ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ভোগে চার গ্রামের এানুষ

টাঙ্গাইলে ব্রিজের সঙ্গে বাঁশের মাচান

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

টাঙ্গাইলে ব্রিজের সঙ্গে বাঁশের মাচান

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১২ ফেব্রুয়ারি ॥ সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ধলেশ্বরী শাখা নদীর ওপর নির্মিত করাইল ব্রিজটি’র সংযোগ সড়ক (এ্যাপ্রোচ) না থাকার দুর্ভোগে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ চার গ্রামের মানুষ। স্থানীয়রা চলাচলের জন্য সংযোগ সড়কের বিকল্প হিসেবে বাঁশের মাচাল ব্যবহার করছে। বৃষ্টি হলে মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায় এই মাচাল। ইতোমধ্যে বাঁশের মাচান থেকে পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ মহিলা-পুরুষ ও স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য এটা একটা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যায়, এই সংযোগ সড়কবিহীন ব্রিজটি বোঝা হয়ে আছে স্থানীয় খারজানা, বাউসাত, চৌবাড়িয়া ও করাইল চারটি গ্রামের মানুষের জন্য। কাতুলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের খারজানা, বাউসাত, চৌবাড়িয়া ও করাইল গ্রামের লোকজনের তোরাপগঞ্জ ও কাতুলীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে এই করাইল ব্রিজ। উদ্বোধনের পর দীর্ঘ ১২ মাসেও সংযোগ সড়কটি তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে স্থানীয় চারটি গ্রামের মানুষের মধ্যে। গত বছরের ২৪ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সংদস্য ছানোয়ার হোসেন করাইল ফুট ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৪৫ মিটার দীর্ঘ ২.২ মিটার প্রশস্ত এই ব্রিজটির অর্থায়ন করেছে জেলা পরিষদ টাঙ্গাইল। বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) টাঙ্গাইল। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোমা এন্টারপ্রাইজ। এই ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কোন অর্থ বরাদ্দ ছিল না বলে জানান, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সোমা এন্টারপ্রাইজের তত্ত্বাবধায়ক ফরিদ। তিনি জানান, প্রথমে ব্রিজের উইং ওয়াল ইট দিয়ে তৈরি করার ডিজাইন করা হয়েছিল। পরে ডিজাইন পরিবর্তন করে আরসিসি করা হয়। বন্যার কারণে উইংওয়াল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। উইং ওয়াল ছাড়া সংযোগ সড়কে মাটি ফেললে কোন লাভ হবে না। মাটি ধুয়ে চলে যাবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সিকদার পাড়া মাদ্রাসার ছাত্র বাউসাত গ্রামের আতিক বলেন, আমি প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে মাদ্রাসায় যাই। এই ব্রিজ পার হতে ভীষণ ভয় লাগে। কখন পড়ে যাই। বৃষ্টি হলে সে দিন আর মাদ্রাসায় যাওয়া হয় না। করাইল গ্রামের নায়েব আলী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটি আমাদের কোন কাজেই আসছে না। বরং বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি হলে বাঁশের মাচার ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়। ইতোমধ্যে বেশক’জন পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। আর ব্রিজের দুই পাশের মূল সড়কে মাটি ভরাট না করলে সংযোগ সড়ক করেও খুব বেশি লাভ হবে না। খারজানা গ্রামের গৃহবধূ নাছিমা আক্তার বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের এই ব্রিজ পার হয়ে স্কুলে-মাদ্রাসায় যেতে হয়। আমরা এসে পার করে দিয়ে যাই। কখন কি হয় সব সময় এই ভয়ে থাকি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব এই সংযোগ সড়ক ও মূল সড়কটিতে মাটি ফেলে উঁচু করে দেয়া হোক। কাতুলী ইউনিয়নের ৩নং ওযার্ডের ইউপি সদস্য সাখাওয়াত হোসেন জানান, দীর্ঘদিন চেষ্টার পর শুনেছি সংযোগ সড়কটি নির্মাণের জন্য কিছু চাল বরাদ্দ হয়েছে। কবেনাগাদ কাজ শুরু হবে সেটা বলতে পারছি না। আর সেতুর দুই পাশের সড়কের মাটি ফেলার বিয়য়টি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে চেয়ারম্যান সাহেব অবগত আছেন। কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মিঞা বলেন, ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটির সংযোগ সড়কের জন্য সম্প্রতি ১০ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ছানোযার হোসেন বলেন, বন্যার কারণে ব্রিজের সংযোগ সড়ক ও করাইল সড়কের মাটি ফেলার কাজ সম্ভব হয়নি। আপাতত সংযোগ সড়কের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরে দুই পাশের সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। পাবনা নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের রতœাই নদীর ওপর ৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় ২ বছর আগে সেতু নির্মিত হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে মানুষ নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ এলাকার মানুষের যাতায়াত সুবিধায় আটঘরিয়া উপজেলার সুজাপুর-কদমতলীহাট রাস্তায় রতœাই নদীর ওপর ৯৬.২০ মিটার পিসি গার্ডার সেতু প্রায় ২ বছর আগে নির্মাণ করে। ঠিকাদার দু’পাশে সংযোগ সড়ক না করায় ১৫ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছে। জানা যায়, একদন্ত ইউনিয়নের অধিবাসীদের এই সেতু পার হয়ে আটঘরিয়া-চাটমোহর উ্পজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় সবচে’ সমস্যায় পড়েছে স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীরা। এই সেতু দিয়ে কদমতলী মহিলা মাদ্রাসা, ফৈলজানা উচ্চ বিদ্যালয় ও সুজাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিশু শিক্ষার্থীর প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। সংযোগ সড়ক ছাড়া বর্তমানে সরু বাঁশের মাচাল পেতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আর এ সরু বাঁশের মাচাল দিয়ে একা একা ব্রিজ পার হয়ে স্কুলে যাতায়াত শিক্ষার্থীদের দুঃসাধ্য হওয়ায় অভিভাবকদেরই প্রতিদিন হাত ধরে পার করে দিতে হচ্ছে । কোন অভিভাবক যে দিন স্কুলে দিয়ে আসতে পারছে না সেদিন সে ছাত্র স্কুলে যেতে পারছে না। সোমবার সেতু পরিদর্শনে দেখা যায়. কয়েক যুবক সরু বাঁশের মাচাল দিয়ে পেছনে ঠেলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল ব্রিজ পার করছে। একটু ভুল করলেই মোটরসাইকেলসহ নিচে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আরশেদ আলী ও রুবেল হোসেন জানান, সংযোগ সড়কহীন এ সেতু দিয়ে ২ বছর ধরে ১৫ গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। আর এভাবে ঝুঁকিতে পারাপারের সময় মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনাও ঘটছে। সুজাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্কেল আলী জানান, এ ব্রিজ পার হয়ে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় স্কুলের উপস্থিতি মাঝে মধ্যেই কম হচ্ছে। শুধু স্কুলের শিক্ষার্থীই নয় সংযোগহীন এ ব্রিজে কৃষকদের ফসল পারাপারেও মারাত্মক বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। ফসলের বোঝা মাথায় কোন কৃষককের পেছনে অন্য একজনকে সতর্কতার সঙ্গে তার বোঝা ধরে ব্রিজ পার করাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ নিরসনে অবিলম্বে সংযোগ সড়ক নির্মাণে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, শীঘ্রই এই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
×