ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা;###;নতুন কেউ আক্রান্ত হননি

হটলাইনে ২৭৭৮ কল ॥ করোনা ভাইরাস

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১১ মার্চ ২০২০

হটলাইনে ২৭৭৮ কল ॥ করোনা ভাইরাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত হটলাইন চালুর পর আইইডিসিআরের কাছে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৭৮ কল এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সন্দেহজনক আরও ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করেও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন কেউ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আক্রান্ত তিনজনের অবস্থা ভাল রয়েছে। আর বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের থেকে পরিবারের বয়স্ক লোকদের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে যাবার অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালগুলোতে পৃথক করোনাভাইরাস ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। আর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন হয়েছে। মঙ্গলবার মহাখালীর আইইডিসিআর ভবনে অনুষ্ঠিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এ সময় আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আক্রান্ত হয়েছেন এমন সন্দেহে বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ল্যাবরেটরি পরীক্ষা পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন এবং বিদেশের আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রী যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের সংখ্যা ৫৬ জন এবং তাদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনকে এমন অবস্থায় নেয়া হয়েছে। কল করে কি কি বিষয় জানতে চাওয়া হচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, করোনাভাইরাসের বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি মাস্ক কোথায় পাওয়া যাবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না, বিদেশ থেকে এসেছে, কি করণীয় ইত্যাদি জানতেও কল এসেছে। অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা আরও জানান, আক্রান্ত তিনজন ছাড়া আরও আটজন আইসোলেশনে আছেন। যে তিন জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের মধ্যে দুই জনের মধ্যে মৃদু সংক্রমণ ছিল। তবে তাদের আমরা এখনই ছাড়তে পারব না। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী: পরপর দুইবার স্বাস্থ্য পরীক্ষাতে নেগেটিভ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। তবে বাকি যারা আছেন, তাদের নিয়েও শঙ্কার কোন কারণ নেই। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ইতালি থেকে আসা প্রবাসী বাঙালীদের কাছাকাছি এসেছেন এমন চারজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসা আরও বেশ কিছু ব্যক্তিকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। তবে কতজনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে, সে সংখ্যা তিনি জানাননি। মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজনের নাক-মুখের লালা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে কেউ আক্রান্ত হয়নি। এর বাইরে, বিদেশ থেকে যারা আসছেন, তাদের অনেককে আমরা সেলফ কোয়ারেন্টাইনে (স্বেচ্ছায়) থাকতে বলছি, তাদের অনেকে তা মানছেনও। ওই সেলফ কোয়ারেন্টাইনে যারা আছেন, তাদের আইইডিসিআরের হিসাবে ধরা হচ্ছে না। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, আমরা সিরিয়াসলি কাজ করছি। শঙ্কিত হওয়ায় কিছু নেই। আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশী নাগরিকরা কিভাবে আছে, সেটা দূতাবাসের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছি। তিনি বলেন, কুয়েতে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। বিদেশ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে এলে একটি ঘরে থাকুন। সেলফ কোয়ারেন্টাইন সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। ইচ্ছেমতো বের হয়ে ১৭ কোটি মানুষকে বিপদে ফেলবেন না। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে মাস্ক ব্যবহার করে বের হবেন। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ১২টি হটলাইন নম্বর দেয়া আছে। সবাই এখানে ফোন করে তথ্য নিতে পারেন। সচেতনতা ছাড়া প্রতিরোধের কিছু নেই। সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধোয়া ও হাঁচি দিতে হবে। ডাঃ ফ্লোরা আরও বলেন, এই ভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সবচেয়ে উত্তম পথ হচ্ছে সেলফ কোয়ারেন্টাইন। এই মারাত্মক ভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করে পরিচালক বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া এখন পর্যন্ত এই ঘাতক ভাইরাস থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় নেই। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে ডাঃ ফ্লোরা বলেন, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, ইতালি ছাড়া অন্যান্য কোন দেশে এখনও পর্যন্ত কোন প্রবাসী বাংলাদেশী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হননি। সিঙ্গাপুরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশী রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়নি, আরেকজন প্রবাসী বাংলাদেশীও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দিল্লীতে উহান থেকে আগত ২৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক দিল্লী শহর থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। মাদারীপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর থেকে জানান, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন মাদারীপুরের বাসিন্দা। তিনি এখন ঢাকার আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন। তার সঙ্গে যে সব মানুষের যোগাযোগ হয়েছিল এমন ২৯ জনকে নিজ দায়িত্বে আলাদা থাকার পরামর্শ দিয়েছে আইইসিডিআর। মাদারীপুর সদরের ওই এলাকা পরিদর্শন করে এ পরামর্শ দেন আইইসিডিআর’এর কর্মকর্তারা। এতে আতঙ্কিত হবার কিছুই নেই বলেও জানান তারা। জেলা প্রশাসকের কাছে আক্রান্ত ব্যক্তির মা বলেছেন, তিনি এখন ভাল আছে। তার চিকিৎসা চলছে। চট্টগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে নতুন থার্মাল ইমেজ ডিটেক্টর। মঙ্গলবার এ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এর ফলে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করা সহজ হবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সতর্কতা হিসাবে তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নীলফামারী ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল। সেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আট শয্যার আইসোলেশন ইউনিট। চলছে ৫০ শয্যায় ইউনিট স্থাপনের কাজ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার অপর পাঁচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চলছে বিভিন্ন স্থরে সচেতনতামূলক সভা। শেরপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর থেকে জানান, জেলার সর্বত্র মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা রোগীর চিকিৎসা ও আলাদা রাখার জন্য জেলার বিভিন্ন্ হাসপাতালে ১৫০টি আলাদা শয্যা প্রস্ততসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে সঙ্কট দেখা দিয়েছে মুখের মাস্কসহ স্যানিটাইজারের। সেইসঙ্গে বেড়েছে দামও। ময়মনসিংহ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ থেকে জানান, নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও সন্দেহজনক আক্রান্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস থেকে জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে খুলনায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জনসাধারণকে জনবহুল এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন ইউনিট স্থাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিরোধ ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সোমবার থেকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১২ শয্যার করোনা আইসোলেশন ইউনিট চালু করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ॥ স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুইজনের সংস্পর্শে আসায় চারজন ও একজন চীনা নাগরিককে কোয়ারেন্টাইনে (পর্যবেক্ষনে) রাখা হয়েছে। তাদের নিজ নিজ বাড়িতেই বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ।
×