ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিডিএফ সম্মেলন শেষ

প্রতিশ্রুত অর্থ চাইল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

প্রতিশ্রুত অর্থ চাইল বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত অর্থ চাইল বাংলাদেশ। দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত, মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং এসডিজি বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ অভ্যন্তরীণ উৎস ও দাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু দাতারা তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ দিচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবার জোর দিয়েই দাতাদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন, লোকসান করবেন না। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠনে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য ওই সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, সহযোগী দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে দাতা সংস্থাগুলো। বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা হবে। জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুনিচি ইয়ামাদা, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন সেন অর্থমন্ত্রীর শেরে বাংলানগর কার্যলয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করে সহযোগিতার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে আগামীদিনের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার বিষয়ে দাতাদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) দু’দিনব্যাপী বৈঠকের শেষদিনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে সরকারী- বেসরকারী খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে চারটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ‘কার্যকর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন’ সেøাগান সামনে রেখে এবার বিডিএফ বৈঠক শুরু করা হয়েছে। এর আগে বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিএফ বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিডিএফের এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইউএনডিপি, এআইআইবি, জাইকাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের মোট ৭০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন। শেরে-বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এবারের বৈঠক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এবারের সম্মেলনে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। উন্নয়ন সহযোগীদের সংগঠন লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) পক্ষে জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এবং ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। বৈঠকের শেষদিনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ফোরামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লের বেশকিছু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শীর্ষ স্থানীয়রা অংশ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৩৫-৪০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম এবার এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে এগিয়ে চলেছে। এখন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। একইসঙ্গে সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গঠন করা হবে। এরই প্রেক্ষিতে এবার ফোরামে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার রূপরেখা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকারের পদক্ষেপসমূহ বা বিভিন্ন আর্থসামাজিক অগ্রাধিকার খাতে সরকারের মধ্যমমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট তুলে ধরা হয়েছে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা জরুরী। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিলেও একটি সিঙ্গেল পেনিও চোখে পড়েনি। আগামীতে ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে পার্টনারশিপের মাধ্যমে সম্পদ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার। প্রচুর সম্পদের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে আমরা কাজ করছি। এগুলো কাজে লাগবে। ড. মসিউর রহমান বলেন, জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা এমডিজির মতোই সাফল্য নিয়ে আসব। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এসব কাজ চলছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ আমাদের বড় ইনোভেশন। একে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া, রফতানি নির্ভর প্রবৃদ্ধি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মিয়া সেপ্পো বলেন, বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে যা যা করণীয় তার সবই করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
×