স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) রোগের টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গত ৮ মার্চ এই টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু করে। পরবর্তী পর্যায় যথাযথভাবে পেরোতে পারলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে টিকাটি বাজারে আনা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আবিষ্কৃত টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উদ্যোগ নেয়া হবে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ভ্যাকসিনটি দ্বিতীয় ধাপে এনিমেল মডেলে ট্রায়াল করা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন আশা প্রকাশ করে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কর্মকর্তারা। এই টিকা আবিষ্কারে সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সিইও ড. কাকন নাগ এবং সিওও ড. নাজনীন সুলতানা। সংবাদ সম্মেলনে গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশিদ টিকা সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রুপের পরিচালক ও নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যবান্ধব বর্তমান সরকার দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড স্বাস্থ্যসেবায় নতুন নতুন চিকিৎসাসেবা উদ্ভাবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। করোনার এই ভ্যাকসিন আমরা মুজিব জন্মশত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়েছি।
চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশিদ বলেন, শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করে নয়, দেশের জন্য কিছু একটা করার জন্যই আমরা নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আমাদের গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীর ওপর প্রাথমিক ট্রায়াল করেছি। বর্তমানে গ্লোব বায়োটেকের তেজগাঁওয়ের ল্যাবে বাকি কাজ চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনসিবিআই ভাইরাস ডেটাবেজ অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পাঁচ হাজার ৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি।
সিকোয়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড তাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করে যা যৌক্তিকভাবে এই ভৌগোলিক অঞ্চলে অধিকতর কার্যকরী হবে। ওই টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডেটাবেজে জমা দিয়েছি যা ইতোমধ্যেই এনসিবিআই কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রকাশিত হয়েছে।
আবিষ্কৃত টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, আবিষ্কৃত টিকা বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে সেটা বিরাট অগ্রগতি। টিকার দ্বিতীয় ধাপে এনিমেল মডেলে ট্রায়াল করা হবে। এজন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে। এরপরই এই ভ্যাকসিন মানব শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে। ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাওয়ার জন্য সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হবে। সরকারের অনুমতি পেলেই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হবে। পরবর্তী পর্যায় যথাযথভাবে পেরোতে পারলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে টিকাটি বাজারে আনা সম্ভব।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দূরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে ‘গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড’ গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ ‘শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ’ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে।
