ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘জামদানি : বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত ঐতিহ্য’ গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ১১:১৭, ৩ মার্চ ২০২০

‘জামদানি : বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত ঐতিহ্য’ গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চোখজুড়ানো নক্সা আর বুননের সৌকর্র্যে অনন্য এক বস্ত্র জামদানি। করোলা, তেরছা, জলপাড়, কলকা, কুলতা, ময়ূরপ্যাঁচ পাড়, জুঁই ফুল, পুঁই লতা-এমন বাহারি নাম রয়েছে জামদানি শাড়ির নক্সার। মসলিনের উত্তরাধিকার এই জামদানি এখন বাংলার অহঙ্কার। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত কাপড়টি অর্জন করেছে ইউনেস্কো প্রদত্ত অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। সেই আদ্যোপান্ত এবার উঠে এলো এক মলাটে। সুতা তৈরির ইতিকথা, নক্সার রূপায়ন, কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ থেকে বয়নশিল্পীর কথা উঠে এসেছে এক গ্রন্থে। ‘জামদানি : বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত ঐতিহ্য’ শিরোনামের বইটি লিখেছেন লোক ও কারুশিল্প অনুরাগী লেখক মালেকা খান। পাক্ষিক অনন্যা প্রকাশিত গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় সোমবার। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও অধ্যাপক ড. রওনক জাহান। অনুভূতি প্রকাশ করেন মালেকা খান। সভাপতিত্ব করেন অনন্যা ও ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুভূতি প্রকাশে লেখক মালেকা খান বলেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি মেলায় জামদানি কাপড়ের স্বত্ব এখন শুধুই বাংলাদেশের। আর এই গৌরবের মূল অংশীদার আমাদের তাঁতিরা, যাদের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমেই তৈরি হয় এই কাপড়টি। এসময় তিনি প্রবীণ তাঁতি আবুল কাশেমকে উল্লেখ করে জানান কিভাবে যুগ যুগ ধরে এই ঐতিহ্য তারা নাতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছেন । কে এম খালিদ বলেন, ২০১৬ সালে ইউনেস্কো জামদানিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারও এই শিল্পের পৃষ্ঠপোষকাতায় কাজ করছে। বইটির প্রচার ও প্রসারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রন্থকেন্দ্র থেকে বইটি কেনার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৭৭টি মিশনেও পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জামদানিকে কাপড়ে বোনা তাঁতির কবিতা উল্লেখ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বইটিতে জামদানি শাড়ি তৈরির আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন লেখক। উঠে এসেছে জামদানি সুতা তৈরির ইতিকথা। আছেন নক্সা সৃষ্টিসহ জামদানি তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রসহ প্রস্তুত প্রক্রিয়া তথ্য এবং ছবি। জামদানি বয়নশিল্পীরা যেন ধ্যানের মাধ্যমে কাপড়ে নক্সা তৈরি করেন। শুধু তাই নয়, বয়নশিল্পীদের বর্তমান অবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছে বইটিতে। জামদানিকে পুরুষের টাইসহ বিভিন্ন ব্যবহারিক বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, জামদানি বিভিন্ন ঢাকাই শাড়ি পরেই আমি নানা দেশের সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেছি। সেসব জায়গায় আমার পরিহিত জামদানি নিয়ে অতিথিদের অনেক প্রশংসা শুনেছি। তাই নারীর শাড়িপ্রীতি আর তাঁতীর শিল্পমান টিকিয়ে রেখেছে জামদানি শিল্প। তাসমিমা হোসেন বলেন, জামদানিকে টিকিয়ে রাখা আর নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এই বইটি ভূমিকা রাখবে। জামদানি তৈরির নানা তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে আলোকচিত্র সংবলিত ২৪০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ধরা হয়েছে দেড় হাজার টাকা।
×