ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়ানোর আশা বাংলাদেশ দলের

প্রকাশিত: ২০:২৩, ৮ জুলাই ২০২০

বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়ানোর আশা বাংলাদেশ দলের

ধারাবাহিক ব্যর্থতার মাঝে ২০১৯ সালে দেশের ফুটবলে জেগে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। পুরো বছরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রশংসনীয় পারফরমেন্স প্রদর্শন করেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কিন্তু ডিসেম্বরে এসএ গেমস থেকে আবারও সঙ্গী হয়েছে ব্যর্থতা। যে প্রমাণ আরেকবার মিলে গত জানুয়ারিতে হওয়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজত বিশেষ আসরে নির্লজ্জ ব্যর্থতার স্বাক্ষর রাখেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে কোনোরকমে সেমিফাইনালের টিকেট পেলেও ফাইনালে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন জামাল, আশরাফুল, সাদ, মতিনরা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডাকাপ আয়োজন হলেও সফলতার দেখা পায়নি কোচ জেমি ডে’র দল। এই ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আবারও আসছে। সামনেই বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবল। এখানে ভাল করতে পারলে আবারও দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে পারবেন ফুটবলাররা। ঘাতক করোনাভাইরাসের করাল থাবায় ক্ষতবিক্ষত গোটা দুনিয়া ধীরে ধীরে পুরনো রূপে ফিরছে। নির্মল বিনোদনের মাধ্যম ক্রীড়াঙ্গনও মুখরিত হতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হতে যাচ্ছে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের বাকি অংশের খেলা। আগামী অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মিশন। ইতোমধ্যে স্থগিত হওয়া বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের ম্যাচগুলোর নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার নির্দেশনা অনুসারে এএফসি আগামী অক্টোবর ও নবেম্বরে বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজন করবে। এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কাতার, ওমান, ভারত ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৮ ম্যাচের চারটি খেলেছে। বাকি ৪ ম্যাচের দুটি অক্টোবরে ও দুটি হবে নবেম্বরে। নতুন সূচী অনুযায়ী বাংলাদেশ আগামী ৮ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলবে সিলেটে। এরপর ১৩ অক্টোবর দোহায় খেলবে স্বাগতিক কাতারের বিরুদ্ধে ফিরতি ম্যাচ। বাংলাদেশ শেষ দুটি ম্যাচ খেলবে নবেম্বরে ভারত ও ওমানের বিরুদ্ধে। সূচী অনুযায়ী ১২ ও ১৭ নবেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচ দুটি হওয়ার কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এখন এ ম্যাচ দুটিও হবে সিলেটে। ফিফা ও এএফসির নির্দেশনা অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে না থাকায় বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের সব হোম ম্যাচ সিলেটে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফুফে। বাছাইপর্বে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলা চারটি ম্যাচেই দারুণ পারফরমেন্স প্রদর্শন করেছে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তাজিকিস্তানের দুশানবেতে আফগানিস্তানের কাছে হার মানে মাত্র ১-০ গোলে। দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকায় কাতারের কাছে হেরে যায় ২-০ গোলে। তৃতীয় ম্যাচে কলকাতায় ভারতের সঙ্গে ড্র করের ১-১ গোলে। ৪২ মিনিটে সাদ উদ্দিনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয় ৮৮ মিনিটে গোল হজম করে। চতুর্থ ম্যাচে ওমানের মাটিতে তাদের কাছে হার ৪-১ গোলে। বাংলাদেশের সূচী পেয়ে বেজায় খুশি দলটির ইংলিশ কোচ জেমি ডে। নিপাট এই ভদ্রলোক বলেন, আমি খুব রোমাঞ্চিত যে ফুটবল ফের মাঠে ফিরছে। আমি মনে করি, ফুটবল সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বেলিত। এখন সবাই নিজেদের পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে। ফুটবলাররা অনেকদিন খেলার বাইরে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য ফুটবলারদের ফিটনেস তৈরি করতে চ্যালেঞ্জের কথাও জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ। এ প্রসঙ্গে জেমি ডে বলেন, আমি মনে করি পাঁচ সপ্তাহ অনুশীলন হলে ভাল হবে। ইংলিশ ক্লাবগুলো এরকম সময় নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করে। এখন সবকিছু ঠিকঠাক হওয়াটা জরুরী। ইংলিশ কোচ আরও বলেন, অনুশীলনটা দেশের বাইরে হলে ভাল হয়; এতে ফুটবলাররা ভাল সুবিধা পাবে। বসুন্ধরা কিংসের এএফসি কাপের ম্যাচ আছে অক্টোবর-নবেম্বরে। এ কারণে কিংসের ফুটবলারদের হয়ত পাওয়া যাবে না। আমি ৩৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে শুরু করতে চাই ক্যাম্প। এক সপ্তাহ শেষে সেখান থেকে হয়ত কমিয়ে ২৪ জনে আনব। গত মাসের মাঝামাঝিতে ইংলিশ এই কোচের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। জাতীয় ফুটবল দলের সঙ্গে আরও দুই বছর কাজ করবেন ব্রিটিশ কোচ। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৪ আগস্ট থেকে দলের দায়িত্ব পালন শুরু করবেন তিনি। