ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ভাসমান পেয়ারার হাট

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ৩ জুলাই ২০২০

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ভাসমান পেয়ারার হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর ॥ স্বরূপকাঠীর পেয়ারা দেশ ছাড়িয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছে বিদেশেও। স্বরূপকাঠীর পেয়ারাকে অনেকেই বলে থাকেন বাংলার আপেল। আর এই পেয়ারা কেনা-বেচার হাটও খ্যাতি পেয়েছে সর্বত্র। কারণ অন্য দশটা হাটের চেয়ে ব্যতিক্রম এই হাট। নদী বেষ্টিত পিরোপুরের স্বরূপকাঠিতে ভাসমান পেয়ারার হাট নজর কেড়েছে সবার। স্থানীয়দের মতে, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে আটঘর কুড়িয়ানায় চাষ হচ্ছে স্থানীয় জাতের পেয়ারা। জুন থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী ২ মাস চলে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ। এ মৌসুমে সহজে পথ চলাসহ ফলফলাদি বহনের প্রধান বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হয় নৌকা। ছোট ছোট নৌকায় করে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় বিভিন্ন খালের ভাসমান হাটে। সেখান থেকে বড় ট্রলার, ট্রাক ও লঞ্চযোগে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতি হাটেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পেয়ারা কিনতে যান ব্যবসায়ীরা। তাদের পদচারণার পাশাপাশি অনেকেই যান ভাসমান এই পেয়ারার হাট দেখতে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬ শ একর জমিতে স্থানীয় জাতের পেয়ারা চাষ হয়। উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠী, কঠুরাকাঠী, আতা ও মাদ্রাসহ ২৬টি গ্রামে পেয়ারা চাষ হয়। ২ হাজার ২৫টি পেয়ারা বাগানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের ৫ সহস্রাধিক সদস্য। পেয়ারার ফলন ভালো হলে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৮-৯ মেট্রিক টন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বহু আগে এই অঞ্চলের একজন ভারতের বিহার রাজ্যের গয়ায় যান তীর্থ করতে। সেখানেই এ ফল দেখে বীজ এনে রোপণ করেছিলেন আটঘর-কুড়িয়ানাতে। আর গয়া থেকে আনা বীজরোপণ করে ফল পাওয়ার পর এর নাম রাখা হয়েছিল ‘গয়া’। কয়েকজন পাইকার ব্যবসায়ী জানান, বরিশাল বিভাগের এই অঞ্চলে দেশের অন্য জায়গার চেয়ে বেশি পেয়ারা পাওয়া যায়। যা পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এখান নদী ও খাল কেন্দ্রীক ব্যবসার প্রসার ঘটায় মালামাল পরিবহনে খরচ কম। একইসঙ্গে পরিবহন সহজও। তবে ইচ্ছে করলে সড়ক পথেও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব, প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাটও আছে। তবে সময়, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে নৌকায় যাতায়াত আর যোগাযোগ ব্যবস্থাটা এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। স্থানীয় এক পেয়ারা ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে জানা যায়, পেয়ারার বাজার কেবল বসতে শুরু করেছে। আরও কয়েকদিন গেলে বেশ জমজমাট হবে। ভিমরুলি গ্রামের খালগুলোতে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। আর শুক্রবারসহ সপ্তাহে দুইদিন আটঘর-কুড়িয়ানায় বসে হাট। তবে আটঘর কুড়িয়ানার হাট ভোর থেকে শুরু হয়ে ৯ টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
×