ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু আজ

জয় দিয়েই শুরু চায় টাইগাররা

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১ মার্চ ২০২০

জয় দিয়েই শুরু চায় টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচ দেড়দিন আগেই শেষ হয়ে গেছে। সাড়ে তিনদিনেই দাপটে জিম্বাবুইয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। মুমিনুল হকের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয় মিলেছে। এবার মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আজ ওয়ানডে সিরিজে খেলতে নামার পালা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ দুপুর ১টায় প্রথম ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে শেষে ৩ মার্চ দ্বিতীয় এবং ৬ মার্চ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচগুলো দিবারাত্রিতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডে দুপুর ১টায় এবং তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে দুপুর ২টায় শুরু হবে। টেস্টে জয়ের দিক দিয়ে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এতদিন পিছিয়েই ছিল বাংলাদেশ। এবার জিতে সমান ৭টি জয় মিলেছে। তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অন্যরূপই দেখেছে জিম্বাবুইয়ে। দুই দলের মধ্যকার ওয়ানডেতে আকাশ পাতাল পার্থক্য হয়ে গেছে। দুই দলের মধ্যে ৭২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশ ৪৪টি ম্যাচে জিতেছে। জিম্বাবুইয়ে ২৮টি ম্যাচে জিততে পেরেছে। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে সর্বশেষ ১৩টি ওয়ানডেতে টানা জিতেছে বাংলাদেশ। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, জিম্বাবুইয়ে এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে খেলতে নামলেই হারে। এই ম্যাচগুলো আবার দেশের মাটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও দুই দল ২০১৮ সালের শেষের দিকে লড়াই করে। এরপর আর দুই দলের মধ্যকার ওয়ানডেতে লড়াই হয়নি। এক বছর পর এবার যখন বাংলাদেশ দল আবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নামছে, তখন তিন ম্যাচের সবকটিতেই জেতার আশা থাকছে। সিরিজ জয়ের আশা তো এমনিতেই থাকছে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। তা বিশ্ব ক্রিকেট দলগুলোও ভালভাবেই বুঝেছে। সেখানে জিম্বাবুইয়ে তো আরও বেশি বুঝেছে। দেশের মাটিতে ওয়ানডে খেলা হলে তো কথাই নেই। ২০১৪ সালের শেষদিক থেকে দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ তো অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হয়েই উঠেছে। টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক। অধিনায়ক হওয়ার পর টানা তিন টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর যখন জয় মিলেছে, সেই জয়টি ইনিংস ব্যবধানেই মিলেছে। তৃপ্তির ঢেঁকুর তাই গিলতেই পারেন মুমিনুল। ওয়ানডে দলে অধিনায়ক হিসেবে আবার ফিরেছেন মাশরাফি। রয়েছেন তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাস, তাইজুল ইসলাম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোহাম্মদ নাইম শেখ, আল-আমিন হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শফিউল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান। টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি পেয়ে যাওয়া মুমিনুল নেই ওয়ানডেতে। তবে ওয়ানডে সিরিজে যে বাংলাদেশ সহজেই জিতবে, জেতা উচিত, সেই আশা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে মনে হয় সিরিজ জেতা উচিত। আমার কাছে সিরিজ জেতাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ সত্যিই তাই। যেভাবে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টানা দাপট দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৪১ ওয়ানডে খেলে ৩০টিতে জিতেছে। এবারও সিরিজ স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জেতার কথা। আবার শক্তিশালী দলই গড়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান যদি নিষিদ্ধ না থাকতেন তাহলে গত বছর জুন-জুলাইয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে আবার একসঙ্গে পঞ্চপা-বকে (মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহ) একসঙ্গে খেলতে দেখা যেত। কিন্তু সাকিব নেই। তবে মাশরাফি, মুশফিক, তামিম ও মাহমুদুল্লাহ আবার একসঙ্গে দীর্ঘদিন পর খেলবেন। এ সিরিজটি আবার বিশ্বকাপের পর মাশরাফির নেতৃত্বেই খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এই চার সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রথমবার ওয়ানডে দলে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি ওপেনার মোহাম্মদ নাইম শেখ ও অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ধ্রুবও রয়েছেন। ভবিষ্যতে দলে তাদের গড়ে তুলতেই রাখা হয়েছে। দলে ফিরেছেন মাশরাফির সঙ্গে পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। এ ছাড়াও আল-আমিন হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন কুমার দাসও জায়গা পেয়েছেন। বাকিরা নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন। মাশরাফির তুখোড় নেতৃত্বের সঙ্গে তামিম, নাইম, শান্ত, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, লিটন, মিঠুনের ব্যাটিং এবং বল হাতে মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন, শফিউল, আল-আমিনদের গতি ও তাইজুল, মিরাজের স্পিন জাদুর সঙ্গে আফিফের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিম্বাবুইয়ে সহজেই ডুবতে পারে। আবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আগে মাশরাফির অধিনায়কত্বে শেষ সিরিজ এটি, তা বলেছিলেন। তাতে তো সিরিজ জেতার তাড়না আরও বেড়ে যাওয়ার কথা। এখন অবশ্য মাশরাফি আর নেতৃত্বে থাকবেন কিনা তা বোর্ড সভার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। মাশরাফির নেতৃত্ব সামনে থাকুক আর না থাকুক, তিনি এ সিরিজটিকে যে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে খেলবেন তা ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বকাপে নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। দলও আশানুরূপ ফল পায়নি। এরপর বিশ্বকাপ শেষ হতেই ইনজুরির জন্য শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে যেতে পারেননি। এরপর বাংলাদেশ দল আর কোন ওয়ানডে ম্যাচই খেলেনি। সাত মাস পর দল আবার ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামবে। সেটি আবার দেশের মাটিতে হবে। এ বছরের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ এবং সিরিজ হবে। এক বছর পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর আবার দেশের মাটিতে ওয়ানডে ম্যাচ ও সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচ ও সিরিজটি হবে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে। যে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৬টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে ১০টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ তিন সিরিজে টানা জিতেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৯টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে ৮টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ম্যাচটি জিতে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। তারা যে জিম্বাবুইয়েকে ওয়ানডে সিরিজেও উড়িয়ে দিতে পারবে, সেই মানসিক ভিত গড়ে উঠেছে। তা আগে থেকেই ছিল। আর তাই তো জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে একের পর এক ম্যাচ ও সিরিজ জেতা গেছে। সেই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই আজ থেকে মাশরাফির নেতৃত্বে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামার পালা এবার বাংলাদেশের।
×