ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের শ্মশানে লাশের শেষকৃত্যে বাংলাদেশের নদীর পানি

প্রকাশিত: ১০:২২, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  ভারতের শ্মশানে লাশের শেষকৃত্যে বাংলাদেশের নদীর পানি

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট ॥ ভারতের চ্যাংরাবান্ধা শ্মশানে ভারতীয়দের মৃতদেহের শেষকৃত্যর অনুষ্ঠানে জল নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশের বুড়িমারী সীমান্তের ধরলা নদী থেকে। প্রায় ৫০ বছর ধরে এভাবেই হয়ে আসছে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। যে সময়ে ভারত সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ দেখামাত্র গুলি করে হত্যা করছে বাংলাদেশীদের সেময় বাংলাদেশর সীমান্ত বাহিনী বিজিবির মানবিকতায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তে বাংলাদেশর অভ্যন্তরে ঢুকে ধরলা নদী থেকে কলসি ভরে জল নিয়ে গিয়ে ভারতের শ্মশানে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হয়েছে। এ ঘটনা বুড়িমারী সীমান্তে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের এক বিরল দৃষ্টান্ত। এখানে মানবিকতার জয় হয়েছে। এ বিজয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। রবিবার বিকেলে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের শ্মশানের পানি সরবরাহ করতে যান্ত্রিক মেশিন বসাতে চ্যাংরাবান্ধা ব্লকের পঞ্চায়েত সদস্য সুনির্মল গুহ আসে। তারা বাংলাদেশের ধরলা নদীতে পাম্প বসাতে চান। সেখানে একটি রাস্তা পাকা করতে চায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনে কোন দেশ নো’ম্যান্স ল্যান্ডের পাশে স্থাপনা, পাকা রাস্তা ও নদীতে পাম্প মেশিন বসাতে পারে না। এই আইন প্রয়োগ করে রংপুর ৬১ বিজিবির বুড়িমারী বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা বাধা দেয়। ফলে সীমান্তে কোন পাকা রাস্তা, পাম্প মেশিন বসাতে পারেননি ভারতীয়রা। তবে শ্মশানে ব্যবহারে কলসিতে পানি যত প্রয়োজন নদী থেকে পানি নিতে পারবে ভারতীয়রা, বিজিবি তাদের বাধা দেবে না। প্রয়োজনে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সহায়তা করা হবে। বুড়িমারী সীমান্তবাসী, বুড়িমারী ৬১ বিজিবি সূত্র জানায়, একপাশে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী, অন্যপাশে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা। মাঝখানে বয়ে গেছে ধরলা নদী। নদীর অর্ধেক অংশ বাংলাদেশে পড়েছে। এই নদী ঘেঁষেই প্রায় ৫০ বছর আগে ওপারে দেশটির ভারতের মেখলীগঞ্জ ব্লকের চ্যাংরাবান্ধা বাজার এলাকার সীমান্তে একটি শ্মশানঘাট রয়েছে। এই শ্মশানঘাট ঐ এলাকার কয়েকটি গ্রামের একমাত্র শ্মশান। একসময় শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যেত ধরলা। এখন আর সেই অবস্থা নেই। এই নদীর গতিপথ বদলে গেছে। নদীটি ভারত সীমান্ত হতে সরে এসেছে। এখন বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বয়ে যায় নদীটি। তাই চ্যাংরাবান্ধা শ্মশানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে জল নিতে আসতে হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। ওই শ্মশানে কারও মরদেহ দাহ করতে আসা স্বজনদের বাংলাদেশে ঢুকে পানি নিয়ে যেতে হয়। এই পানি তারা কলসি, জারকিন অথবা পানির কোন বড় পাত্র ব্যবহার করে নিয়ে যায়। এই ধরলা ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে বুড়িমারীতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, রংপুর ৬১ বিজিবির বুড়িমারী ক্যাম্পের সদস্যরা সর্বক্ষণিক টহলে থাকে। তারা অত্যন্ত মানবিক। ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা শ্মশানে মরদেহের শেষকৃত্য সৎকার করতে আসা লোকজনের ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষার কাজে ব্যবহারের পানি বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে ধরলা থেকে নিয়ে যেতে দেয়। এভাবে প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানের এই শ্মশানে শবদেহ দাহ হয়ে আসছে।
×