ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পথ দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ভার্সিটি ॥ শতভাগ সফল

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২৮ এপ্রিল ২০২০

পথ দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ভার্সিটি ॥ শতভাগ সফল

বিভাষ বাড়ৈ ॥ করোনা মহামারীতে এখন পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ল-ভ-। শিক্ষা ক্যালেন্ডার ওলটপালটে যেখানে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ছড়িয়েছে ভয়াবহ সেশনজটের আতঙ্ক, সেখানে আলো দেখাচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (বিডিইউ)। সরকারী বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়গুলো যেখানে অনলাইনে ক্লাস আয়োজনের ন্যূনতম ব্যবস্থ্া করতে পারছেনা আবার করলেও ক্লাস হচ্ছে নামকাওয়াস্তে সেখানে দীর্ঘ এক মাস ধরে সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা অনলাইনে ক্লাস করছেন বিডিইউ’র শিক্ষার্থীরা। যাদের সামনে নেই সেশনজটের আতঙ্ক। এ অবস্থায় বিডিইউ’র কার্যক্রম অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত এ বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে করোনার এই সঙ্কটের মধ্যেও অনলাইনে প্রায় শতভাগ সচল রেখেছে। যা ইতোমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশের একমাত্র বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে বিডিইউ শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস শতভাগ সফল করতে গুগলের ‘জিস্যুট’ ও অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘ক্যোরসেরা’র মতো প্রয়োজনীয় সকল প্ল্যাটফর্মের সহায়তা নিচ্ছে। পাবলিক ইউনিভার্সিটির অনেক শিক্ষক নিজের প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিতে না পারলেও ক্লাস নিচ্ছেন বিডিইউতে। কেবল তাই নয়, দীর্ঘ এক মাস ধরে চলা এ শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট খরচও দিচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়। যা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে অনেক বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে গেছে। বিডিইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেছেন, ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মতো বড় বিশ^বিদ্যালয়ে হয়তো শতভাগ সফলভাবে অনলাইনে শিক্ষাদান কঠিন, তবে উদ্যোগী হলে কাজটি অসম্ভব নয় মোটেও। এদিকে রবিবার এক ভার্চুয়্যাল সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের সফলতার রহস্য নিয়ে কথা বলেছেন বিডিইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। তিনি বলেন, গত এক মাস ধরে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। করোনাকালে ভার্চুয়্যাল মিটিং হয়েছে। জিস্যুট ফর এডুকেশন। গুগুলে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্লাস হচ্ছে। ২শ’ জন পর্যন্ত একসঙ্গে অংশ নিতে পারেন। জাহাঙ্গীরনগর থেকে ৫/৭ জন ক্লাস নিচ্ছেন। ছাত্ররা বলছে, ইন্টারনেট শেষ হয়ে যায়। পয়সা বেশি লাগছে। বিশ^বিদ্যালয় বলছে আমরা খরচ দিয়ে দেব। এতে শিক্ষার্থীরা খুশি হয়েছেন। ইউজিসি প্রথমে বলছে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার কথা। পরে আবার না করল। এটা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। উপাচার্য বলেন, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগরসহ বড় বিশ^বিদ্যালয়গুলো পারবে না। তারা বলছে তাদের বহু শিক্ষার্থী। সবার কাছে স্মার্ট ফোন নেই। ইন্টারনেট নেই অনেক জায়গায়। অবশ্য আমার এখানে ছাত্ররা বলেছে ইন্টারনেট বহু জায়গায় নেই। এজন্য আমরা ক্লাসগুলো অনলাইনে রেকর্ড করে রাখছি। যখনই ছাত্ররা ইন্টারনেটে ঢুকতে পারবে তখনই ক্লাসগুলো দেখে নিতে পারবে। অনলাইন ক্লাসেই প্রচুর এসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে। সবাই একসঙ্গে ক্লাস শুরু করলে প্রেজেন্টেশন বানিয়ে দেবে। যখন ক্লাসে ফিরবে তখন শুধু ল্যাব ক্লাস হবে। কারণ অনলাইনে ৬০-৬৫ শতাংশ ক্লাস হচ্ছে। এর ফলে সেমিস্টার ঠিকঠাক ধরা যাবে। পরীক্ষাটাও শর্ট পিরিয়ডে হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ইউনিভার্সিটির ২শ’ শিক্ষার্থী চারটি প্রোগ্রামে সপ্তাহে ৬দিন ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করে। করোনাকালে শিক্ষকরাও এই অনলাইনে বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষকদের মধ্যে কেউ ভোলায় রয়েছেন, কেউ চাঁদপুরে রয়েছেন, কেউ পিরোজপুরে রয়েছেন। সেখান থেকেই তারা ক্লাস নিচ্ছেন। এক প্রশ্নে দেশের অন্যতম এক প্রকৌশলী বলেন, বড় বড় বিশ^বিদ্যালয়ে পরিবর্তন আনা কঠিন। তবে পরিবর্তনে যাওয়া উচিত। তারা প্রয়োজন বোধ করেনি। ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয় শুরু থেকেই অনলাইনে জোর দিয়েছে। ভবিষ্যতে অনলাইনেই ডিগ্রী দেয়ার চিন্তা করছে। বড় বিশ^বিদ্যালয়গুলো এই চিন্তাটা করেনি। জায়গাটা তারা ভাবেইনি। কিন্তু এখন যেতে হবে। ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদের ইমেইল বানিয়ে দিয়েছে। এখানে চাইলেই অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না। অথচ ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত বুয়েট এখন শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানিক ইমেইল বানিয়ে দিতে পারেনি। এই ইমেইল ছাত্রদের জন্য বিশাল সংযোজন। ছাত্ররাও তো চায় নি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেইরকম চাওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। ভাল কি পেতে পারি আমরা সে জায়গায় যেতে পারিনি। ইউজিসির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউজিসির দক্ষতার অভাব রয়েছে। আধুনিক চিন্তা-ভাবনা তাদের নেই। বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে না দিলে, শুধু কন্ট্রোলের মধ্যে রাখলে নামী বিশ^বিদ্যালয় তৈরি হবে না। ইউজিসিকে মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, বহু বিষয় ফলো করা উচিত। আরও উন্নত হওয়া উচিত। করোনাকালে যদি ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হয় তাহলে পাশে বসে আর কিছু করা যাবে না। এ অবস্থায় একটি জাতীয় শিক্ষা কমিটি করা উচিত। বর্তমান অবস্থা চালু থাকলে প্রাইমারী স্কুল খুলতেই পারবে না। দুর্যোগকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবার যাতে কেউ আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে কিভাবে চলতে পারি সেই পরামর্শ দেবে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিটি। আর এটাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে পরামর্শ। নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার না করলে দেশের দুই কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে। তবে যদি ভ্যাকসিন চলে আসে তাহলে জাতীয় শিক্ষা কমিটি লাগবে না। এর আগে করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষাকার্যক্রম যাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেই আশঙ্কা থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রথমে মাধ্যমিক স্কুলের জন্য সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনা শুরু করে। এরপর শুরু হয় প্রাথমিকের ক্লাস। এমন অবস্থার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার তাগাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত করেছে বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। রবিবার এনটিআরসিএ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এনটিআরসিএ-এর পরীক্ষা মূল্যায়ন প্রত্যয়ন শাখার সদস্য এ বি এম শওকত ইকবাল শাহীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য করণে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা-২০২০ এর প্রিলিমিনারি টেস্ট ও লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠানের নতুন সময়সূচী পরবর্তীতে জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণোদনা চেয়েছে পুস্তক প্রকাশক সমিতি ॥ করোনাভাইরাসের ক্রান্তিকালে দেশের সমগ্র পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের প্রায় দুই লাখ পরিবারের জন্য অনুদান প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। সমিতির রাজধানী শাখার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবেদনে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী তিনটি স্তরে অনুদান প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদী অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান, মধ্যমেয়াদী প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সরকারী প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল ঘোষণা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি, পাঠাগার বা লাইব্রেরিতে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্নারে বই ক্রয়ের নিমিত্তে আরও ৫০০ কোটি টাকার বই ক্রয়ের একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়। বাংলাদেশে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন এবং রাজধানী শাখার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে একজন লেখক, বইপ্রেমী, গ্রন্থানুরাগী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং প্রকাশকদের অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
×