মস্কো থেকে প্রায় চার হাজার আট শ’ কিলোমিটার দূরের রুশ শহর ভারখয়ানস্ক। এটি উত্তর মেরুর অন্যতম শীতল এলাকা। শীতকালে হিমাঙ্কের নিচে ৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় অভ্যস্ত সেখানকার বাসিন্দারা। চরম আবহাওয়ার কারণে শহরে লোকজনের সংখ্যাও কম। মাত্র এক হাজার তিন শ জন। বছরের এই সময়টায় সাধারণত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। উত্তর মেরু বলয়ের ভারখয়ানস্ক শহর অবশ্য তাপমাত্রার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ওই শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়েছে। জুন মাসে হঠাৎ এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। বস্তুত গত সপ্তাহেই ভারখয়ানস্কের উত্তর-পূর্বে প্রায় এক হাজার এক শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চেরস্কি শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে। তখন থেকেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিশ্বের অন্য অংশের তুলনায় উত্তর মেরুতে অনেক দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে। উষ্ণায়নই এর জন্য দায়ী। প্রথমে পরিসংখ্যানকে একটু সন্দেহের চোখেই দেখা হচ্ছিল। ভাবা হয়েছিল- হয়তো তাপমাত্রা যন্ত্রে কোন গোলমাল হয়েছে। কিন্তু তারপরের দিনই, ভারখয়ানস্কের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৩৫ ডিগ্রীতে। রেকর্ড তাপমাত্রা দেখে বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা কিছুটা শঙ্কিত। মূলত পুরো সাইবেরীয় অঞ্চলই অতিদ্রুত বরফ গলার জন্য সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়ে। সেখানকার ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চল (পারমাফ্রস্ট) উষ্ণ হয়ে ওঠায় গত মাসেই নরিলস্ক শহরের একটি ডিজেলভর্তি ট্যাংক ফুটো হয়ে যায়। সাড়ে সতেরো হাজার টন তেল পড়ে দূষিত করে দেয় স্থানীয় একটি নদীকে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনও। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ এক নতুন চরমভাবাপন্ন জলবায়ু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বরফ গলছে ইতালির প্রেসেনা হিমবাহেরও। ১৯৯৩ সাল থেকে ওই হিমবাহের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গলে গেছে। হিমাবাহটিকে বাঁচাতে এবার তাই এক বিশেষ ধরনের ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি বড় ত্রিপলজুড়ে তার ওপরে চাপানো হয়েছে বালুর বস্তা। যাতে সূর্যের আলো হিমবাহে সরাসরি প্রবেশ করে তাকে দ্রুত গলিয়ে দিতে না পারে। -এএফপি