ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে জুমার নামাজ আদায়

প্রকাশিত: ১০:০০, ৪ এপ্রিল ২০২০

  নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে জুমার নামাজ আদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার বিস্তার অব্যাহত থাকলেও মসজিদে নামাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। প্রায় সব মসজিদেই নিয়মিত জামাতেই নামাজ আদায় করা হচ্ছে। করোনা আতঙ্কের কারণে শুক্রবার জুমার নামাজও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আাদায় করা হয়েছে। তবে মুসল্লিদের উপস্থিতি কম ছিল। পাশাপাশি মুসল্লিদের নিরাপত্তা সুরক্ষা বিশেষ করে মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে মসজিদে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। এর আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মুসল্লি ও ইমামদের এবং মসজিদ কমিটিকে করোনার মধ্যে মুসল্লিদের বিশেষ সুরক্ষা দিতে এবং জামাতে নামাজ আদায়ে বেশ কিছু নির্দেশনা বেঁধে দেয়। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা। জামাত সংক্ষিপ্ত করা। জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা। ওজুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা। বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো। ঢাকাসহ দেশের কোন মসজিদে যদি কোন বিদেশী মেহমান অবস্থান করেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়াও যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে, যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন, যারা উক্ত মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন, যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু, যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ও যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার নির্দেশনা দেয়া হয় আগেই। শুক্রবার রাজধানীর মসজিদগুলোতে খতিবরা মুসল্লিদের উদ্দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেয়া দিকনির্দেশনাগুলোও তুলে ধরেন। এছাড়াও মসজিদে জুমা ও পাঁচ ওয়াক্তের জামাতে অংশ নিতে চাইলে তাদের সতর্কতা হিসেবে সব সময় সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করে শুধু ফরজ নামাজ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাতারবন্দী হয়ে জামাতে আদায় করে দ্রুত মসজিদ থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশক দিয়ে মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখার কথাও বলা হয়েছে। এদিন রায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে অধিকাংশ মুসল্লিরা মুখে মাস্ক পরে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। মসজিদের ইমামও সংক্ষিপ্ত খুতবা ও ছোট সূরার মাধ্যমে অল্প সময়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজে আগের চেয়ে মুসল্লিদের কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। জুমার ফরজ নামাজের পরই ফাঁকা হয়ে যায় বাংলাদেশের এই জাতীয় মসজিদ। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনেই শুক্রবার জুমার নামাজ মসজিদে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের জন্য চিরচেনা দৃশ্য ছিল না। বাসায় ওজু করে সুন্নত-নফল পড়ে মসজিদে আসতে বলায় এবং জ্বর, সর্দি-কাশি থাকলে মসজিদে না আসার নির্দেশনার কারণে মসজিদে মুসল্লিদের সমাগম ছিল খুবই কম। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে মুসল্লিদের হাত ধোয়ানো ও হ্যান্ড টাওয়াল (টিস্যু) সরবরাহ করা হয়। করোনা সতর্কতায় অধিকাংশ মুসল্লিকেই দেখা যায় দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে প্রবেশ করতে। বেরিয়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় হাত মোজা ও মাস্ক ব্যবহার করে মসজিদে আসছেন। বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মাওলানা এসানুল হক জিলানী। বাংলা খুতবা ছাড়াই সংক্ষিপ্ত আরবী খুতবায় ফরজ নামাজ শেষেই মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে বিশ্বের সব দেশকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের আরোগ্য কামনা করে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। মোনাজাতের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সাধারণ মুসল্লিরা। মোনাজাত শেষ হতেই ফাঁকা হয়ে যায় মসজিদ। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। এর ছোয়া এসে লেগেছে বাংলাদেশে। এক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বের ২শ’ বেশি দেশে এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় এখন কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গ নিরোধ এখন একমাত্র প্রতিষেধক। এইটি মেনেই সারা বিশ্বের কোটি কোটি লোক আজ ঘরবন্দী। তারপরও বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে একটানা ১৫দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মসজিদের জামাতে নামাজ বন্ধ করা না হলে এটি প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করার জন্য মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
×