ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র খোকনের সঙ্গে প্রতিনিধিদের বৈঠক

লকডাউন এবং জরুরী অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ ডব্লিউএইচওর

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২২ মার্চ ২০২০

লকডাউন এবং জরুরী অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ ডব্লিউএইচওর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আংশিক বা পুরোপুরি লকডাউন এবং জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে মেয়রের নিজ বাসভবনে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ডিএসসিসির সঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিকেবল ডিসিস কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রটেকশনের (এসডিসিপি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এক বিশেষ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকেই মেয়রকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা দেশে লকডাউন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছেন বলে সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের জানান। একইসঙ্গে করোনা মেকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণকেও আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন মেয়র। বৈঠকে শেষে ডিএসসিসির মেয়র বলেন, তাদের পরামর্শ সরকারের সর্বোচ্চ মহল অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে। বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডাঃ বার্নার্ড জুরস রানা, জরুরী গণস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডাঃ এল সাক্কা হাম্মান, সিডিসিপির যুক্তরাষ্ট্রের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডাঃ মাইকেল ফ্রিডম্যান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ, ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা যে পরামর্শ দিয়েছে, তা হচ্ছে, দেশে লকডাউন অবস্থা ঘোষণা করা। পুরোপুরি না হলে অন্তত আংশিক লকডাউন তৈরি করা। একইসঙ্গে জরুরী অবস্থা জারি করা। এছাড়া আমরাও দেখেছি, যেসব দেশে লকডাউন করা হয়েছে বা জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে, সেখানে নতুন আক্রান্তের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আছে। নতুন করে সংক্রমণ কম হয়েছে। মেয়র বলেন, ঢাকা একটি জনবহুল শহর, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এখানে সম্পূর্ণ লকডাউন করা কঠিন। তার পরেও তারা (বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা) ঢাকা কিংবা অন্য কোন এলাকা পার্শিয়াল (আংশিক) লকডাউন কিংবা ইমারজেন্সি (জরুরী অবস্থা) ঘোষণা করা যায় কিনা আমাদের সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। সেটি আমরা সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছে দেব। তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি আগামী দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। এটাকে প্রতিরোধের জন্য এখনই আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবেলার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি সরকার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সম্ভাব্য সব করণীয় করে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে আমাদের নাগরিকদের সচেতন ও সতর্ক করে তোলা। এই দুইয়ের সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। মেয়র আরও বলেন,আপনারা জানেন এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু কিছু এলাকা আংশিক লকডাউন হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া অনেক দেশেই এরই মধ্যে ইমারজেন্সি বা জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। লকডাউন এবং ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার ফলে তারা ভাল ফলাফল পেয়েছেন। সেসব দেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা হলেও ধীরগতি হয়েছে। কোথাও কোথাও আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে চলে এসেছে। সাঈদ খোকন বলেন, আজকে আমাদের পর্যালোচনার সময় এসেছে। লকডাউন করলেও ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে কীভাবে বা কত সময় লকডাউন করা যায় সেসব বিষয়ে পর্যালোচনা বিষয় রয়েছে। তাই আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থাকে জানিয়েছি, তাদের এই পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করব। কারণ সরকার প্রধান হিসেবে তিনিই শুধু এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। খোকন বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুইভাবে কাজ করতে হবে। এক, সরকার তার পদক্ষেপ নেবে, যেটি সরকার নিচ্ছে। আর দুই, আমাদের জনগণকে সচেতন হতে হবে। এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা বলেন, আমরা তো এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। এটা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। আমরা কেউ ঝুঁকির বাইরে নেই। প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্ক হতে হবে। আপনি আপনার জায়গা থেকে সতর্ক হবেন, আমি আমার জায়গা থেকে সতর্ক হবো। কারণ ভাইরাসের হাত-পা নেই। কাজেই এই সময়ে জনসমাগম যেমন এই সংবাদ সম্মেলন, এগুলোও এড়িয়ে চলতে হবে। যদিও এরই মধ্যে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নয়, বিশ্বের অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাও সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ বার্নার্ড বলেন, বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করছে। আমরা দেখেছি, স্বাস্থ্য বিভাগ দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। তবে শুধু একটি বিভাগকে কাজ করলে হবে না। সবাইকে সমন্বিত উপায়ে কাজ করতে হবে। সবার উচিত সরকারকে সাহায্য করা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এই ভাইরাস পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। সবাই ভয় পাচ্ছে। সরকার প্রয়োজন মনে করলে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করবে। তবে তাই বলে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া যাবে না। মানুষজন কোয়ারেন্টাইনে থাকছে না। এটিই আমাদের ভয়। আমাদের সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে।
×