ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুব বিশ্বকাপ জয়ী বীররা আজ ফিরছেন

প্রকাশিত: ১১:১১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যুব বিশ্বকাপ জয়ী বীররা আজ ফিরছেন

মিথুন আশরাফ ॥ কখন আসবেন বীররা? এই প্রশ্নই শুধু চতুর্দিকে। আজ সকালে দেশের মাটিতে পা রাখার কথা ছিল যুব বিশ্বকাপ জয়ী বীরদের। কিন্তু সময় পরিবর্তন হয়েছে। তাদের দেখতে, তাদের হাতে প্রথমবার বিশ্বকাপ দেখতে যেন অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। আজ বিকেলে পাঁচটার মধ্যেই সেই অপেক্ষা শেষ হবে। দেশের মাটিতে পা রাখবেন বাংলাদেশ যুব দলের ক্রিকেটাররা। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই আকবর, মাহমুদুল, ইমন, অভিষেক, শরিফুল, রকিবুল, শাহাদাতদের অভ্যর্থনা জানানো হবে। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর পর যুব ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) নিয়ে আসা হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনে আসবেন তারা। তাদের নিয়ে বিসিবির আয়োজন আছে। তবে এতদিন ধরে যেহেতু তারা দেশের বাইরে, বাড়িতে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন, তাই বেশিক্ষণ দীর্ঘ করা হবে না আয়োজন। যাদের বাসা ঢাকাতে তারা বাসায় চলে যাবেন রাতেই। যাদের বাসা ঢাকার বাইরে, তারা বৃহস্পতিবার সকালে বাসায় যাবেন। আজ বিসিবির একাডেমি ভবনেই থাকবেন। দুই একদিন বাসার মানুষদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। এরপর আবার ঢাকায় চলে আসতে হবে। তাদের নিয়ে বিশেষ আয়োজন থাকবে। এর আগে ১৩তম যুব বিশ্বকাপের ১১ আসরে অংশ নেয় বাংলাদেশ যুবারা। এবার নিয়ে ১২ বার অংশ নেয়। এবার বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন তারা। ভারত যুব দলের মতো শক্তিশালী দলকে ফাইনালে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে হারিয়ে দেন। টান টান উত্তেজনা, চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে জিতে যান। তাতে করে আনন্দের সীমা থাকেনি। তাদের নিয়ে গর্বেরও শেষ নেই। যুবা ক্রিকেটাররা দেশের মানুষকে আনন্দে ভাসান। প্রথমবার যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শিরোপাও জিতে যান। যুব ক্রিকেটাররা আজ দেশে আসার কয়েকদিন পর থেকেই ব্যস্ত সময় কাটাবে। তাদের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সংবর্ধনা দেয়া হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ পালিত হচ্ছে। এমন মুহূর্তে বিশ্বকাপ জয়, অনেক বড় অর্জন হয়ে ধরা দিয়েছে। আর তাই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই বিশ্বকাপ জয় জাতির জন্য, সবার জন্য মুজিববর্ষের একটা বিরাট উপহার। ভারত যেখানে পরপর তিনবার না চারবার যেন চ্যাম্পিয়ন তাদের হারানো চাট্টিখানি কথা নয়। সাহস আছে তাদের। এর আগে আমরা একবার প্যারেড গ্রাউন্ডে সংবর্ধনা দিলাম, আরেকবার পল্টনে দিলাম, সে রকম একটা সংবর্ধনা তাদের আমরা দেব। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিজয়। খেলায় এতবড় বিজয় আগে কখনও পাইনি। দেশে ফিরে আসার পর ক্রিকেটারদের বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হবে।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দলের আইসিসির অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের ট্রফি জয় করাটা মুজিববর্ষে জাতির জন্য সেরা উপহার। ১৯৯৭ সালে আইসিসি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাজধানীর মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। যখনই বাংলাদেশ দল কোন ট্রফি জিতেছে, আমরা তাদের সংবর্ধনা দিয়েছি। আমরা আইসিসি অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ দলকেও জমকালো সংবর্ধনা দেব।’ সেই সংবর্ধনা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দেয়ার সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও গণসংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। বড়রা যা করতে পারেনি কখনও, সেটাই করে দেখিয়েছে ছোটরা। স্মরণীয় ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের চোখ রাঙানিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বপ্নের শিরোপা জয় করেছেন বাংলাদেশ যুবারা। উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছে গোটা দেশ। আর তাই এই আনন্দের জোয়ার এনে দেয়ায় যুব ক্রিকেটারদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবর্ধনা দেয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে জয়কে সেলিব্রেইট করব। বিজয়ী বীর টাইগারদের সুবিধামতো সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিজয় গোটা জাতির বিজয়। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।’ যুবারা যখন বিশ্বকাপ জিতে যায় তখন পুরো দেশজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। এর আগে ক্রিকেটের কোন দলই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে আয়োজিত যুব বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলেছিল তারা। এবার প্রথমবার ফাইনাল খেলার গৌরব অর্জনের সঙ্গে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায় বাংলাদেশ যুব দল। প্রথমবার ফাইনালে উঠেই চ্যাম্পিয়ন। দেশের মানুষ প্রথমবার কোন বিশ্বকাপ জয়ের সুখ স্মৃতি পেল। যুব ক্রিকেটাররা গর্বে ভরে দিলেন। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ অর্জনের সঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনেরও সর্বোচ্চ অর্জন এটি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যেমন বলেছেন, ‘প্রথমত এই দলটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো সেটা আমরা জানতাম। দ্বিতীয়ত এই দলের সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটি ছিল শুধু ফাইনাল না, প্রত্যেকটা ম্যাচে টিম হিসেবে এফোর্ট ছিল।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তরুণদের বিশ্বজয় শুধু ক্রিকেট না, ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় অর্জন।’ যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে যেভাবে বাংলাদেশ যুব দলকে চ্যাম্পিয়ন করান অধিনায়ক আকবর আলী, তাতে প্রশংসায় ভাসছেন। অনেক দৃঢ়তা, দক্ষতা, সাহস আর আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দেন আকবর। তাতে দলও চ্যাম্পিয়ন হয়। বিশ্বকাপ শেষে তাই আইসিসি যখন বিশ্বকাপ একাদশ গড়ে, সেখানে বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার থাকেন। একাদশে আকবর আলী, মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান শাহাদাত হোসেন আর মাহমুদুল হাসান জয় থাকেন। তবে এই একাদশের অধিনায়ক করা হয় আকবরকে। বিশেষ স্বীকৃতি মিলেছে। স্থায়ুচাপ যেভাবে সামাল দিয়ে বিপদে পড়া দলকে টেনে তুলে জয় এনে দেন আকবর, তাতে প্রশংসার দাবিদারও তিনি। আকবরের বিশ্বকাপ জয়ী অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসে এখন দেশের মানুষও বলতে পারছেন, আমরা বিশ্বকাপ জয়ী দল। এই বিশ্বকাপ জয়ী দলের বীররা আজ দেশে ফিরছেন।
×