ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্ত হচ্ছে না ভুটান

বাংলাদেশ ভারত ও নেপালকে নিয়ে হচ্ছে বিবিআইএন

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২২ জানুয়ারি ২০২০

  বাংলাদেশ ভারত ও নেপালকে নিয়ে হচ্ছে বিবিআইএন

এম শাহজাহান ॥ আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ বিবিআইএন পরিকাঠামোতে যুক্ত হচ্ছে না ভুটান। তবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালকে নিয়ে বিবিআইএন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ভুটানের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। পার্লামেন্টে অনুমোদন হলে যে কোন সুবিধাজনক সময়ে এই পরিকাঠামোর মধ্যে দেশটি আসতে পারে বলে জানিয়েছে দিয়েছে ভুটান সরকার। আগামী ২৯-৩০ জানুয়ারি নেপালের রাজধানী কাঠমা-ুতে এ সংক্রান্ত বৈঠক শেষে বিবিআইএন বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে তিন দেশ। জানা গেছে, ভুটান না থাকায় বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) নামে পরিচিত এই পরিকাঠামোর নামটির সংশোধন হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিবিআইএনের পরিবর্তে বিআইএন (বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল) করার কথা ভাবা হচ্ছে। আবার ভুটান এখন না থাকলেও পরবর্তীতে যুক্ত হতে পারে এ আশা রেখে আগের নামটিও বাদ দিতে চান না সংশ্লিষ্টরা। তবে নেপালের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে বিবিআইএন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিবিআইএন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে চারটি দেশ। কিন্তু চূড়ান্তভাবে এই উদ্যোগটির বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে বিবিআইএন বাস্তবায়ন করা গেলে এই অঞ্চলের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বড় সুযোগ তৈরি হবে। বাড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে বিবিআইএন উদ্যোগটির দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বিবিআইএন বৈঠকে যোগ দিতে নেপালে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, ভুটান বিবিআইএনে আপাতত থাকছে না। এ বিষয়ে ভুটান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। তবে পরবর্তীতে যদি ভুটানের জনগণ মনে করে বিবিআইএনে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন, তখন দেশটির সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে। মূলত এ কারণে এটি বিবিআইএন থেকে বিবিআইএন হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পুরো কার্যক্রমটি এখন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাকে ঘিরে বাস্তবায়ন করা হবে। বিবিআইএন উদ্যোগটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও নেপালের বড় আগ্রহ রয়েছে। তিনটি দেশই বিবিআইএনের দ্রুত বাস্তবায়ন চাচ্ছে। এ কারণে আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই বিবিআইএন কার্যকর হবে। প্রসঙ্গত, আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিবিআইএন ১৯৯৭ সালের ১৪ মে গড়ে উঠে। তবে ৮ জুন ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্টের খসড়া তৈরি করে এবং ওই বছরের ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এই খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। এই চুক্তি দ্বারা চারটি দেশের যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন নির্দিষ্ট রুটে চলাচল করতে পারবে এবং সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু চুক্তিটি করার বিষয়ে হঠাৎ-ই বেঁকে বসে ভুটান। পরবর্তী পার্লামেন্টের ওপর ছেড়ে দেয়া হয় বিবিআইএনের বিষয়টি। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্ট থেকে বিবিআইএনের বিষয়টি পুরোপুরি নাকচ করে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সার্কভুক্ত চার দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল একে অপরের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্যিক চাহিদা রয়েছে। রয়েছে ভ্রমণের বিষয়ও। কিন্তু দেশ চারটির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ট্রানজিট সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্পাদনে অতিরিক্ত সময় ও অর্থদ- লাগছে। বিষয়টি মাথায় রেখে চার দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উন্নয়নে চার দেশের সরকার প্রধানরা ট্রানজিট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর শুরু হয় চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। ভারতসহ প্রতিবেশী দেশ ভুটান ও নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট কার্যকর এবং আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের বিবিআইএন চুক্তি করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে বাণিজ্য অনেক বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ভুটান সরে যাওয়ায় আপাতত দেশটিকে বাদ দিয়েই বিবিআইএন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। মোটর ভেহিক্যাল চুক্তির আওতায় ঢাকা থেকে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি যেমন ভারত যাবে, আবার ভারত হয়ে নেপালও যেতে পারবে। এখন ভুটান আপাতত না থাকায় তিনটি দেশই পরস্পরের সড়কপথ ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তির পরপরই এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক চালান গেছে। বিবিআইএন কার্যকর হলে এ অঞ্চলে জলের উৎসের সঠিক ব্যবহার এবং বিদ্যুত, সড়কের পরিবহন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, এই উদ্যোগের আওতায় ভারতের কলকাতা বন্দর, হলদিয়া বন্দর এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দরের ব্যবহার বাড়বে।
×