ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে দু’তিন মাসের মধ্যেই এ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে

করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়

প্রকাশিত: ২২:২২, ২১ জুন ২০২০

করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়

রশিদ মামুন ॥ করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের শরীরে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধী এ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। কমার এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ্যান্টিবডি এক পর্যায়ে বিলীন হয়েও যেতে পারে। গত বৃহস্পতিবার নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত এক চীনা গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে করে বিশে^র বিভিন্ন দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকা ভ্যাকসিনের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা বজায় থাকা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে এই গবেষণায় রহস্যময় করোনা আরও রহস্যের জন্ম দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার ফক্স নিউজের এক রিপোর্টে নেচার মেডিসিনকে উদ্ধৃত করে নতুন শঙ্কার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। এত দিন মনে করা হচ্ছিল একবার করোনা আক্রান্ত হলে আর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিল মানুষের শরীরে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা এ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয় তার কারণে আর ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলেও সক্রিয় হতে পারে না। কেউ কেউ বলছিলেন, কোন একজন মানুষ একবার বসন্ত বা পক্সে আক্রান্ত হলে, তিনি আর কোন দিন এই রোগে আক্রান্ত হন না। ভ্যারিসেলা জুস্টার ভাইরাস বাহিত পক্স একবার হলে আক্রান্তের শরীরে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাই ভবিষ্যতে ভাইরাসটি প্রতিরোধ করে। কোভিড-১৯ ও একটি ভাইরাস বাহিত রোগ। ফলে এক্ষেত্রে এমনটি অশা করছিলেন অনেক গবেষক। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এমন আশা বজায় না রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ ভাইরাসের এর প্রকৃতি অন্য ভাইরাস থেকে আলাদা বলে প্রমাণ মিলেছে এই গবেষণায়। নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ফক্স নিউজ বলছে, উপসর্গহীন করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এ্যান্টিবডির পরিমাণ এতটাই কমে যায় যে তা কোন পরীক্ষাতেও ধরা পড়ে না। অন্যদিকে উপসর্গ থাকার পর যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষের শরীর থেকে এ্যান্টিবডি একেবারে বিলীন হয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে অনেক চেষ্টার পরও এইডস এর মতো ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করা যাচ্ছে না। সেখানে খুব অল্প সময়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা এসেছে। তবে এই টিকা প্রয়োগের পর মানুষের শরীরে যে এ্যান্টিবডি তৈরি হবে তার স্থায়িত্ব নিয়ে এবার সংশয় তৈরি হলো। দ্রুত আবিষ্কারের চেষ্টায় থাকা টিকাগুলো বছরের শেষ নাগাদ মানুষের শরীরে ব্যাপক হারে প্রয়োগের উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে ভ্যাক্সিনই একমাত্র রুখতে পারে এই ভাইরাসকে। কিন্তু তা কত দিনের জন্য, নতুন এই গবেষণা এই প্রশ্নটিই ছুড়ে দিয়েছে। নেচার মেডিসিন এর ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে চীনের ওয়াংজু জেলাতে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোন ওষুধ আবিষ্কার না হওয়াতে রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করোনা থেকে বাঁচবার প্রধান উপায় বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কারও কারও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাল না হওয়াতে তাদের ওষুধের প্রয়োজন হচ্ছে। তবে কারও কারও শরীরে ওষুধ ব্যবহারেও করোনার প্রকোপ কমাতে পারে না। গতকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে যা নয় ভাগ। ক্রমান্বয়ে কিছু প্রতিষেধক ব্যবহারে মৃত্যু হার কিছুটা কমে আসলেও করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ রয়ে গেছেন। যাদের অবস্থা অনেকটা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই বলা চলে। এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের গবেষণার ফল মানুষকে আবারও চিন্তার মধ্যে ফেলছে। চীনের ওয়াংজু জেলায় বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ থেকে যারা সেরে উঠেছেন তাদের ওপর এই গবেষণা চালিয়েছে। এতে দুই ধরনের মানুষকে গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে। এক ধরনের মানুষ যারা করোনা পজিটিভ ছিলেন কিন্তু কোন উপসর্গ ছিল না। অন্য আরেক ধরনের মানুষ যাদের উপসর্গ ছিল। মোট ৩৭ জনের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। চলতি বছর ২১ জানুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার জন্য যাদের বেছে নেয়া হয় তারা সকলে আরটি পিসিআর কিট এ করোনা শনান্ত করেছিলেন। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী চলে আসা করোনা পরীক্ষার প্রচলিত পদ্ধতিতেই করোনা শনান্ত করা হয়েছিল। গবেষণার রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন বয়স, ভিন্নতর লিঙ্গের মানুষ গবেষণায় অংশ নেন। এদের এ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, উপসর্গ ছিল না এমন ৪০ শতাংশ মানুষের শরীরে আক্রান্ত হওয়ার দুই মাসের মাথায় এ্যান্টিবডি কমতে শুরু করেছে। আর আক্রান্ত হওয়ার পর উপসর্গ ছিল এমন ১২ দশমিক ৯ শতাংশের শরীরে আর এ্যান্টিবডি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে করোনা প্রতিরোধে কি পরিমাণ এ্যান্টিবডির উপস্থিতি শরীরে দরকার সে বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই গবেষণায় যে বিষয়টি দেখানো হয়েছে তা হচ্ছে প্রায় ১৩ শতাংশের শরীরে দুই থেকে তিন মাসের মাথায় এ্যান্টিবডি পাওয়াই যাচ্ছে না। অর্থাৎ এদের আবারও করোনা হওয়ার ঝুঁকি থাকছে। গবেষণা বলছে যেসব আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গ বহন করেছেন তারা উপসর্গহীনদের তুলনায় বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে এ্যান্টিবডি কিছুটা বেশি সময় বজায় থাকতে পারে।
×