ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাঙ্গীরের ‘প্রাণের প্রশান্তি’ চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৯ মার্চ ২০২০

জাহাঙ্গীরের ‘প্রাণের প্রশান্তি’ চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যালারিতে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে নৃত্যরত নর-নারীর অবায়বের চিত্র। পাশেই রয়েছে আরও দুই নারীর ছবি। সবুজ বৃক্ষরাজির মধ্যে কোথাও কোথাও পাতাবিহীন গাছ। এসব ছবি নিয়ে বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে চিত্রশিল্পী ও সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের ‘প্রাণের প্রশান্তি’ শীর্ষক একক চিত্র প্রদর্শনী। বুধবার সন্ধ্যায় সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নাদীয়া সামদানী, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নিসার হোসেন, দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি ও চিত্রশিল্পী মুস্তাফা খালিদ পলাশ। অনুষ্ঠানে শিল্পী জাহাঙ্গীর নিজের এ প্রদর্শনী সম্পর্কে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অতিথিরা বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের জীবন ও শিল্পভাবনা শিল্পিত। সঙ্গীত, নৃত্যকলা, নাট্যকলা, চিত্রকলা সর্বোপরি সংস্কৃতির সব শাখায় শিল্পালোচনা ও সমালোচনা তার পেশাগত দায়িত্ববোধের পরিচায়ক। আর তার ভেতরের মন সদা আড্ডায় থাকে শিল্পী ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের সঙ্গে। প্রতিনিয়ত এসব শিল্পের রস উপভোগ করে নিজের চেতনাকে শিল্পরূপ দিয়ে চলেছেন রং-তুলির তুমুল খেলায়। জল রং তার মুখ্য সাধনা হলেও এবারের প্রদর্শনীতে তেল রং, এ্যাক্রেলিক ও প্রিন্ট মাধ্যমের কিছু কাজ গুরুত্ব পেয়েছে। এই বহুমুখী মাধ্যম চর্চার নেপথ্যে কারণ হচ্ছে চারুশিল্পীদের বিভিন্ন কর্ম প্রক্রিয়ায় তার জীবনঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা। জাহাঙ্গীর ছবি আঁকেন প্রাণের টানে, সৃজনানন্দের উৎসবে মত্ত হয়ে। দীর্ঘদিন ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টুডিয়োর রেসিডেন্স আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করায় জল রং ওয়াশ পদ্ধতির একটি নিজস্ব শৈলী তৈরি করেছেন। রং মিশ্রণের পরিপক্বতা তার চিত্রকলার অনন্য গুণ। আনন্দ উদ্যাপন তার ও তার চিত্র-চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। দীর্ঘদিনের সঙ্গীত সাধনার নির্যাস হয়তো রঙের বিস্তরণে সৃষ্টি করেছে এক নতুন মাত্রা। পৃথিবীর মাটি-জল-অরণ্যের অন্তরাত্মার সঙ্গীত তিনি প্রাণভরে অনুভব করেন। সেই সঙ্গীতই তিনি তার ছবিতে মুগ্ধভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন। তার ছবির ভাষা বা বিষয় শুধু বাংলাদেশ নয় বরং ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বব্রহ্মা-ে কাক্সিক্ষত ভ্রমণ আকাক্সক্ষার কল্পিত নৈসর্গিক রূপ-বৈচিত্র্যের রূপ-রস-গন্ধ খেলা করে তার রং-তুলিতে। সঙ্গীতের সুর, কবিতার ভাব-ছন্দ, নারী-শরীরের নৃত্যভঙ্গির ইশারা তার ছবিতে পরিদৃশ্যমান। কখনও গৌড়ীয় নৃত্য, কখনও দেশ, কখনও বাগেশ্রী, কখনও খাম্বাজ, কখনও ভৈরব, কখনও কলাবতী, কখনও ঝিনঝটি রাগে অনুরাগের সমার্থক হয় তার চিত্রজমিন। এছাড়া বসন্ত, হেমন্ত, শরত, বর্ষার আবহে চিরচেনা বাংলার রূপ, জলভরা মেঘের মায়াবী ছলনা কিংবা প্রেম-বিরহে বাধা পৌরাণিক উপাখ্যানে বর্ণিত সমকালীন জীবন রসায়নের কাক্সিক্ষত মাধুর্য-আকাক্সক্ষা দৃশ্যমান হয় তার চিত্রপটে। ফুল নিয়ে তার চিত্রকর্ম ঠিক বাস্তব ফুলের অনুরূপ নয়। এখানে রং আসে রূপের মোহনীয় বার্তা নিয়ে। ভ্রমণবিলাসী এই শিল্পীর কাজে দৃশ্যমান প্রকৃতির জয়গানে চিত্রপটে বহু চরিত্রের উপন্যাস তৈরি হয় যেখানে গাছ, মাটি, মেঘ ও জল আলাদা চরিত্র-আবহ তৈরি করে। শিল্পপ্রেমী দর্শক প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথন করতে পারবে। প্রকৃতির মাঝেই অধরা এক নৃত্য-শরীরের দোলা। শিবের তা-ব ও শৃঙ্গার রস, রাধাকৃষ্ণের প্রেম-বিরহ, বৈষ্ণব ভক্তের আকুতি রেখা-দোলায় প্রতিক্ষণ অনুমেয়। প্রদর্শনীতে শিল্পী জাহাঙ্গীরের উপস্থাপিত কাজে কয়েকটি সিরিজচিত্র এবং ভিন্ন ভিন্ন নামকরণের চিত্র রয়েছে যা শিল্পীর আঁকা স্থান-কাল-পাত্র ও নিজস্ব শিল্পানুভূতির আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এতে কখনও ভ্রমণের দৃশ্য, সঙ্গীতের সুর-ছন্দ এবং মানব প্রেমের নির্দেশনা পাওয়া যাবে। প্রদর্শনীতে নৃত্য এবং সঙ্গীতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তার চিত্রকর্মের অভ্যন্তরে ফুল, নারী অবয়ব, গাছ, লতাপাতা একটা কল্পিত রসায়নে বিন্যস্ত। প্রদর্শনী চলবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এবং প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত।
×