ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছোটবোনকে হারিয়ে বড় বোন এবং গুরুকে হারিয়ে শিষ্যের শিরোপা

ফেডারেশন কাপ টিটিতে সেরা সজীব ও সোমা

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২২ জানুয়ারি ২০২০

 ফেডারেশন কাপ টিটিতে সেরা সজীব ও সোমা

রুমেল খান ॥ ‘কাট খেল। চপ খেল। একবার ডানে, একবার বায়ে খেল। টাইম নিয়ে খেল। পয়েন্ট পাও বা না পাও, কিন্তু প্রতিবারই পানি খাও। ধীরে খেল। লিডটা ধরে রাখ। ইজি খেল। মনোযোগ দিয়ে খেল ...।’ মঙ্গলবার পল্টনের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফেডারেশন কাপ র‌্যাঙ্কিং টেবিল টেনিসের মহিলা এককের ফাইনাল খেলা চলার সময় এমনই আরও কমান্ড দিচ্ছিলেন কোচ মোহাম্মদ আলী। যাকে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, তিনি তারই স্ত্রী এবং শিষ্যা ... আবাহনী লিমিটেডের তারকা খেলোয়াড় সোনম সুলতানা সোনম। মজার ব্যাপার, সোনম তখন খেলছিলেন তারই আপন ছোট বোন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নওরিন সুলতানা মাহির সঙ্গে! প্রথম সেটে মাহি জিতলেও অভিজ্ঞ সোমাই চ্যাম্পিয়ন হন। মাহিকে হারান ৫-১১, ১১-৮, ৮-১১, ১১-৭, ১১-৫, ১১-৫ পয়েন্টে (৪-২ সেটে)। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সোমা বলেন, ‘ফাইনালে জিতলেও স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারিনি। কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলাম। সকালেও বেশ খারাপ বোধ করছিলাম। মাথা ঘুরছিল। খুবই ক্লান্ত লাগছিল। এছাড়া এত কম সময় (চারদিন) অনুশীলন করে জীবনে এই প্রথম কোন টুর্নামেন্ট খেললাম। টিটি একটি সেনসিটিভ খেলা। এই খেলায় উত্থান-পতন থাকেই। সব মিলিয়েই অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি, এটাই হচ্ছে বড় ব্যাপার।’ সোমা আরও যোগ করেন, ‘জেতার পেছনে কোচের অবদানই ছিল সবচেয়ে বেশি। কারণ তার নির্দেশনা মেনে না খেললে অবশ্যই হারতাম। সেই সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। এজন্যই শিরোপাটা অক্ষুণœ রাখতে পেরেছি।’ এসএ গেমসের পর বাবার বাড়িতে যাওয়া, নিজের ছোট ভাইয়ের (সাজ্জাদ হোসেন মোশতাক) অকাল মৃত্যু, মানসিক বিপর্যস্ততা ... এগুলোও সোমার কম অনুশীলনের জন্য দায়ী। তারপরও এককে ও দ্বৈতে দ্বিমুকুট জিতেছেন, এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এ নিয়ে ফেডারেশন কাপে কতবার চ্যাম্পিয়ন হলেন? এই প্রশ্নের জবাবে একগাল হেসে সোমার উত্তর, ‘অনেকবার, আসলে ঠিক মনেও নেই!’ আপন ছোট বোনের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলতে গিয়ে কি চাপে ছিলেন? ‘না। খেলার সময় এগুলো মাথায় থাকে না। মাহির বিরুদ্ধে এর আগেও গত বছর একটি র‌্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছি। সেবার মাহিই আমাকে হারিয়েছিল। জুনিয়র হিসেবে মাহি অনেক ভাল খেলেছে। দ্রুত ওপরে উঠে আসছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করাটা অবশ্য চ্যালেঞ্জেরই বটে।’ এবার মাহিকে হারিয়ে গত বছরের হারের প্রতিশোধ নিয়েছেন, এমনটা মোটেও মনে করেন না সোমা। হেরে যাওয়ার পর বোন মাহিকে সান্ত¦না দিয়েছেন সোমা। বলেছেন, ‘মন খারাপ কর না। এখন তো তোমাদেরই সময়। আমরা আর ক’দিন?’ রবিবার ৩৩ বছর বয়সী সোমা তার আরেক কাজিন সাদিয়া রহমান মৌকে সঙ্গে নিয়ে মহিলা দলগত ইভেন্টের ফাইনালেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। যতদিন ফর্ম-ফিটনেস থাকবে, ততদিনই খেলতে চান দুই সন্তানের জননী সোমা। শিষ্যের কাছে গুরুর হার ॥ মুফরাদুল খায়ের হামজা সজীবের শেষ শটটি ফেরাতে পারলেন না মানস চৌধুরী। চ্যাম্পিয়ন নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এসে মানসের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিলেন সজীব। হেরে গেলেও প্রিয় শিষ্যকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন মানস। শিষ্যের কাছে হারে কোন লজ্জাবোধ নয়, বরং গর্ব করলেন দেশের এক নম্বর এই টিটি খেলোয়াড়। সিনিয়র পর্যায়ে প্রথমবার অংশ নিয়ে প্রথমবারই শিরোপার স্বাদ পেলেন সজীব। এককের ফাইনালে তিনি মানসকে হারান ৯-১১, ৩-১১, ১১-৯, ১২-১০, ১১-৯, ৭-১১, ১২-১০ পয়েন্টে (৪-৩ সেটে)। স্কোরলাইন বলছে, ম্যাচটি ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। মানসের কথায়, ‘তিন বছর আগে সজীবকে চট্টগ্রামের নবীনমেলা ক্লাবের একটি টুর্নামেন্ট থেকে তুলে আনি। আমিই খেলা শিখিয়েছি তাকে। তাই আমার কোন দুঃখবোধ নেই শিষ্যের কাছে হারায়। বরং আমি গর্বিত। আমরা দু’জনেই শেখ রাসেলে খেলি। শিরোপা শেখ রাসেলেই থাকল।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার কাছে ওর (সজীব) খেলা ভাল লেগেছে। চেষ্টা করলে আগামীতে দেশসেরা খেলোয়াড়ে পরিণত হতে পারবে সজীব।’ সজীবের ভাষ্য, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল শিরোপা জিততে পারব। তাছাড়া গুরু মানসদা’র কাছে শিখেছি বলে ওনার দুর্বল দিকগুলো আমার জানা ছিল। তাই জিততে পেরেছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘মানস চৌধুরী, মাহবুব বিল্লাহ- নামগুলোর মধ্যে অনেক ভয় ছিল। গুরু আমাকে সেই ভয়কে দূর করতে বলেছিলেন। আমি ওনাকে হারিয়ে নামের সেই ভয়কে দূর করেছি।’ নেপালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে খেলতে পারেননি মানস। তবে ফিরেই সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই থেকে এক নম্বরে উঠে এসেছেন। চমক দেখিয়েছেন সজীবও। তিনি ১১ থেকে সরাসরি তিন নম্বরে উঠে এসেছেন।
×