ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে শতভাগ বেতন ও গার্মেন্টস খোলার দাবিতে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০০:২০, ১৩ মে ২০২০

গাজীপুরে শতভাগ বেতন ও গার্মেন্টস খোলার দাবিতে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে শতভাগ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে মঙ্গলবার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট করেছে। এ সময় তারা কারখানায় ভাংচুর ও কারখানার কয়েক কর্মকর্তাকে মারধর এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং একজনকে আটক করে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম রেজা এবং কারখানার কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকাস্থিত ময়েজ উদ্দিন টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে শতভাগ বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালে কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় সরকার ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতনের ৬০ শতাংশ তাদের মোবাইল এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নির্ধারিত তারিখ সোমবার পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এ কারখানায় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ দেয়। কিছুক্ষণ পর তারা শতভাগ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তাদের কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি আন্দোলনরত শ্রমিকরা। একপর্যায়ে দাবি মেনে না নেয়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার গেট ভেতর থেকে বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর তারা কারখানায় তা-ব চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও কারখানার কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে মারধর করতে থাকে এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় পুলিশের হামলায় শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে কারখানার ভেতরে উত্তেজিত শ্রমিকদের সঙ্গে মালিক পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও হাতাহাতি হয়। এতে অন্ততঃ ১০-১২ জন আহত হয়। গেট ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় পুলিশ চেষ্টা করেও কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর কারখানার মালিক পক্ষের কয়েক কর্মচারী কৌশলে গেট খুলে দিলে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে আন্দোলনকারীরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে। শ্রমিকরা জানায়, ঘটনার সময় শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে কারখানায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় বাদল নামের এক শ্রমিককে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে জেলার গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, শ্রীপুর উপজেলার মাধখলা এলাকাস্থ কালার ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল ও মে মাসের বেতনসহ ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে মঙ্গলবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার ও স্থানীয়রা জানান, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে উৎপাদন কাজ না থাকায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ইসলামপুর এলাকার টার্গেট ডেনিম এ্যান্ড ক্যাজুয়্যাল পোশাক কারখানা লে-অব ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতনভাতা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা হয়। তবে কার্ড পাঞ্চ না করায় শ’খানেক শ্রমিকের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। ইতোমধ্যে কারখানা লে-অব ঘোষণার ৪৫ দিন পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাতে কর্তৃপক্ষ আবারও আগামী ৩১ মে পর্যন্ত কারখানা ছুটি করে। মঙ্গলবার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধ দেখতে পায়। এ সময় তারা কারখানা ছুটি ঘোষণার কথা জানতে পেরে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেয়ার ও অবশিষ্ট শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবি জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে। এছাড়াও শতভাগ বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে লক্ষ্মীপুরা এলাকার ইন্ট্রাম্যাক্স এবং টঙ্গী এলাকার এটি মার্কস ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা এদিন বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি করেছে। না’গঞ্জে দুটি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ ॥ নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ নগরীর চাষাঢ়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে দু’টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা শহীদ মিনারে সমাবেশ ও বিকেএমইএ’র কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ফতুল্লার বিসিকের ফাহিম নিটওয়্যার ও সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের আলপাইন নিট ফেব্রিকস লিমিটেডের দুই শতাধিক শ্রমিক এ বিক্ষোভে অংশ নেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ সময় শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে চলে যান। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের আলপাইন নিট ফেব্রিকস লিমিটেডের শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে নগরীর বিকেএমইএ’র সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। অপরদিকে ফতুল্লার বিসিকের ফাহিম নিটওয়্যার কারখানাটি মার্চ মাসের বেতন দিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল মাসের বেতনের দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন। তারা বিকেএমইএ’র কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছেন। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জ জোনের পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) শেখ বশির আহমেদ জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের আলপাইন নিট ফেব্রিকস লিমিটেডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিকেএমইএ’র সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু মালিকপক্ষ আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে কিছু শ্রমিককে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দেয়া হবে। বাকি শ্রমিকদের আগামী বৃহস্পতিবার বেতন দেয়া হবে। এদিকে ফাহিম নিটওয়্যার কারখানাটি মার্চ মাসের বেতন দিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল মাসের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। পরে তারা বিকেএমইএ’র কার্যালয়ে গিয়ে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে চলে গেছেন।
×