ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ০-২ ফিলিস্তিন

আবারও ফিলিস্তিনের কাছে কুপোকাত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

আবারও ফিলিস্তিনের কাছে কুপোকাত বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ ভিন্ন ভেন্যু, তবে একই আসর, ১৫ মাস পর আবারও সেই একই প্রতিপক্ষ। আর ফলাফলও আশ্চর্যজনকভাবে হুবহু সেই একই। খোলাসা করা যাক ব্যাপারটা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বশেষ আসরে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর কক্সবাজার স্টেডিয়ামে ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। একই আসরে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি এবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সেই ফিলিস্তিনের কাছে আবারও সেই ২-০ গোলেই হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে এখানে পার্থক্য আছে দুটি। ১৫ মাস আগের সেই আসরে লাল-সবুজরা হেরেছিল সেমির ম্যাচে, আর এবার হারলো গ্রুপপর্বের ম্যাচে। সেবার ফিলিস্তিন দলে ছিল সবসিনিয়র ফুটবলার। অথচ এবারের দলটি বলতে একেবারেই নতুন ও আনকোরা (অলিম্পিক দল এবং ঘরোয়া লীগে খেলা ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত দল)। অথচ বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই বছর দেড়েক ধরে একসঙ্গে খেলছে। এখন শেষ চারে নাম লেখানোটা কঠিন হয়ে গেল ১৮৭ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশের জন্য। যদি তাদের সেমিতে উঠতে হয় সেজন্য ১৯ জানুয়ারি শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর কোন বিকল্প নেই জামালদের। একইসঙ্গে আগামীকাল ১০৬ র‌্যাঙ্কিংধারী ফিলিস্তিনের কাছে লঙ্কানদের হার কামনা করতে হবে স্বাগতিকদের। একেবারে সাদামাটাভাবে মাঠে গড়াল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ষষ্ঠ আসর। শুধু বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধনের দায়সারা আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিপিএল ক্রিকেটের ডামাডোল, বাফুফে যথাসময়ে প্রচারণা না চালানো, অংশগ্রহণকারী দলগুলো তেমন পরিচিত না হওয়া ... সবমিলিয়ে বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শকের সংখ্যা ছিল মাত্র হাজার দুয়েক। তুলনামূলক অনভিজ্ঞ দল হওয়ায় বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে হারাবে বা তাদের সঙ্গে ড্র করবে এই আশাই করেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়েবালি পড়ে। অথচ খেলার প্রথমার্ধে বেশ ভালই খেলেছিল ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার’ দল। বল নিয়ন্ত্রণে তারা টক্কর দিয়েছে সমানে সমান (৫০%-৫০%)। এমনকি কর্নার প্রাপ্তিতেও এগিয়ে ছিল (৩-১) তারা। কিন্তু গোলপ্রাপ্তিতে যে পিছিয়ে পড়ে অযাচিতভাবে। মতিন-সাদরা বারবার আক্রমণ করলেও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোলের সন্ধান পায়নি জেমি ডে’র শিষ্যরা। ম্যাচের শুরুতে তাদের খেলার ফর্মেশন ছিল ৪-১-৪-১। কাউন্টার এ্যাটাকে যে দুটি গোল হজম করেছে বাংলাদেশ, তারজন্য অনায়াসেই দায়ী করা যায় ইয়াসিন খান-রায়হানদের। জাতীয় কিংবা বয়সভিত্তিক ফুটবলের কোন পর্যায়েই ফিলিস্তিনের সঙ্গে জয়টা এখনও অধরা রয়ে গেল বাংলাদেশের। ফিলিস্তিন দলে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন তাদের ‘গালিভার’ খ্যাত দীর্ঘদেহী গোলরক্ষক তৌফিক আবাহামাদ। ম্যাচের ২৯ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাকে গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। ওদাই খারুবের ডিফেন্স চেরা পাস খুঁজে নেয় খালেদ সালেমকে। