স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওরা ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রাইভেটকারসহ অবস্থান করে ছিনতাই করে তারা। ভোরে চলাচলকারী যাত্রীদের টার্গেট করে সুুবিধাজনক স্থানে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুট করে। কিংবা চলন্ত যানবাহন থেকে মহিলাদের ব্যাগ হেঁচকা টানে কেড়ে নেয় তারা। এতে অনেক যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরকমই একটি ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মোঃ মিজুয়ান মিয়া (২৯), শেখ লিটন (৩৮), মোঃ আবদুল মজিদ (৩৩) ও মোঃ রফিক হাওলাদার (৪২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, দু’টি ছুরি, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দু’টি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি মুগদায় এদের ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে নিহত লিপির লুণ্ঠিত একটি ট্যাব ও নগদ এক হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। রবিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ আব্দুল বাতেন।
আব্দুল বাতেন জানান, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর মুগদায় ছিনতাইয়ের সময় রিক্সা থেকে ছিটকে পড়ে তারিনা বেগম লিপা নামে এক নারী নিহত হন। এরপরই ডিবি তদন্ত শুরু করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের একটি টিম শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় ছিনতাইকারী চক্রের ওই চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, লিপা নামে ওই নারী মারা যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে পরদিন দেখে তারা মিরপুরে গা ঢাকা দেয়। শনিবার রাতেও চক্রটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বের হওয়ার প্রস্তুতির সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুগদা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার ব্যবহার করে রিক্সার যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাগ ছিনতাই করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মিজুয়ান ডিবি পুলিশকে জানায়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে মুগদা এলাকার লিপা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। ওদিন তারা খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে কমলাপুর স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি অবস্থান করছিল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লিপা রিক্সা করে যাওয়ার সময় তার হাতে থাকা ব্যাগটি দেখে তা নেয়ার জন্য টার্গেট করে। পরে রিক্সাটি প্রাইভেটকারযোগে ধীর গতিতে অনুসরণ করতে থাকে। রিক্সাটি দক্ষিণ মুগদার ইউনিক বাস কাউন্টার অতিক্রম করার পরে তারা লিপার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে টান দেয়। এ সময় ভিকটিম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিক্সা থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। গ্রেফতারকৃত মিজুয়ান জানান, এ সময় তাদের বড় ভাই মনা গাড়ি চালাচ্ছিল। পরে তারা টয়নবি রোড ফকিরাপুল, মতিঝিল, মিরপুর টেকনিক্যালে আরও একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। তারপর তারা বাসায় ফিরে যায়। গণমাধ্যমে প্রচারিত লিপার মৃত্যুর সংবাদ শুনে তারা মিরপুরে বেশ কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়েছিল। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, গ্রেফতারকৃত শেখ লিটনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত মনা পলাতক আছে। তার বিরুদ্ধেও চারটি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আব্দুল বাতেন জানান, তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে, তাদের সুবিধামতো স্থানে রাতে বা ভোরে সড়কে চলাচলকারী ব্যক্তিদের গতিরোধ করে অস্ত্র ও ছুরির মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঢাকায় যারা প্রাইভেটকার দিয়ে ছিনতাই করে তারা যদি ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি না নেয়, তাহলে শনাক্ত করা কঠিন। আর ছিনতাইকারীরাও টহল পুলিশ কিংবা পুলিশ প্যাট্রোল গাড়ির সামনে ছিনতাই করে না।