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো লাল-সবুজের দায়িত্বে তিনি। চুক্তি স্বাক্ষর করে জেমি ভিডিও বার্তায় বলেন, আমি নতুন চুক্তিতে রাজি হয়েছি। তাই হেড কোচ হিসেবে আগামী দুই বছর বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে থাকছি। নতুন চুক্তি করতে পেরে আমিও খুব খুশি। এখন বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়াই আমার লক্ষ্য। তবে এখন জেমির প্রধান কাজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দেশকে সাফল্য এনে দেয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সামনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের কঠিন ম্যাচ আছে। ম্যাচগুলোর জন্য ফুটবলারদের প্রস্তুত করতে হবে। আশা করছি আমরা ইতিবাচক ফল করতে পারব। জেমি বলেন, আফগানিস্তান ও ভারত দুটিই কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পয়েন্ট পাব না, এই মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামা যাবে না। সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন ওদের বিরুদ্ধে পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারি। ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন জোয়ার এসেছে। তারুণ্যনির্ভর জাতীয় দলের পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে আশার আলো। আর ফুটবলের এই উন্নতির পেছনে বড় অবদান যার, তিনি জেমি ডে। শিষ্যদের সঙ্গে তার আছে মধুর সম্পর্ক। ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গেও সম্পর্কটা ভালো। এসবের মিশ্রণে তিনি ফুটবলকে ভাসাতে চান স্বর্ণসাফল্যে। জেমির অধীনে নতুন উদ্যমে খেলেছে ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’রা। ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সাফল্য আসেনি। তবে ইংলিশ কোচের দর্শনে পাল্টে গেছে খেলার ধরন, পরিবর্তন এসেছে মানসিকতায়। ভেবে-চিন্তে তাই জেমিকেই লম্বা সময়ের জন্য রেখে দিতে চায় বাফুফে। জেমির সবচেয়ে গুণÑ তিনিই বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম কোচ, যিনি বাংলাদেশকে দুটি অর্জন এনে দিয়েছেন। একটি এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া। আরেকটি এএফসি অ-২৩ বাছাইপর্বে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে জয়ী করানো। এবার তার মিশন বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পয়েন্ট এনে দেয়া। বিশ্বমঞ্চে ভাল করতে মুখিয়ে আছেন বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলাররাও। এর মধ্যে অন্যতম ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন। সিলেটের এই যুবা গত বছর ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিরুদ্ধে গোল করে তারকা বনে গেছেন। সেবার শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে জয় হাতছাড়া হলেও এবার ফিরতি লেগে দেশের মাটিতে জয় চান সিলেটের টগবগে এই তরুণ। সাদের উঠে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ওয়াহেদ আহমেদ। তিনিই সাদকে আবাহনীতে নিয়ে আসেন ২০১৬ সালে। সেই থেকে এই ক্লাবের জার্সি গায়েই খেলে যাচ্ছেন তিনি। তবে সাদ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি কুড়ান গত বছরের ১৫ অক্টোবর। কলকাতার সল্টলেকের বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দৃষ্টিনন্দন গোল করেন। জাতীয় দলের হয়ে এটিই প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র গোল তার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফিরতি ম্যাচটি হবে আগামী ১২ নবেম্বর। এবার নিজেদের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে খেলবেন জামাল ভুঁইয়া-সাদ উদ্দিনরা। ম্যাচে জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না সাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার মনে হয় সেই ম্যাচে আমরা দুই দলই খুব ভাল স্কোয়াড নিয়ে নেমেছিলাম। আমাদের বর্তমান যে স্কোয়াড আছে আশাকরি যদি আমরা আমাদের আশানুরূপ পারফর্মেন্স ও ফর্ম ধরে রাখতে পারি, ভারতের সঙ্গে আমি জয়ের সম্ভাবনা দেখি। ম্যাচটি অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তাছাড়া নিজের মাঠে খেলা হওয়ায় আমরা একটু বাড়তি সুবিধাতো অবশ্যই পাব। সাদ বলেন, নিজেদের মাঠে খেলা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ, তাছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে খেলাটা নিঃসন্দেহে সামান্য বাড়তি উত্তেজনা বহন করে। আমরা অবশ্যই শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে জয়ের জন্যই নামব। ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই গত ম্যাচের মতো স্কোর করে দলকে এগিয়ে দিতে চাই এবং ম্যাচের সম্পূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। বিশ্বকাপ বাছাই সামনে রেখে বাফুফে প্রাথমিকভাবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৪৪ খেলোয়াড় এবং কোচিংকর্মীদের ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে। ক্যাম্প শুরুর আগে সবার কোভিড-১৯ টেস্ট করা হবে। এরপরে ৩০ থেকে ৩৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে করা হবে চূড়ান্ত ক্যাম্প।
×