ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ মিলের একাধিক মালিকের নামে বরাদ্দ

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৫ জানুয়ারি ২০২০

বন্ধ মিলের একাধিক মালিকের নামে বরাদ্দ

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ চলতি আমন মৌসুমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযানকে সামনে রেখে মিলারদের বরাদ্দ নিয়ে কানামাছি খেলা চলছে ময়মনসিংহে। অভিযোগ উঠেছে, বন্ধ মিলসহ একই ব্যক্তির একাধিক মিলের নামে দেয়া হয়েছে খেয়াল খুশিমতো বরাদ্দ। এসব নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির নেপথ্যে রয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নামে মিলারদের মোটা অঙ্কের লেনদেন ! খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই একটি সিন্ডিকেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সহায়তায় এই কারসাজি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর। তার দাবি বঞ্চিত মিল মালিকরাই এসব অপপ্রচার চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর জানান, কিছু ত্রুটি ছিল, সেটি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক সংশোধন করে দিয়েছেন। ময়মনসিংহ খাদ্য বিভাগের এসব কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের তদন্ত দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি কেলেঙ্কারি ঘটেছে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায়। এবার খাদ্যশস্য কেনাকাটায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে এই উপজেলায়। তারাকান্দা উপজেলা রাইস মিল মালিক সমিতির পক্ষে ছয়জন মিল মালিক এ নিয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগপূর্বক তদন্ত দাবি করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেছেন। সূত্র আরও জানায়, তারাকান্দা উপজেলার দয়ারামপুর এলাকার শহীদুল্লা ম-লের মালিকানাধীন মেসার্স সেজুতি রাইস মিল, গোপালপুর এলাকার আবুল হাশেমের মালিকানাধীন মেসার্স জুমিনার রাইস মিল, রনকান্দা এলাকার সাইফুল হক ম-লের মালিকানাধীন মেসার্স তালুকদার রাইস মিলসহ একাধিক বন্ধ মিলের নামে দেয়া হয়েছে বরাদ্দপত্র। সেজুতির নামে ১৬ মে.টন, জুমিনারের নামে ১৫ মে.টন ও তালুকদারের নামে দেয়া হয়েছে ১৭ মে.টন চালের বরাদ্দ। তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ এলাকার রেজাউল রহমান সিনহার মালিকানাধীন বন্ধ মেসার্স সবুজ দিগন্ত রাইস মিলের নামে ১৬ মে.টন, ডৌহাতলীর খবির উদ্দিনের মালিকানাধীন মেসার্স বাবুল অটো রাইস্ মিলের নামে ১৭ মে.টন চালের বরাদ্দপত্র দেয়া হয়েছে! এই উপজেলায় অন্তত এক ডজন বন্ধ মিলের নামে দেয়া হয়েছে চালের এই বরাদ্দ! কেবল তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে একই মালিকানার মিলের বিপরীতে দেয়া হয়েছে একাধিক বরাদ্দপত্র। মিলারদের সূত্র জানায়, তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার হুমায়ুন কবীরের মালিকানাধীন মেসার্স মা অটো রাইস মিল পেয়েছে রেকর্ড ছয়টি বরাদ্দ। একই মিলের নামে আতপ ও সেদ্ধ চাল বরাদ্দ দেয়ার বিধান না থাকলেও এই ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙ্গে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মা অটো রাইস মিলকে দেয়া হয়েছে সেদ্ধ ও আতপ উভয় চালের নজিরবিহীন বরাদ্দ ! তারাকান্দার গজহরপুর এলাকার হুমায়ুন কবীরের মা অটো রাইস মিলের নামে ১৫৪ মে.টন আতপ চালের বরাদ্দপত্র দেয়া হয়েছে। একই এলাকায় অবস্থিত মা অটো রাইস মিল-২ এর নামে ১৯৩ মে.টন, মা এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ রাইস মিল-২,১৬৬ মে.টন, মা এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ রাইস মিলের নামে ২৭৬ মে.টন, একই মালিকের অনিক অটো রাইস মিলের নামে ২৭৬ মে.টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেদ্ধ চাল। ভুয়া লাইসেন্সের মাধ্যমে এভাবে একই ধরনের অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বরাদ্দ বাগিয়ে নিয়েছে কমর আগরওয়ালার মালিকানাধীন মেসার্স কেডিএল অটো রাইস মিল, একেএম জহিরুল হক জুয়েলের মালিকানাধীন মেসার্স ফিফো অটো রাইস মিল, নিপন চন্দ্র সরকারের মালিকানাধীন শিল্পী অটো রাইস ও নিউ শিল্পী রাইস মিল। তারাকান্দা উপজেলায় এবার ৩৬ মিলারের সঙ্গে জেলা খাদ্য বিভাগ ৮২৪ মে.টন চাল সরবরাহ দেয়ার চুক্তি করেছে। অভিযোগ ও গুঞ্জন উঠেছে, বন্ধ ও একই মালিকের একাধিক মিলের সঙ্গে এ রকম চুক্তির নেপথ্যে লেনদেন হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। প্রচার রয়েছে ভুয়া প্রতিটি মিলের সঙ্গে এ রকম চুক্তিতে ২ লাখ টাকা করে লেনদেন করতে হয়েছে। চুক্তির সময় বেশকিছু প্রকৃত মিল বাদ পড়ায় ও অনিয়ম নিয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করার পর ফাঁস হয়ে পড়ে এই কেলেঙ্কারি। কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট ঘটনা ধামাচাপা দিতে এখন নানা মহলে দৌড়ঝাপ করছে। জেলায় এবার ২৭ হাজার ৬০৯ মে.টন ধান, ২০ হাজার ১৫৭ মে.টন সেদ্ধ ও ১ হাজার ৪১৪ মে.টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫০০ মে.টন ধান ও ১২০০ মে.টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২০ নবেম্বর ও ২০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ধান ও চাল কেনার অভিযান শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।
×