ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দরকার সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

দরকার সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা

ঘটছে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা। আর আমাদের বিস্মিত হওয়াটাও পৌনঃপুনিক হারে বেড়েই চলে। কারণ এক এলাকায় ধর্ষণের ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই সংবাদ পত্রের পাতাজুড়ে কিংবা গণমাধ্যম কেঁপে ওঠে নতুন আরেক ধর্ষণের খবর খবরে। এ কেমন সমাজে বাস করি, মনের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক করে। তারপরও ঘটনা থেমে থাকে না। কেন বাড়ছে ধর্ষণ! কেনইবা মানুষ হারাচ্ছে নিজের নৈতিক মূল্যবোধ? জঘন্যতম এ অপরাধের প্রবণতা কমছে না। নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন একটি রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অহরহ। তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়। এ ছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ জীবনের যে কোন সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয়, এ ধরনের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। আসলে মোটেই তা নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। ধর্ষণ কিংবা যৌন নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইন যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির দ্রষ্টান্ত তার চেয়ে অনেক কম। অপরাধ করে পার পাওয়া যায় এ ধরনের বিশ্বাস থেকে অপরাধীরা অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়। এটা শুধু পেশাদার অপরাধীদের ক্ষেত্রে নয়, যে কোন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। তাই ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাশ টেনে ধরার জন্য প্রথম কর্তব্য এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে গতি সঞ্চার করা। অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে। একটার পর একটা ধর্ষণের খবরের একই তালে যদি একটার পর একটা শাস্তির খবরও নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ধর্ষণপ্রবণতা হ্রাস পাবে বলে বিশ্বাস করা যায়। সে জন্য উল্লিখিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সুশাসন তথা আইনের শাসন মজবুত করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তবে ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুধু আইনের শাসনই যথেষ্ট নয়, সামাজিক শক্তিরও প্রবল সমর্থন প্রয়োজন। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে নারীর মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা শুধু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক শক্তিগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধর্ষণের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে শুধু সরকারকে নয়, গোটা সমাজকে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে ব্যক্তি, পরিবার, পাড়া-মহল্লাসহ গোটা সমাজকে সোচ্চার হতে হবে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধসহ সাংস্কৃতিক পরিম-লেও নানাভাবে এই ধরনের মানসিকতার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। পরিবার-সমাজ এবং রাষ্ট্রে কোথাও ধর্ষক ও নারী নির্যাতনকারীর প্রশ্রয় থাকা উচিত নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা থেকে
×