ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১২ মার্চ ২০২০

করোনা চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ

এম শাহজাহান ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে চলতি বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনা চিকিৎসার জন্য সরঞ্জামাদি কেনা, ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রকাশনা ও প্রচার এবং কেমিক্যালস রি-এজেন্ট কিনতে এই অর্থব্যয় করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগ। এর আগে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, গত ৮ মার্চ ঢাকায় ইতালি ফেরত তিন প্রবাসীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রোগীদের দ্রুত সেবা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কতামূলক প্রচারের জন্য ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়। সারাদেশের মানুষ এখন করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশসহ বিভিন্ন ধরনের মেডিক্যাল পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। এসবের পাশাপাশি বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে দ্রুত করোনা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা ব্যতীত অন্য কোন রোগ বা স্বাস্থ্যসেবায় এই অর্থ ব্যয় করা যাবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ও ‘কোভিড-১৯’-এর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ‘কোভিড-১৯’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়। এজন্য সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু, সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা (সাপোর্ট কেয়ার), করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কিট এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা বা জেনারেল হাসপাতালসহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে চলতি ২০১৯ ২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবালয় অংশে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। এই চিঠি পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় দ্রুত বরাদ্দসহ অর্থছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থবিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, করোনার পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ বিস্তার লাভ করতে পারে। মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে রেখেছে। এছাড়া গত বছর ডেঙ্গুর বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়। এসব কারণে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার জন্য পৃথক বরাদ্দ ঘোষণা করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য আর্থিক বরাদ্দ ঘোষণা করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে অপ্রত্যাশিত খাত থেকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। সোয়াইন ফ্লু, জিকা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও সর্বশেষ করোনাভাইরাসের আক্রান্ত দেশ। এসব রোগ প্রতিরোধে সব সময় সরকারকে বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ কারণে এসব রোগ মোকাবেলায় সুনির্দিষ্টভাবে বাজেটে বরাদ্দ দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আশা করছি, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই মোকাবেলায় বরাদ্দ দেয়া হবে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত ৫০ কোটি টাকা শীঘ্রই ছাড় করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসার সরঞ্জামাদি সরবরাহ বাবদ ৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৭৫ হাজার, প্রকাশনা ও প্রচার বারদ ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ হাজার ও কেমিক্যালস রি-এজেন্ট বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি বনানীতে নিজের বাসভবনে বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের ৩০ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে জরুরী বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের কাছে কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, ডেঙ্গু মোকাবেলা ও সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু ও জিকা ভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। এছাড়া অনেক নতুন রোগ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। শীঘ্রই আইএমএফের কাছে করোনা মোকাবেলায়ও সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তা চাওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
×