ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট চেয়ে ইসিতে বিএনপির চিঠি

প্রকাশিত: ১০:০০, ২২ জানুয়ারি ২০২০

  ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট চেয়ে ইসিতে বিএনপির  চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট ব্যবস্থাতেই ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সরকারী দলের খবরদারি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে ইভিএম বাতিলের এই চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার কাছে হস্তান্তর করা হয়। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকেও বসেন। ইসির সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে নতুন করে উপ-নির্বাচন আয়োজনের দাবিও জানানো হয়েছে। এদিকে ঢাকা সিটি নির্বাচনে ইভিএম বাতিল চেয়ে সিইসিকে দেয়া চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উল্লেখ করেন, ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের হাতে এখনও সুযোগ আছে নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করার। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই উন্মোচিত ইভিএমে অকার্যকারিতাকে বিবেচনায় নিয়ে ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট ব্যবস্থাতেই ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। ভোট প্রক্রিয়ায় সরকারী দলের খবরদারি বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আশাকরি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা প্রমাণে আমাদের দাবি পূরণ করে ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ করার ব্যবস্থা নিবেন। একটি স্বচ্ছ ও শুদ্ধ নির্বাচন ব্যবস্থা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্থহীন। গণতন্ত্র কার্যকরী করার জন্যই ভোট ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংবিধান নির্বাচন কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান জন্ম দিয়েছে। ইভিএম প্রকল্পের মতো একটি সর্বজন বিতর্কিত উদ্যোগ সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করেছে। ইতোমধ্যেই ইভিএমের যান্ত্রিক অকার্যকারিতা যেমন প্রমাণিত হয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ উপ-নির্বাচন যার সর্বশেষ প্রমাণ। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনে কী ঘটেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে ইসির সঙ্গে কথা বলেছি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে এ নির্বাচন। ধীরে ধীরে নির্বাচন ব্যবস্থা অধিকতর খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে আস্থাহীনতা বাড়ছে। চট্টগ্রামের উপ-নির্বাচনে ১৭০ পোলিং স্টেশনের মধ্যে সবগুলোই দখল করে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রে বাইরের কেউ থাকতে পারবে না, গাড়ি-মোটরসাইকেল চলবে না। আওয়ামী লীগের সবাই সরাসরি কেন্দ্র দখল করেছে, মিছিল করেছে। মৃত মানুষের ভোট, প্রবাসীদের ভোট, জেলে থাকাদের ভোটও দিয়েছে। ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয় চট্টগ্রামের ভোটে তা প্রমাণিত হয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। যারা যেতে পেরেছে তারা আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছে, ভোটের ব্যালট ইউনিটে ভোটের কাজ তারাই সেরেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানেও এমন হয়েছে, চট্টগ্রামে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামের নির্বাচনটি বাতিল করে দিন। ব্যালটের মাধ্যমে পুননির্বাচন দিন। ইভিএমে ভোটে জালিয়াতি হলেও চ্যালেঞ্জের কোন সুযোগ নেই। ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি টাকায় ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অডিট ট্রেইল ও পেপার ট্রেইল নেই। ভারতের মেশিনে তা আছে। পাঁচ ছয়টি দেশে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে কমিশন বা সরকার প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের কমিশন এবং সরকার প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, উত্তরের বিএনপির প্রার্থী তাবিথের ওপর হামলা হয়েছে। এ্যানিসহ ১৫ জন হামলায় আহত হয়েছে। ঢাকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দেয়া হচ্ছে। কমিশনের ওপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে বলে মনে করি। কমিশনের ওপর সব আস্থা হারিয়ে ভোট ব্যবস্থা চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। এছাড়াও বৈঠকে সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মোঃ রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম, ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×