ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আখতার মাহমুদ কাজলের তৈলচিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী আজ

প্রকাশিত: ০৮:০১, ১৬ মার্চ ২০২০

 আখতার মাহমুদ কাজলের তৈলচিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী আজ

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৬ নম্বর গ্যালারিতে আয়োজিত শিল্পী আখতার মাহমুদ কাজলের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নৈসর্গিক বাংলাদেশ’ শীর্ষক তৈলচিত্র প্রদর্শনী আজ সোমবার শেষ হচ্ছে। প্রদর্শনীতে শিল্পী কাজলের ১০২টি তৈলচিত্র স্থান পেয়েছে। গত ২ মার্চ সোমবার ১০ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। দর্শনার্থীদের চাহিদার কারণে পরে এ প্রদর্শনীর সময় আরও ৫ দিন বাড়ানো হয়। বাঙালীর লড়াই সংগ্রামকে কেন্দ্র করে আঁকা প্রতিকৃতি, তাদের মুখাবয়ব ও অভিব্যক্তি, সেইসঙ্গে প্রকৃতি-অনুপ্রাণিত বিমূর্ত ভাব তার চিত্রকর্মকে এনে দিয়েছে স্বতন্ত্র শৈলী। চল্লিশ বছর ধরে শিল্পচর্চা করলেও প্রথমবারের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মানবতাবাদী শিল্পীর। গ্যালারিতে ক্যানভাসজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ। কোথাও পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন, কোনটাতে বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত ভাষণ, কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানের প্রস্তুতির ছবি। রং-তুলির পরিশীলিত আঁচড়ে প্রত্যেকটি চিত্রপটে ঠাঁই পেয়েছে বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের অবয়ব। আবার কোন ক্যানভাসে দুরন্ত শিশুদের প্রাণোচ্ছলতার প্রতিকৃতি। কোনটাতে গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে থাকা অসাধারণ সৌন্দর্য। তেলরঙের জমিনে আঁকা ছবিগুলোর প্রতিটি অবয়বে উদ্ভাসিত হয়েছে বাঙালীর সংগ্রাম ও বাংলার সৌন্দর্যের ভিন্ন অভিন্ন চিত্র। এই ছবিগুলো এঁকেছেন ৬৫ বছর বয়সী স্বশিক্ষিত শিল্পী আখতার মাহমুদ কাজল। সেসব ছবি নিয়ে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৬ নম্বর গ্যালারিতে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নৈসর্গিক বাংলাদেশ’ শিরোনামে চলছে প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষা সংগ্রামী গোলাম আরিফ টিপু বলেন, শিল্পী কাজলকে আমি শিশু অবস্থা থেকেই চিনি। শৈশবেই তার প্রতিভার প্রমাণ পেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ কারও কাছে আবেগের। কারও কাছে বড় রকমের চেতনার। সেই আবেগ-চেতনাই ক্যানভাসজুড়ে ফুটে উঠেছে শিল্পী কাজলের তুলির আঁচড়ে। শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, ৪০ বছর ধরে শিল্পচর্চার পরও তিনি কখনও প্রদর্শনী করেননি। এটা বিস্ময়কর। তার প্রত্যেকটি শিল্পকর্মে দেশ-মা-মাটির টান স্পষ্ট। তিনি সবসময় বিশৃঙ্খলা, নিষ্ঠুরতা ও হতাশামুক্ত এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে শান্তির জন্য আশা এবং আকাক্সক্ষা ফুটিয়ে তুলেছেন। শিল্পী আখতার মাহমুদ কাজল বলেন, শিল্পকর্মে আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি স্কুলে পড়ি। বেড়ে উঠেছি গ্রামেই। বাবার পেশাগত কাজের সুবাদে ঘুরেছি দেশজুড়ে। খুব কাছ থেকে দেখেছি পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন। যা আমাকে নাড়া দিয়েছে। বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যও আমাকে টেনেছে। আমার শিল্পকর্মগুলোতে এসবই তুলে ধরেছি। ৬৫ বছর বয়সী এই চিত্রশিল্পী বলেন, দীর্ঘ চল্লিশ বছর তৈলচিত্রে কাজ করলেও কখনও প্রদর্শনী করিনি। একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে শিল্পচর্চা করেছি। তবে আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী এবারই প্রথম। আখতার মাহমুদ কাজল ১৯৫৫ সালে ১ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে উ"চশিার সুযোগ হয়নি এই স্বশিতি চিত্রশিল্পীর। মূলত তেলরঙের চিত্রকর্মে সিদ্ধহস্ত তিনি। প্রসঙ্গত গত ২ মার্চ প্রদর্শনীর উপদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভাষাসৈনিক এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৬ নম্বর গ্যালারিতে ১৫ দিনব্যাপী প্রদর্শনী আজ শেষ হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল।
×