ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত সাতক্ষীরার আশরাফ বাঁচতে চান

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত সাতক্ষীরার আশরাফ বাঁচতে চান

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে শরীরে মারাত্মক ক্ষত নিয়ে ধুঁকছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কৃষ্ণকাটি গ্রামের আশরাফ আলী শেখ (৭০)। প্রথমে হাতে-পায়ের তালুতে ফোটা ফোটা দেখা দিলেও এখন তা ফুলে বড় বড় ঘায়ে রূপ নিয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, ঢাকা ও ভারতের কলকাতায় চিকিৎসা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন সুস্থ জীবনে ফিরতে। এখন বাড়িতেই জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। আশরাফ আলী শেখ জানান, ১৯৯৮ সালে তার হাতে পায়ে ফোটা ফোটা দেখা দেয়। একই সঙ্গে হাত-পায়ের তলায় জ্বালা-যন্ত্রণা করত। প্রাথমিকভাবে হোমিও চিকিৎসা করালে জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যায়। কিছুদিন ভাল থাকলেও পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আর্সেনিকের বিষ। চিকিৎসায় ত্রুটি না করলেও আর সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। হঠাৎ একদিন মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তার হা-পা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এখন তার বাম হাতের তালুতে ও ডান পায়ের গোড়ালি ফুলে বড় ঘা দেখা দেয় । এই ঘা ক্রমশ বড় হচ্ছে। শুধু কৃষ্ণকাটির আশরাফ আলী শেখ নয়, মারাত্মক আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে গোটা তালা উপজেলা। সুপেয় খাবার পানির সঙ্কটে আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের কারণে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত হয়েছে অনেকেই। তালা উপজেলার কৃষ্ণকাটি গ্রামের জালাল মোড়ল দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত। যা বর্তমানে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। তার ফুফু শরভানু বিবি, পিতা আনসার মোড়ল, বড় ভাই আলাউদ্দীন মোড়ল ও ভাই সালাউদ্দীন মোড়লসহ গত ১৬ বছরে অন্তত ১০ জন আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও আর্সেনিকে আক্রান্ত। কৃষ্ণকাটি গ্রামের সাজেদা বেগম জানান, তিনি নিজেই আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত। তার বিয়ের পর স্বামীর বাড়ির লোকজন যখন জানতে পারে সে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত, তখন তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের বাড়িতে কোন আত্মীয়-স্বজন আসে না এবং তারাও কারও বাড়িতে যেতে পারেন না। চিকিৎসকদের মতে একবার কোন মানুষের শরীরে আর্সেনিকোসিস হলে তা আস্তে আস্তে সারা শরীরে চাকা চাকা দাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভাল হওয়ার লক্ষণ খুবই কম থাকে। স্থানীয়রা জানান, কৃষ্ণকাটি গ্রামে গভীর নলকূপে লবণ পানি ওঠে। এজন্য সবাই শ্যালো টিউবওয়েলের পানি খায়, যার বেশিরভাগেই আর্সেনিক রয়েছে। মানুষ অহরহ আর্সেনিক যুক্ত পানি খাওয়াসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছে। তালার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আনারুল ইসলাম কৃষ্ণকাটি গ্রামে একই পরিবারের চারজনসহ অনেকেই আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
×