ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধ, অস্ট্রেলিয়াফেরত রোহিঙ্গা নিয়ে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২০ মার্চ ২০২০

মিয়ানমার সীমান্ত বন্ধ, অস্ট্রেলিয়াফেরত রোহিঙ্গা নিয়ে উদ্বেগ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরত এক রোহিঙ্গাকে নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সরকারের কঠোর নির্দেশনার পরও বিদেশ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রী এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়ায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির আওতাধীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত সিল করে দেয়া হয়েছে। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রনজন বড়ুয়া বলেন, বৃহস্পতিবার উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিদেশ ফেরত এক রোহিঙ্গাকে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যদিও উক্ত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের আলামত পাওয়া যায়নি। যেহেতু তাকে তার স্বজনদের কাছে অবস্থান করা নিরাপদ না হওয়ায় দেশের স্বার্থে তাকে বিশেষ কোয়ারান্টাইনে নেয়া হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উক্ত রোহিঙ্গা ১৭ মার্চ রাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে মালয়েশিয়া হয়ে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে আসে। সেখান থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে তার স্বজনদের কাছে যায়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসেন। ইউএনও বলেন, উক্ত ব্যক্তির মাঝে করোনাভাইরাসের আলামত পাওয়া যায়নি। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পূর্ব থেকে ৪৫ বেডের আইসোলেটেড সেন্টার রয়েছে। উখিয়ার কোথাও কোন ধরনের করোনাভাইরাসের আলামত ও আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বিদেশ ফেরত কেউ কোথাও আশ্রয় নিয়ে থাকলে তা প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করেছেন তিনি। উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্থানীয় লোকজন সর্বদা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অগোচরে মাদক আনতে ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারে যাতায়াত করে থাকে। সরকার গত চারদিন আগে থেকে বিদেশ থেকে কোন যাত্রী আগমন করলে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনের আওতায় রাখার নির্দেশ জারি করে। এরপরও মিয়ানমার বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান রোহিঙ্গা নাগরিক কিভাবে প্রবেশ করে ক্যাম্প পর্যন্ত এলো তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আল আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে আগে থেকেই কঠোরতার আওতায় রয়েছে। গত চারদিন পূর্ব থেকে ৩৪ বিজিবির আওতাধীন উখিয়ার পালংখালী, রাহমতেরবিল, বালুখালী, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু পর্যন্ত স্থল ও নৌ সীমানা পুরোপুরি সিল করে দেয়া হয়েছে। এসব সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্যরা কঠোরভাবে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছে বলে তিনি জানান। এদিকে উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নতুন কোন বিদেশী যেতে চাইলে তাকে ক্যাম্পে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোয়ারেইন্টানে থেকে আশঙ্কামুক্ত হলেই রোহিঙ্গা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে পারবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রোহিঙ্গা শিবিরে নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগে থেকেই কর্মরত বিদেশীরা এ নির্দেশনার আওতায় পড়বে না। কারণ তারা আগে থেকেই ক্যাম্পে কাজ করার কারণে তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখানকার সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের মতোই। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মোট ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪৭ করোনাভাইরাস আইসোলেশন বেড রেডি করা আছে।
×