ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেনা ১৫ বছর পর বাড়ি ফিরলেন রেজা হয়ে

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১৫ মার্চ ২০২০

হেনা ১৫ বছর পর বাড়ি ফিরলেন রেজা হয়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১৪ মার্চ ॥ দীর্ঘ ১৫ বছর পর এক কিশোরী পুরুষে রূপান্তরিত অবস্থায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে ফিরলেন। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। তাকে এক নজর দেখতে প্রতিনিয়ত শত শত উৎসুক মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। জানা গেছে, শিবচরের নিলখী ইউনিয়নের চর কামারকান্দি গ্রামের সেকান্দার খানের মেয়ে সেরেলা আক্তার হেনা প্রায় ১৫ বছর আগে বাবা মায়ের সঙ্গে ঢাকা শহরে বসবাস শুরু করে। ঢাকায় সে লেখাপড়া করে পল্লী চিকিৎসক কোর্স সম্পন্ন করে। প্রায় আট বছর আগে সেরেলা আক্তার হেনা তার নিজের শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করে। তার মধ্যে পুরুষালী পরিবর্তন দেখে সে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। চিকিৎসক তাকে জানায়, হরমোনজনিত কারণে এই সমস্যা হয়েছে। ওষুধ খাওয়া শুরু করলেও ধীরে ধীরে সে সম্পূর্ণ একজন পুরুষ মানুষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় সে পাঁচ বছর আগে নিজের নাম পরিবর্তন করে। তার নাম রাখা হয় সেলিম রেজা। পরে এক মেয়েকে বিয়েও করে। তার ছোট একটি ছেলে রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে সেলিম রেজা (৩০) তার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি শিবচরের চর কামারকান্দি গ্রামে আসেন। তার আসার সংবাদ পেয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দেয়। তাকে এক নজর দেখতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গ্রাম থেকে উৎসুক মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। প্রতিবেশী আসমা বেগম বলেন, ‘সেলিম আগে মেয়ে ছিল। নাম ছিল হেনা। আমাকে নানি বলত, আমার কাছে প্রায়ই থাকত। ঢাকা যাওয়ার পর সেখানেই ওর শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে। ও বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কয়েকদিন হলো গ্রামে এসেছে।’ প্রতিবেশী আলম খান বলেন, ‘ওরা ঢাকা থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করত। ও মেয়ে থেকে পুরুষে রূপান্তর হওয়ার খবর আমাকে জানিয়ে বলেছিল, চাচা আল্লাহ যেহেতু আমাকে মেয়ে থেকে পুরুষ বানিয়ে দিয়েছেন, তাহলে আর ঢাকা থাকব না। গ্রামে এসে প্রয়োজনে দিন মজুরি করে বাবা মায়ের ভরণ পোষণ করব।’ পাশের গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, ‘একটি মেয়ে ছেলে হয়ে গেছে শুনে তাকে দেখতে এসেছি। তার কণ্ঠ শুধু মেয়ের মতো। চলাফেরা পুরুষের মতোই। আবার তার স্ত্রী ও সন্তান দেখলাম। সত্যিই এটা অবাক করা ব্যাপার। আমার মতো অনেক মানুষ তাকে দেখতে আসছে।’ পুরুষে রূপান্তরিত সেলিম রেজা বলেন, ‘আমি মেয়ে হয়েই জন্মগ্রহণ করেছিলাম। তবে যখন থেকে একটু বুঝতে শিখি, তখন লক্ষ্য করতাম অন্য মেয়েদের মতো আমার মেয়েলি পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রায় আট বছর আগে আমার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হলে চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা বলেন এটা হরমোনজনিত সমস্যা। হরমোনজনিত হোক বা যে কোন রোগের জন্য হোক, সৃষ্টিকর্তা আমাকে মেয়ে থেকে সম্পূর্ণ পুরুষে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন। আমি বিয়ে করেছি। আমার একটি ছেলেও রয়েছে। একজন পূর্ণাঙ্গ পুরুষ যেভাবে চলাফেরা করে, আমি সেভাবেই চলাফেরা করছি।’
×