ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ নাটকের নতুন প্রযোজনা ‘জলবাসর’ ॥মোহাম্মদ আলী হায়দার

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

দেশ নাটকের নতুন প্রযোজনা ‘জলবাসর’ ॥মোহাম্মদ আলী হায়দার

দেশ নাটকের নতুন প্রযোজনা ‘জলবাসর’ নাটকের প্রথম শো হয়ে গেল গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার। নতুন বছরে আমার দেখা নতুন নাটক, একেবারে নতুন লেখনীতে, ঢঙে, রঙে ও অভিনয়ে। নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা বলছেন, এটি সম্মুখ বাস্তবতার নাটক। আমরা নিজেরাই কিভাবে নিজেদের জীবন বিপন্ন করছি প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে, সেটা এই নাটকে একেবারে পরিষ্কার। গল্পটা এত চমৎকার যে এক মুহূর্তের জন্য নাটক ছাড়া অন্য কোন ভাবনায় আপনি যেতে পারবেন না, নাটকের চরিত্রগুলোর সঙ্গে আপনার যাত্রা অব্যাহত থাকবে। মাসুম রেজা লিখেছেন এক মহাকাব্যিক বয়ান যাতে রয়েছে অনেক তাত্ত্বিক-বিজ্ঞানসম্মত আলাপ, আবার আছে যাদু বাস্তবতা, আবার আছে সহজিয়া প্রাণের বয়ান যা অনেক উচ্ছ্বল ও আনন্দদায়ক। কুশীলবেরা খেলেছেন সবাই খুব, সংলাপ নিয়ে, চরিত্র নিয়ে। নাজনীন হাসান চুমকী, বন্যা মির্জা ও তামিমা তিথি এই তিন বোন শুরু শেষ পর্যন্ত নাটকের সুরটা ধরে রেখেছেন একদম পটু কুশীলবের মতো। লুবাই চরিত্রে সুস্মিতা সাহার দৃপ্ত মঞ্চ ভ্রমণ দেখলাম, কত রঙ্গ ঢঙ্গ কতকিছু। সেলিনা শেলী ও কামাল আহমেদ তাদের অভিজ্ঞতার স্বাক্ষর রেখেছেন প্রত্যেক দৃশ্যে। তাদের মঞ্চে আগমন একটু নতুন প্রাণ সঞ্চার করে সবার মধ্যে প্রতিবার। অসীম কুমার নট্ট ইয়াকুত ম ল চরিত্রে একেবারে যুতসই হয়েছে। অসীমের এটি সেরা অভিনয় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। মাইনুল হাসান মইন, শাহেদ নজীর ও হোসেইন নীরব দেশ নাটকের তিন তরুণ তুর্কী দারুণ করেছে। এই তিনজন আরও বেশি মঞ্চে নতুন নতুন চরিত্র নির্মাণ করুক এই কামনা করি। মইনকে একেবারে একজন ব-কলম মাওলানাই মনে হয়েছে। ও মঞ্চে ঢুকলেই এত হাসি, কই রাখি? কনিশলতায় সুষমা সরকার প্রতিবার দ্যুতি ছড়িয়েছে মঞ্চে। আর অন্য সবাই অনেক উজ্জ্বল ছিলেন যার যার চরিত্রে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো ময়ূর চরিত্রে লেতুনজেরা নীলা ও হরিণের ভূমিকায় আল আমিন ছিলেন অনবদ্য। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই দুটি প্রাণীকে এরা ধারণ করেছে একেবারে নিখুঁত ক্রিয়ায় ও প্রতিক্রিয়ায়। দেশ নাটক ‘জলবাসর’ এ অভিনেতাদের দুটি সেট তৈরি করেছে, কাজেই অন্য সেট এর অভিনয় আরেকবার দেখতেই হবে। নাটকের মঞ্চ শৈলী ও প্রপস দারুণ। তবে এক্সপেরিমেন্টাল হলের প্রসেনিয়াম পাটাতন উঠিয়ে দিলে দর্শক সারির মাঝখানের পর থেকে ভূমি আর দেখা যায় না। এটি নিয়ে নির্দেশক ভাববেন আশা করি। জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে নাটকটির স্পেক্টিক্যাল আরও জোরদার হবে বলে মনে হয়। মূল হলে এই জাতীয় প্রযোজনার প্রদর্শনী দাবি রাখে। নাটকের পোশাক, লাইট ও মিউজিক নাটকের মেজাজ ধরে রেখেছে শতভাগ। তবে কোরিওগ্রাফি নির্মাণে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ আশা করছি। এটি এখনও খুব দুর্বল আছে। ‘জলবাসর’ দেশ নাটকের এক সার্থক প্রযোজনা। মাসুম রেজা ও দেশ নাটকের প্রতি কুর্নিশ। দর্শকদের উদ্দেশে বলা যায়, ‘জলবাসর’ দর্শনে আপনি শতভাগ তৃপ্ত হবেন, এই প্রত্যাশা আমার। নিশাত আপা, আপনার দেশ নাটক অনেক ঠিক লাইনেই আছে, আপনি নিশ্চয়ই দূর থেকে দেখছেন, আপনি ভাল থাকবেন আপা।
×