ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কার্ডিফে আশরাফুল, মিরপুরে অভিষেকেই মুস্তাফিজের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০০:১৫, ১৯ জুন ২০২০

কার্ডিফে আশরাফুল, মিরপুরে অভিষেকেই মুস্তাফিজের ইতিহাস

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দিনটা একই, তবে ব্যবধানটা ১০ বছরের। ২০০৫ সালের ১৮ জুন কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিস্ময় ছড়িয়েছিলেন। সেটি ছিল ক্রিকেট পরাশক্তি অসিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আজ পর্যন্ত একমাত্র জয়। ক্যারিয়ারের প্রথম শতকেই বাজিমাত করেন আশরাফুল ম্যাচসেরা হয়ে। ওই ঘটনার ঠিক ১০ বছর পর (১৮ জুন, ২০১৫) মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আরেক ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতের দর্প চূর্ণ করে দেয় বাংলাদেশ। সেই জয়ের নায়ক ছিলেন বাঁহাতি এক অচেনা তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষেক ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট শিকার করে গড়েছিলেন ইতিহাস, বাংলাদেশ পেয়েছিল ৭৯ রানের বিশাল জয় যা ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। ১০ বছরের বিশাল ব্যবধান থাকলেও একইদিনে দু’জন বিশ্বের দুইপ্রান্তে এই ইতিহাস গড়েছিলেন তরুণ বয়সে। মুস্তাফিজ ১৯ আর আশরাফুল ২০ বছর বয়সে এই দুই কীর্তি গড়েন। ওয়ানডেতে ২২ বার বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয়েছে। ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। বাকি ২০ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটাই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, বাকি সবগুলোতে জয় অসিদের। একমাত্র সেই জয়টি এসেছিল ১৫ বছর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপার স্টার ও পোস্টার বয় আশরাফুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। ইংল্যান্ডের কার্ডিফ ভেন্যুকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেন তিনি ১৮ জুন, ২০০৫। ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ। টস জিতে আগে ব্যাট করে তেমন সুবিধা করতে পারেনি রিকি পন্টিংয়ের দল। দলীয় ৯ রানে ২টি আর ৫৭ রানে ৩ উইকেট হারালেও ডেমিয়েন মার্টিনের ৭৭ ও তরুণ মাইকেল ক্লার্কের ৫৪ রানে ভর করে ৫ উইকেটে ২৪৯ রানের পুঁজি পায় অসিরা। পেসার তাপস বৈশ্য ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। জবাবে ৭২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তৃতীয় উইকেটে আশরাফুল ও অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ১৩০ রানের জুটিতে জয়ের পথে আসে বাংলাদেশ। হাবিবুল ৪৭ করে রানআউট হয়ে যাওয়ার পর আশরাফুল ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পান। তবে এরপরই আউট হয়ে যান ১১৮ বলে ১১ চারে ১০০ করা এই তরুণ। তখন জয় পেতে ১৭ বলে ২৩ রান প্রয়োজন বাংলাদেশের। সেই কাজটি ৪ বল বাকি থাকতেই করে ফিরেছেন আফতাব আহমেদ (১৩ বলে অপরাজিত ২১) ও মোহাম্মদ রফিক ৭ বলে ৯*। ৪৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৫০ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। কার্ডিফের সেই ঘটনার ঠিক ১০ বছর পর ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ বিস্ময় ছড়ান বিশ্বব্যাপী। ভারতের দারুণ শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে একাই দুমড়ে-মুচড়ে দেন অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা এই তরুণ। মিরপুরে এই ম্যাচের আগে ৩ বার ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে ৩০৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। সৌম্য সরকার ৪০ বলে ৫৪, সাকিব আল হাসান ৬৮ বলে ৫২, সাব্বির রহমান ৪৪ বলে ৪১ ও নাসির হোসেন ২৭ বলে ৩৪ রান করেন। ভারতের হয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি পায় ভারত। ফিরতি স্পেলে বোলিংয়ে এসেই ভারতকে জোড়া ধাক্কা দেন তাসকিন আহমেদ, ফিরিয়ে দেন শিখর ধাওয়ান (৩০) ও বিরাট কোহলিকে (১)। এরপরই শুধু মুস্তাফিজের ঝড়ো বোলিং শো। স্লোয়ার আর কাটারের অভূতপূর্ব প্রদর্শনীতে তিনি ভারতের বিশ্বখ্যাত ব্যাটসম্যানদের বিপর্যস্ত করেন। সাজঘরে ফেরান অজিঙ্কা রাহানে (৯), রোহিত শর্মাকে (৬৩)। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ইচ্ছাকৃত গুঁতোয় মাঝে মাঠের বাইরে যেতে হয়। এর মধ্যে সাকিব ফিরিয়ে দেন ধোনিকে (৫)। ৩৭তম ওভারে ফিরে এসে পরপর দুই বলে মুস্তাফিজ শিকার করেন সুরেশ রায়না (৪০) ও অশ্বিনকে (০)। পরে রবীন্দ্র জাদেজাকেও (৩২) ফিরিয়ে দেন। ভারত গুটিয়ে যায় ৪৬ ওভারে ২২৮ রানে। ৭৯ রানে এদিনের জয় ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। মুস্তাফিজ ৯.২ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সেরা বোলিং নৈপুণ্য আর বাঁহাতি পেসার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ম্যাচসেরার মর্যাদাটাও পান মুস্তাফিজ। ওয়ানডে অভিষেকে কোন বোলারের ৫ উইকেট নেয়ার দশম ঘটনা ছিল সেটি।
×