ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গী ও মুন্সীগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২১ এপ্রিল ২০২০

বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গী ও মুন্সীগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বকেয়া বেতনের দাবিতে সোমবার টঙ্গী ও মুন্সীগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাংচুর করতে দেখা যায়। এদিন টঙ্গীর তিনটি গার্মেন্টসে বেতনভাতা না দিয়ে বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে শ্রমিকরা কারখানা গেটে ও মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। টঙ্গী ॥ সোমবার টঙ্গীর ৩টি গার্মেন্টসে বেতনভাতা না দিয়ে বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে শ্রমিকরা কারখানা গেটে ও মহাসড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। কারখানাগুলো হচ্ছে টঙ্গী বিসিকের ব্রাইট এ্যাপারেলস, তিস্তা রোডের হিমারদীঘি এলাকার এসপেক্টাস সুয়েটার এ্যান্ড ফ্যাশন এবং টঙ্গী সাতাইশ এলাকার আবিদ এ্যাপারেলস। ৩ গার্মেন্টসের শ্রমিকরা জনকণ্ঠকে জানান, টঙ্গী বিসিক শিল্পাঞ্চলের ব্রাইট এ্যাপারেলস লিমিটেডে বেতনভাতা পরিশোধের কথা ছিল সোমবার। সকালে কারখানায় এসে শ্রমিকরা ছুটির নোটিস দেখতে পায়। গেট থেকে জানানো হয়, সকল বকেয়া রোজার ঈদের পরে পরিশোধ করা হবে। এ সময় শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। হিমারদীঘি এলাকার এসপেক্টাস সুয়েটার এ্যান্ড ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজে শ্রমিকদের দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আর্থিক সঙ্কটে আপাতত কারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনের মতো সোমবার শ্রমিকরা কাজে এলে বলা হয়, আগামীকাল থেকে কারখানা বন্ধ থাকবে। কবে বেতন-ভাতা দেয়া হবে তাও বলা হচ্ছে না। দুপুরে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চেরাগ আলী এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করতে থাকে। টঙ্গীর সাতাইশ শিল্পাঞ্চলের আবিদ এ্যাপারেলস কারখানায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেই দিচ্ছি করে শেষ পর্যন্ত সোমবার কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। সোমবার শ্রমিকরা কারখানা গেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পাশের রাস্তায় মিছিল নিয়ে মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল হক ও টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। বকেয়া বেতন চলতি মাসে পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে বলে কারখানা মালিকরা আশ্বাস দিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের পশ্চিম মুক্তারপুরে মদিনা ডাইং এ্যান্ড প্রিন্টিং ফ্যাক্টরিতে শতাধিক শ্রমিক বকেয়া বেতনের জন্য সোমবার বিক্ষোভ করে ভাংচুর করেছে। পরে নৌ পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মুক্তারপুর নৌ পুলশি ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন খান জানান, বেলা পৌনে ১১টার দিকে ১০০/১২০ শ্রমিক কারখানাটির ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে। পরে ভাংচুর চালায় এবং কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এর আগেই কারখানাটির দুটি জানালার গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। এরপর শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক করে সমাধান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোঃ এমরান হোসেন খান বলেন, গত ২৪ মার্চ থেকেই মিল বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৫শ’ শ্রমিকের ৩শ’ শ্রমিক বাড়ি চলে যায়। আরও প্রায় ২শ’র মতো শ্রমিক মুক্তারপুর এলাকার বাসায় থেকে যায়। দেশের এই পরিস্থিতিতে তাদের মার্চ মাসের বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। নানা রকম চ্যালেঞ্জের মধ্যেই এর মাঝে বেতনের কিছু অংশ দেয়া হয়। বাকি টাকাও দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বকেয়া বেতনের টাকা প্রদান করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান। খান বলেন, পুরান ঢাকার ন্যাশনাল ব্যাংকে তাদের লেনদেন। কিন্তু এই ব্যাংকটি সপ্তাহে একদিন মাত্র খোলা থাকছে। এসব কারণে নানা সমস্যা হচ্ছিল। মিলটির এক শ্রমিক জানান, হাতে টাকা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই বেতনের টাকা তাদের খুব বেশি দরকার। নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত, দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেয়া হয়েছে। বাইরের কোন পক্ষ এখন আর শ্রমিকদের উসকানি দিতে পারবে না।
×