নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১১ মার্চ ॥ ফতোয়াবাজি হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে। তবুও ইমাম ও সাবেক ইউপি সদস্য একটি পরিবারকে দুই বছর একঘরে করে রাখার ফতোয়া জারি করেছে। এতে পরিবারটি বন্দী হয়ে পড়েছে। শিকার হচ্ছে নানা সামাজিক গঞ্জনার। প্রতি নিয়ত সমাজে হেয় হয়ে থাকতে হচ্ছে। নিজ গ্রামের মসজিদের নামাজ আদায়, সমাজের দশের মুষ্ঠির চাল, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, হাটবাজারে বাজার সদাই, বাড়ির পাশে রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা সবই বন্ধ করে দিয়েছে ফতোয়া জারি করে। এমনকি মসজিদ চত্বরে মনজিলার স্বামী জহুরুল ইসলামকে এই বৃদ্ধ বয়সে ৫ মাস আগে কান ধরিয়ে উঠবস করিয়েছে সমাজপতিরা। ফতোয়াবাজির শিকার পরিবারটির বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতা বালাপাড়া গ্রামে। ফতোয়ার কারণে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার এই পরিবারের সদস্যরা। তারা অবরুদ্ধ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দৈনন্দিন কোন কাজ তারা করতে পারছে না। থানা পুলিশের সহায়তা চেয়েও পায়নি অভিযোগ ফতোয়ার শিকার মনজিদা বেগমের। জানা গেছে, উপজেলার শ্রীখাতা বালাপাড়া গ্রামের জহুরুরুল ইসলামের (৬৫) প্রথম স্ত্রী মারা যায়। পরে ২০০৩ সালে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী মদাতী গ্রামের মেয়ে মনজিলা বেগমকে (৩৫) বিয়ে করেন। এই দম্পতির ঘরে মেহেদি হাসান নামের ১৪ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। পরিবারটির দিন ভালই কাটছিল। বছর দুয়েক আগে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত হয়ে স্বামী জহুরুল মৌখিকভাবে স্ত্রীকে তালাক দেয়। স্ত্রী মনজিলা স্বামীর সাময়িক ক্রোধকে সামাল দিতে রাগ করে তার ভাইয়ের বাড়িতে চলে যান। সেখানে এক মাস থাকেন। কিশোর সন্তানের টানে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা হয়। বাড়ি ফিরে এসে স্বামী সন্তান নিয়ে এই দ¤পতি সংসার করে আসছে। এতে বাদ সাধেন স্থানীয় বালাপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাবেক ইউপি সদস্য নুর আমিনসহ ধর্মান্ধ কয়েক ব্যক্তি। তারা এই দ¤পতিকে পুনরায় হিল্লা বিয়ে দিয়ে। সেই হিল্লা বিয়ের স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে পুররায় বিয়ে করার ফতোয়াজারি করে। তা না হলে এই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে অবৈধ ঘোষণা। একই সঙ্গে জহুরুল ও তার স্ত্রী মনজিলা বেগমসহ পুরো পরিবারটিকে ফতোয়া দিয়ে এক ঘরে করে রাখা হয়। মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করে দেন। অন্যের জমির ওপর চলাচল করতে বাধা দিচ্ছে। গ্রামের দোকান থেকে কেনাকাটা করতে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে এই ফতোয়া হতে বাঁচতে বৃদ্ধ জহুরুল সমাজপ্রতিদের দ্বারে দ্বারে যায়। তারা ৫ মাস আগে ঘোষনা দেয় মসজিদের দশের সামনে কান ধরে উঠবস করলে ফতোয়া তুলে নেয়া হবে। এই প্রস্তাব দেয় গ্রামটির কতিপয় উগ্রমৌলবাদী ধর্মান্ধ নুর আমীন, মফিজুল, এরশাদ, মনির ও শাহাজাহানসহ অনেকে। গ্রামবাসীদের প্রস্তাবে বৃদ্ধ জহুরুল সকলের সামনে কান ধরে উঠবস করে। তবুও তার বিরুদ্ধে ফতোয়া তুলে নেয়নি। সমাজপতিদের ভাষ্য, এটা আইনের বিষয় নয়। এটা শরিয়তের বিষয়। শরিয়া অনুযায়ী তালাক হয়েছে। তাই তাদের ‘ঠেক’ করা হয়েছে। কালীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত ফরহাদ হোসেন জানান, ফতোয়াবাজির শিকার নারী মনজিলার অভিযোগ ৮ মার্চ জিডি আকারে গ্রহণ করে রেকর্ড করা হয়েছে।