ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডুমুরিয়ায় সেচ প্রকল্প অকার্যকর ॥ বোরো চাষ ব্যাহত

প্রকাশিত: ১২:১১, ২৬ মার্চ ২০২০

ডুমুরিয়ায় সেচ প্রকল্প অকার্যকর ॥ বোরো চাষ ব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অঞ্চল বলে খ্যাত। এই উপজেলার শোভনা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়। পর্যাপ্ত পানির অভাবে বোরো ধান-সবজি চাষ ব্যাহত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ায় বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। কৃষি জমিতে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বোরো ধানের শীষ বের হচ্ছে। এই সময় জমিতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। অথচ জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে পারছেন না চাষীরা। কাক্সিক্ষত বৃষ্টিও হচ্ছে না। এ অবস্থায় এবার বোরোর উৎপাদন হ্রাস পাবে বলে চাষীরা আশঙ্কা করছেন। এছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে বসানো গভীর নলকূপ থেকেও প্রয়োজনীয় পানি উঠছে না। এতে দৈনন্দিন কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে কৃষি কাজের সুবিধার্থে এই এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সেচ প্রকল্পটিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। শোভনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল গণি জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এলাকায় একটি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু নিয়ম-নীতি না মেনে যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসিয়ে বিদ্যুতের মোটরের মাধ্যমে পানি উঠানোর ফলে কাক্সিক্ষত পানি নলকূপে উঠছে না। বিএডিসি যে উদ্দেশ্যে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল তাও যথেচ্ছ নলকূপ বসানোর কারণে কোন কাজে আসছে না। শোভনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত কুমার বৈদ্য বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে পরিকল্পিতভাবে নলকূপ স্থাপনের নিয়ম থাকলেও তা কেউ মানছেন না। যে যার মতো জনবসতি এলাকায় নলকূপ বসাচ্ছেন। তাছাড়া নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারী নীতিমালাও মানছেন না। ফলে নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পানি সঙ্কট ভয়াবহ হয়ে উঠবে। স্থানীয়রা জানায়, ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের বেশিরভাগ গভীর নলকূপে এখন পানি না উঠায় তাতে মরিচা ধরেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শুধু কৃষি কাজই ব্যাহত হচ্ছে না, খাবার পানিসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি আনতে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে। এই ইউনিয়নের শোভনা, মলমরিয়া, বাদুরগাছা, মাদারতলা, জিয়েল তলাসহ আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে এই অবস্থা। শোভনা গ্রামের পার্থ কুমার পাল বলেন, তার বাড়ির পাশে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। অগ্রহায়ণ মাস থেকে ওই নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। শোভনার কড়ির বিলে বোরো খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত রতন বিশ^াস বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে খাল দিয়ে পাইপের মাধ্যমে জল আনতে ড্রেন স্থাপন করা হয়। কিন্তু কোন কাজে আসছে না। বোরো খেতে জল নেই। জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পৃথ্বীশ কুমার ম-ল বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির একাধিক স্তর থাকে। সেচ কাজে ব্যবহার করা বড় ব্যাসের পাইপ দিয়ে যখন পানি উত্তোলন করা হয় তখন হস্তচালিত নলকূপে পানির স্তর পায় না। এজন্য নিয়ম-নীতি মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে পরিকল্পিভাবে নরকূপ স্থাপন করা হলে ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্কট হবে না। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, খুলনা জেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কৃষিজ পণ্য উৎপাদিত হয়। রবি মৌসুমের কৃষিজ পণ্যে সেচ প্রয়োজন না হলেও খরিপ মৌসুম ও বোরো আবাদে অবশ্যই সেচ দিতে হয়। এই উপজেলার মধ্যে শোভনা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন হ্রাস পাওয়ায় এবার সেচ নির্ভর বোরো আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫ হেক্টর (১ হেক্টর= ২.৪৭ একর) জমিতে। যা গতবারের চেয়ে ২০০ হেক্টর কম।
×