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার মাথার ওপর দিয়ে ডান পায়ের শটে বল জালে পাঠিয়ে ফিলিস্তিনকে এগিয়ে দেন খালেদ (১-০)। দুই মিনিট পর সমতা ফেরানোর সুযোগ আসে। রায়হানের লম্বা থ্রোয়ে ফিলিস্তিনের এক খেলোয়াড়ের মাথায় লেগে বল পেছনে চলে যায়। দৌড়ে এসে তপু বর্মন যে হেড নেন তা পোস্টের কাছ দিয়ে চলে যায়। বিরতির পরও প্রভাব বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ। এক গোলে এগিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিন রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে। প্রায় সব খেলোয়াড়ই নিচে নেমে আসেন। এই সুযোগে বাংলাদেশের ফুটবলাররাও বারবার আক্রমণ করতে থাকে। অনেকটা অলআউট ফুটবল খেলতে থাকে। সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায়। ৫৮ মিনিটে হজম করে দ্বিতীয় গোল। মোহাম্মদ দারউইশের লং পাস ফেরাতে পারেননি বাংলাদেশের কোন ডিফেন্ডার। মোহম্মদ ইয়াসিন খানের গায়ে লেগে ফিলিস্তিনের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন লাইথ খারোব (২-০)। এরপর মতিন ও মামুনুলকে ওঠিয়ে রবিউল এবং সুফিল নামলেও ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের। আজ মরিশাস-বুরুন্ডি মুখোমুখি গত ২৩ বছরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলের আসর হয়েছে পাঁচবার। দ্বিতীয় আসরে ১৯৯৯ সালে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে অংশ নিয়েছিল ঘানা অনুর্ধ-২৩ ফুটবল দল। সেবার জাপান ফুটবল লীগ একাদশের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল তারা। ২০২০ আসরে প্রায় ২০ বছর পর আবারও এই আসরে অংশ নিচ্ছে আফ্রিকান কোন দেশ। তাও আবার একটি নয়, তিন-তিনটি দেশ। তার দুটিই আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে খেলতে নামছে। বিকেল ৫টায় মরিশাস মোকাবেলা করবে বুরুন্ডিকে। মরিশাসের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১৫১, বুরুন্ডির ১৭২। দুই দেশ এর আগে মাত্র একবারই পরস্পরের মোকাবেলা করেছে। সেটা ২০১৫ সালে। ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে দুই দলের কেউই জেতেনি, আবার হারেওনি। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে। ‘লেস ডুডস’ খ্যাত মরিশাসের র‌্যাঙ্কিং যেমন কম, তেমনি বুরুন্ডির চেয়ে তাদের আন্তর্জাতিক সাফল্যও বেশি। ইন্ডিয়ান ওশেন গেমস ট্রায়াঙ্গুলারে ১০ বার (১৯৪৭, ১৯৪৮, ১৯৪৯, ১৯৫০, ১৯৫১, ১৯৫২, ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৬, ১৯৫৭) এবং ইন্ডিয়ান ওশেন গেমসে দুবার (১৯৮৫ ও ২০০৩) ... সবমিলিয়ে মোট ১২টি সাফল্য আছে তাদের। পক্ষান্তরে বুরুন্ডি জিতেছে মাত্র ৩টি আন্তর্জাতিক ট্রফি। সিই কাফা কাপে তারা চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮০, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে। দুই দলের সর্বশেষ তিন ম্যাচের পরিসংখ্যান ধরলে তাতে প্রতিটিতেই হেরেছে বুরুন্ডি। আফ্রিকা নেশন্স কাপের বাছাইপর্বে ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর উগান্ডার কাছে ৩-০, ১৩ নবেম্বর সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের কাছে ২-০ এবং ১৯ নবেম্বর মরক্কোর কাছে ৩-০ গোলে হারে তারা। একই অবস্থা মরিশাসেরও। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মোজাম্বিকের কাছে ২-০ গোলে ও ৯ অক্টোবর আফ্রিকা নেশন্স কাপের বাছাইপর্বে সাও টমি এ্যান্ড প্রিন্সিপির কাছে ৩-১ গোলে এবং একই আসরের ফিরতি ম্যাচে একই প্রতিপক্ষের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায়। অবিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছেÑ ‘মরিশাসে কোন পেশাদার ফুটবল অবকাঠামোই নেই। ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস। বিশ্বব্যাপী ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে দেশটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। মরিশাস দেশটি দীর্ঘদিন শাসন করেছে হল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। স্থানীয় ফুটবলারদের পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ বংশোদ্ভূতরাও রয়েছেন জাতীয় দলে। স্থানীয় বিভিন্ন দল ছাড়াও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, গ্রিস ও রোমানিয়ার বিভিন্ন ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে দলটির খেলোয়াড়দের। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অংশ নেয়া অতিথি দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শেষে ঢাকায় পা রাখে বুরুন্ডি।
×