়ার সরকারী বাসভবন থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি এ কথা জানান। গত সপ্তাহের সোমবার করোনায় আক্রান্ত বোলসোনারো টেলিফোনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, আইসোলেশনে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। তার সবকিছুই ভাল আছে, কোন লক্ষণ নেই। তাই আবার টেস্ট করাবেন। রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে দৈনন্দিন কাজে ফিরে যাবেন। মঙ্গলবার সকালে দ্বিতীয় টেস্ট করান তিনি। সেদিন সন্ধ্যায় রিপোর্ট হাতে পান, তবে তা প্রকাশ করেন পরের দিন। করোনা থেকে সেরে না উঠলেও ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমি ভাল আছি, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। গতকাল সকালে টেস্ট করিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় ফল আসে। তাতে দেখা যায়, আমি এখনও করোনা পজিটিভ। তিনি জানিয়েছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন খাওয়াও চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতে আরও ৬১৪ মৃত্যু ॥ একের পর এক সংক্রমণের রেকর্ড ভাঙছে ভারতে। দেশটিতে হু হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। নতুন করে ৩২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী করোনা আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা এখন সাড়ে ৯ লাখ ৭০ হাজার ১৬৯ জন হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছে যে, ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৬৯৫ জন। এখন পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭৬। কয়েকদিন ধরেই আক্রান্ত বাড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিনের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিনই ২৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সুস্থ হয়েছেন ছয় লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০৫ জন। কাতালোনিয়ায় ফের লকডাউন ॥ স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলে নতুন করে আবার মহামারী করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ায় প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষকে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে লকডাউন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ জারি থাকার পর সম্প্রতি স্পেন থেকে লকডাউন প্রত্যাহারের পর নতুন করে এই সংক্রমণ শুরু হয়। বার্সেলোনা থেকে ১৮০ কিলোমিটার পশ্চিমের জেইদা এলাকায় স্টে-এ্যাট-হোম অর্ডার জারি করতে চেয়ে আঞ্চলিক সরকার আদালতে আবেদন করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রেকর্ড ॥ যুক্তরাষ্ট্র করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন নতুন রেকর্ড করে যাচ্ছে। বুধবার জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৬৭ হাজার ৬৩২ জন লোকের ভাইরাসটিতে পজিটিভ এসেছে। টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট হেলথ সার্ভিসের খবরে, সেখানে ১০ হাজার ৭৯১ জন আক্রান্ত ও ১১০ জনের প্রাণহানির কথা বলা হয়েছে। এই দুটো সংখ্যা অঙ্গরাজ্যটিতে আক্রান্তের নতুন উর্ধগতি বলে বলা হয়েছে। ওকলাহোমার গবর্নর কেভিন স্টিট বুধবার বলেন, তিনি করোনায় পজিটিভ হয়েছে। চীনের অর্থনীতিতে উর্ধগতি ॥ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে দেশটির অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। তবে এর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যেই করোনার ধাক্কা সামলে নিয়ে দেশটির অর্থনীতিতে উর্ধগতি লক্ষ্য করা গেছে। বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের পর দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। এ বছরের প্রথম তিন মাস দেশটির অর্থনীতিতে খুব তীক্ষè একটি নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়। করোনার আরও ৩ নতুন লক্ষণ ॥ ইতোমধ্যে মহামারী করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরে ছয় মাস কেটে গেলেও এখনও কমেনি আক্রান্তের হার। প্রতিনিয়তই দেশে দেশে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এখনও ভাইরাসটি কীভাবে শরীরে আক্রমণ করে তা জানার চেষ্টা করছেন, প্রতিদিন আরও নতুন লক্ষণ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রেও সেন্টার ফর ন্যাশনাল ডিজিজ (সিডিসি) করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহের তালিকায় তিনটি নতুন লক্ষণ যুক্ত করেছে। এমনটাই প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তা হলো- বুকে চাপ ধরা ও নাক দিয়ে পানি পড়া ॥ করোনার সর্বাধিক পরিচিত লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো শুকনো কাশি হওয়া বা সর্দি লাগা। সর্বশেষ অনুসন্ধান অনুসারে, রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের প্রারম্ভিক দিনগুলোতে লক্ষণ হিসাবে বুকে চাপ ধরা এবং নাক দিয়ে পানি পড়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে, ভাইরাসটি নাক থেকে বিস্তার করেছে যা পরে নাকের ইনফেকশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বমি বমি ভাব ॥ নিজেকে লুকিয়ে রাখা বা ছদ্মবেশ ধারণ করা সম্ভবত করোনার অন্যতম স্বভাব। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন যে, বমি বমি ভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো লক্ষণগুলো হালকা সংক্রমণের ক্ষেত্রে জড়িত হতে পারে। যারা কেবল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা অনুভব করেন এবং প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান না, তাদের ক্ষেত্রে এটি আরও বাড়তে পারে। পেটে ব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস ও স্বাদের অনুভূতি চলে যাওয়াও এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ডায়রিয়া ॥ আরও একটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইস্যুকে খারিজ করা উচিত নয়, তা হলো ডায়রিয়া। জানা গেছে যে, অন্য ভাইরাসজনিত রোগের মতো, করোনাও হজম সিস্টেমে আক্রমণ করতে পারে এবং একে ভারসাম্যহীন করে তুলতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলো সুস্থ হওয়ার গতি ধীর করে দেয়। আপনার যদি ডায়রিয়ার লক্ষণ থাকে যেমন- পানিযুক্ত বা ঘন ঘন মল, পেট খারাপ হওয়া বা ৩-৪ দিনের জন্য পাকস্থলীতে সমস্যা বা করোনার অন্য পরিচিত উপসর্গগুলো দেখা দেয় তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন। এর জন্য জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন।
×