ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত ৫-৭ বছরে খনন করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক পুকুর

সিরাজগঞ্জে ফসলি জমিতে পুকুর খনন

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

সিরাজগঞ্জে ফসলি জমিতে পুকুর খনন

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ সিরাজগঞ্জের শস্য ভা-ার খ্যাত তাড়াশ উপজেলায় উর্বর তিন ফসলি কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তাড়াশ উপজেলায় কয়েক বছর আগেও দেখা যেত দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ। এখন সেই ফসলের মাঠে দেখা মেলে শুধু পুকুর আর পুকুর। পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হলেও এতে কেউ সাড়া দিচ্ছেন না। সম্প্রতি উপজেলা ঘুরে তাড়াশেপুকুর খননের এই মহোৎসবের দৃশ্য দেখা গেছে। স্থানীয়রা আরও জানান. উপরন্তু প্রভাবশালীরা এতই বেপরোয়া যে, তারা আইন না মেনে অবৈধভাবে দিন রাত সমান্তরালভাবে পুকুর খনন করে চলছে। এর ফলে তাড়াশ উপজেলায় যেমন কমছে কৃষি জমি, তেমনি পুকুর আর জলাশয়ের কারণে ফসলের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ফসলের মাঠ এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১ উপেক্ষা করে খাদ্য শষ্য ভা-ার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশে গত ৫-৭ বছরে ফসলি জমিতে পাঁচ শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর অগ্রহায়ণ মাস থেকে উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে ১৫০-২০০ পুকুর খননের কাজ চলমান রয়েছে। আর ফসলির জমির অবৈধভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করে এ সকল ফসলি মাঠে পুকুর খননকালে তা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসগুলো নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও অভিযানের পরেই ওই প্রভাবশালীরা আবারও পুকুর খনন কাজে নেমে পড়েন। কৃষি বিভাগের মতে, তাড়াশ উপজেলায় নির্বিচারে পুকুর খনন চলতে থাকায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদনও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলায় ১৯৯৮ সালের দিকে আবাদযোগ্য জমি ছিল ২৫২০০ হেক্টর। ২০১৮ সালে দিকে ছিল ১৫১৩৭ হেক্টর। বর্তমানে আবাদযোগ্য জমি এসেছে প্রায় অর্ধেকে। ২ দশকে এ উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ১২ হাজার হেক্টর। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুকুর খননে ভূমির শ্রেণী বদল হচ্ছে। এতে পরিবেশগত প্রতিকূলতার আশঙ্কা বাড়ছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে এ উপজেলায় পুকুর জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার নওগা ইউনিয়নের মুহিষলুটি বাজারের সঙ্গে বিস্তীর্ণ মাঠেই ২৫ বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন কাজ চলছে। নওগা ইউনিয়নের মহিষলুটি গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক আবদুর রহিম জানান, মাঠের মধ্যে একটা বড় পুকুর খনন করলে আশপাশের বিপুল পরিমাণ জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতে আর ফসল হচ্ছে না। যারা জমি কেটে পুকুর করছেন তারা অনেক প্রভাবশালী। স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, মাত্র চার-পাঁচ ফুট গভীর করেই মাছ চাষ শুরু করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, পুকুর হলে ২০ ফুটের কম গভীর হওয়ার কথা নয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এখনও পুকুর খনন বন্ধ করতে পারেনি। উপজেলার সদর ইউনিয়নের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছরে তাদের ইউনিয়নেই অর্ধেক আবাদি জমি পুকুরে চলে গেছে। যেটুকু জমি অবশিষ্ট ছিল নতুনভাবে তাতেও চলতে শুরু করেছে খননযন্ত্র। অপরিকল্পিত পুকুর খননে জলাবদ্ধতা হয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। তাড়াশ উপজেলার সাধারণ মানুষেরা বলছে, অর্ধেক আবাদি জমি পুকুরে চলে গেছে। যেটুকু জমি অবশিষ্ট ছিল নতুনভাবে তাতেও চলতে শুরু করেছে খননযন্ত্র। অপরিকল্পিত পুকুর খননে জলাবদ্ধতা হয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। চারণভূমি সঙ্কটে মানুষ, গরু, মহিষ ও ছাগল প্রতিপালন ছেড়ে দিচ্ছেন। ক্ষতির পরিমাপ না করা হলেও পুকুর করে মাছ চাষে যে লাভ হচ্ছে, কৃষির ক্ষতিটা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান বলেন, তাড়াশ উপজেলায় পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। জমির শ্রেণী বদল করে আবাদি জমিতে পুকুর দীঘি খনন করা বেআইনী ও দ-নীয় অপরাধ। তবে এক শ্রেণীর অসাধু লোক তিন ফসলি আবাদি জমিকে নিচু ও জলাভূমি দেখিয়ে পুকুর খনন করছেন। এক শ্রেণীর লোক জমি লিজ নিয়ে বা কিনে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে।
×