ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ সিটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে ডিজিটাল বিলবোর্ড

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ৩০ মে ২০২০

দক্ষিণ সিটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে ডিজিটাল বিলবোর্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঝুঁকিপূর্ণ ও অ্যানালগ বিলবোর্ডের দিন শেষ হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীর সড়কে লোহা ও স্টিলের কাঠামোতে তৈরি এসব বিলবোর্ড অপসারণ করে ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী কাজও করেছেন। এরই মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে বিভিন্ন আকারের ৭৩০টি এলইডি বিলবোর্ড স্থাপিত হয়েছে। এতে কর্পোরেশনের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি সড়কের সৌন্দর্যও বেড়েছে। কমেছে ঝড়ে বিলবোর্ড উপড়ে বা খুঁটি ভেঙ্গে প্রাণহানি বা সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। প্রসঙ্গত, লোহা বা স্টিলের কাঠামোতে বানানো প্রথাগত বিলবোর্ডে একটিমাত্র পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় এবং তা অপরিবর্তনীয়। তবে ডিজিটাল সুবিধা সংবলিত এলইডি বিলবোর্ডে সারাক্ষণই বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়। জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন হয় ২০১৫ সালের এপ্রিলে। এরপর দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক ঢাকাকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ডমুক্ত করার ঘোষণা দেন। এই সেক্টরে যারা ব্যবসা করতেন তাদের বিলবোর্ডের মেয়াদ থাকে প্রতি বছরের ৩১ জুন পর্যন্ত। এরপর তাদের বিলবোর্ডগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর শুরু হয় কর্পোরেশনের অভিযান। সেসময় পুরো নগরীকে অবৈধ বিলবোর্ড মুক্ত করা হয়। এরপর নতুন ডিজাইনে নগরীর ফুটপাত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড় এবং স্থানগুলোতে ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুই সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনভুক্ত এলাকায় ৭৩০টি এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর সিদ্ধান্তহীনতা, সমন্বয়হীনতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় কর্পোরেশনটির ভারপ্রাপ্ত বা পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়া মেয়রদের কেউ-ই সেই কাজ পুরোপুরি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ফলে ডিএনসিসির সড়কগুলোর ধারে এখনও দেখা যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ প্রথাগত বিলবোর্ড। এতে কেবল একটিমাত্র পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ায় অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ডিএনসিসি। পাশাপাশি শ্রীহীন হয়ে পড়ছে সংস্থাটির বিভিন্ন এলাকা। এ অবস্থায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সড়ক বিভাজকে অ্যানালগ (প্রথাগত) বিলবোর্ড স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথাগত বিলবোর্ড নাগরিক নিরাপত্তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এক সময় সড়কের ওপর লোহা ও স্টিলের অবকাঠামোর ওপর বিশাল আকারের বিলবোর্ড লাগানো হতো। তবে বড় ধরনের ঝড়ের কবলে পড়ে বেশকিছু বিলবোর্ড বিভিন্ন সময়ে ভেঙে পড়ে অতীতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। তাই মেয়র সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর সড়ক থেকে এসব বিলবোর্ড অপসারণের নির্দেশ দেন। তখন আমরা সব বিলবোর্ড অপসারণ করি। বর্তমানে এলইডি বিলবোর্ডগুলো লাগানোর কারণে সড়ক অনেক নিরাপদ হয়েছে। তারা আরও বলেন, অতীতে বিলবোর্ডে যেসব প্রচার ছিল তার অনেকটাই ছিল ব্যক্তিগত ও দলীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। সিটি কর্পোরেশন ও নাগরিকদের এতে তেমন কোন উপকার হতো না। ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনভুক্ত এলাকার প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে প্রায় ৭৩০টি এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে পান্থপথ-ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে ২৪টি; গ্রিন রোডে ২৮টি; বাংলামোটর-কাকরাইল সড়কে ৩০টি; কাকরাইল-শান্তিনগর সড়কে ৩০টি; মালিবাগ রেলগেট থেকে খিলগাঁও সড়কে ৩০টি; বিজয়নগর-পল্টন সড়কে ২৮টি; খিলগাঁও তালতলা-খিলগাঁও রেলগেট সড়কে ২৮টি; সিটি আই হসপিটাল সড়কে ৪৪টি ও শাহবাগ-মৎস্য ভবন সড়কে ৮টি বিলবোর্ড রয়েছে। এই বিলবোর্ডগুলোর প্রতিটির আয়তন দুই হাজার বর্গফুট। এছাড়া তিন হাজার ৬০০ বর্গফুট আয়তনের ৪৫০টি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিভুক্ত অপর সড়কগুলোতে। এগুলোর মধ্যে শেরাটন হোটেল থেকে মিন্টো রোডে ৩৭টি; বেইলি রোডে ১১টি; সিটি কলেজ থেকে বিজিবি গেট হয়ে সাত মসজিদ রোডে ৪৫টি; সিটি কলেজ থেকে মিরপুর রোডের রাপা প্লাজা পর্যন্ত সড়কে ৫০টি; ধানম-ি ২৭ নম্বরে ৯টি; শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব সড়কে ৪৫টি; শেরাটন থেকে শাহবাগ হয়ে মৎস্য ভবন দিয়ে কাকরাইল সড়কে ২৮টি; মৎস্য ভবন থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কে ১৮টি; কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল সার্কেলে ১৫টি; ফকিরাপুল সার্কেল থেকে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে দিলকুশা সড়কে ৩১টি; জিপিও থেকে বঙ্গভবন সড়কে ৪৫টি; শাপলা চত্বর থেকে হাটখোলা সড়কে ১৭টি; সুরিটোলা থেকে তাঁতিবাজার সড়কে ১৮টি; পান্থকুঞ্জ থেকে বাংলামটর সড়কে ২২টি; শিক্ষা ভবন থেকে জিরো পয়েন্ট সড়কে ২২টি; দৈনিক বাংলা থেকে শাপলা চত্বর সড়কে ২২টি ও জিরো পয়েন্ট দিয়ে গোলাপ শাহ মাজার সড়কে ১৫টি এলইডি বিলবোর্ড রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সবচেয়ে বড় এলইডি বিলবোর্ডটি স্থাপিত হয়েছে শাহবাগ মোড়ে। এটির আয়তন ৭৮৭ দশমিক ৫ বর্গফুট। এছাড়া ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন মোড়, বাটা সিগন্যাল, কমলাপুর, সদরঘাট ও শান্তিনগর মোড়ে ৫৭৬ বর্গফুটের ৬টি এলইডি বিলবোর্ড রয়েছে। কদম ফোয়ারা, শেরাটন, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, শিক্ষা ভবন, বঙ্গবাজার, জিরো পয়েন্ট, মিন্টো রোড, দৈনিক বাংলা, নিউমার্কেট, গোলাপ শাহ মাজার, ল্যাবএইড ও বাটা সিগন্যাল মোড়ে ৬২৪ বর্গফুটের ১৩টি বিলবোর্ড রয়েছে। এছাড়া পান্থকুঞ্জে ৪৫০ বর্গফুটের এলইডি বিলবোর্ড রয়েছে। বাকি বিলবোর্ডগুলোর আকৃতি ২৫০ বর্গফুট থেকে ৯৬ বর্গফুটের মধ্যে। এসব বিলবোর্ডে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ, সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন সেবা সংস্থার গণপ্রচারমূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এর মধ্যে শুধু বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব পায় ডিএসসিসি। রাতের শহরকে আলোকিত করতেও সহায়তা করছে বিলবোর্ডগুলো। তবে পথচারী ও গাড়িচালকদের যাতে দৃষ্টির কোনও ক্ষতি না হয় সেটা বিবেচনায় নিয়ে বিলবোর্ডের ভিডিওগুলো তৈরি করা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন এই শহর দৃষ্টিকটু বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ভরে ছিল। সড়কের ওপর চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিলবোর্ড দাঁড়িয়ে থাকতো। প্রধানমন্ত্রী দেশকে ডিজিটাল করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আমরাও ঝুঁকিপূর্ণ এই বিলবোর্ডগুলো অপসারণ করে ডিজিটালাইজেশন করার সিদ্ধান্ত নেই। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় দুই হাজার ২০০টি বিলবোর্ড ও ৩০ হাজার ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করেছি। এরপর সুন্দর ডিজাইন প্রণয়ন করে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করি। বর্তমানে দিন ও রাতের ঢাকায় এসব বিলবোর্ড বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি নগরীর সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করেছে। কর্পোরেশনের রাজস্বও বাড়ছে। এসব বিলবোর্ড মাথায় ভেঙে পড়ার ঝুঁকি নেই। অপরদিকে, উত্তর সিটিতে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করতে না পারার বিষয়ে কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর অনেক প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার মধ্যে ডিএনসিসি পরিচালিত হয়েছে। আমরা যারা প্যানেল মেয়র ছিলাম আমাদের রুটিং কাজ করার বাইরে কোনও ক্ষমতা ছিল না। আতিকুল ইসলাম উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়র হওয়ার পরে মাত্র অল্প কয়টি মাস সময় পেয়েছেন। এবার তিনি পূর্ণ মেয়াদের জন্য আবারও মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আশা করছি, দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিনি এসব নিয়ে কাজ করবেন।
×