ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পিঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল ভারত

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পিঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল ভারত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ ছয় মাস পর পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কয়েক জন মন্ত্রীর এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বুধবার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেশটির খাদ্যমন্ত্রী রাম বিলাস পাসোয়ান এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বাম্পার ফলনের কারণে মসলাজাতীয় পণ্য পিয়াজের বাম্পার ফলনের কারণে দ্রুত এর দাম কমে যাচ্ছে। ফলে কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কমে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে তা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাবে ভারতের বৈদেশিক পণ্য বিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যলয়। মন্ত্রিদের বৈঠকে রফতানিতব্য পিয়াজের সর্বনিম্ন মুল্য থাকবে কিনা বা বিদ্যমান সর্বনিম্ন মুল্য কমানো হবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে মন্ত্রীদের একটি গ্রুপের বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী ছাড়াও দেশটির কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজীব গৌবা উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পেঁয়াজসহ নানা শস্য উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নামে। ফলে উৎপাদন সঙ্কটের কারণে গেলো সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, যেহেতু পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে এবং এ বছর প্রচুর উৎপাদিত হয়েছে, তাই সরকার পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্চ মাসের প্রত্যাশিত উৎপাদন আশা করা হচ্ছে ৪০ লাখ মেট্রিক টন। যা গত বছর একই সময় ছিল ২৮.৪ লাখ মেট্রিক টন। বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদফতর (ডিজিএফটি) থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারির পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আগামী এপ্রিলে দেশটিতে ৮৬ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন করা হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬১ লাখ টন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বন্যায় ভারতের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হওয়ায় পেঁয়াজ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেয়। সে সময় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে দেশটি। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। প্রতিবেশী দেশটি থেকে বাংলাদেশও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। এর প্রভাবে দফায় দফায় বাড়ে থাকে পেঁয়াজের দাম। এক পর্যায়ে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দ্রব্যটির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। দাম ওঠে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজের বাজার সামাল দিতে বাধ্য বাংলাদেশকে ভারতের বাইরেও চীন, মিসর, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার করার পর হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় ঢাকার বাজারে। ২৯ সেপ্টেম্বর পাশের দেশটি রফতানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। স্বাভাবিক বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা থাকলেও মাস শেষে শ’ ছাড়িয়ে যায়। অক্টোবরে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে। ওই মাসের শেষভাগে সরকার আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আমদানি বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম ফের ১০০ টাকার কাছাকাছি নিয়ে এলেও ৯ নবেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। ক’দিনের মধ্যেই ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম। সব রেকর্ড ভেঙে একপর্যায়ে ২৫০-২৬০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয় পেঁয়াজ। ভারত হলো গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশ। গত বছরের জুনে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার তখন রফতানি ১০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। এরপর সেপ্টেম্বরে এসে পুরোপুরি রফতানি বন্ধ করে দেয়। চলতি মৌসুমের শুরুতে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
×