ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

কাগজের কাপ তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: ১২:১৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

কাগজের কাপ তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা

২০০২ সালের কথা। আইইউবি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় ইনডেন্টিং ব্যবসা, কমিশন এজেন্ট হিসেবে বিদেশী নানা কোম্পানির পণ্যের স্থানীয় এজেন্ট হন। ছাত্র অবস্থায় ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে নানান সরবরাহের কাজে অংশ নেন। ব্যবসা চালালেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। আইউবি থেকে পাস করে বের হয়ে যখন সহপাঠীরা চাকরি জীবন শুরু করার কথা ভাবছেন তখন উদ্যোক্তা হবার বাসনাটি তীব্র অনুভূতিতে পরিণত হলো। ব্যবসা করতে থাকলেন ছোট পরিসরে। মাকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই কাগজ বা পেপার কাপের সঙ্গে পরিচয়। আইডিয়াটা মনে ধরে। ইন্টারনেট ঘাঁটলেন। সেই রাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। পেপার কাপের ব্যবসা বুঝতে গেলেন মালয়েশিয়া। চেষ্টা-তদবির করে একটি কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়াও দেখে নিলেন। তারপর যন্ত্রপাতির খোঁজে ছুটলেন চীনে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রপাতি দেখার পাশাপাশি ১৫ দিনের প্রশিক্ষণও নিলেন। দেশে ফিরে ব্যাংকঋণের আবেদন করলেন। প্রথমবার ব্যর্থ। তবে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সফল হলেন। ঋণপত্র খুলে আমদানি করলেন যন্ত্রপাতি। তেজগাঁওয়ে ভাড়া করা ছোট কারখানায় যাত্রা শুরু করল কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। আর পেছনের মানুষটি হচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান। ২০১২ সালের মে মাসে কেপিসির উৎপাদন শুরু হয়। দেশের মানুষের জীবন মানের উন্নতি হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সেটা অবশ্যই হবে পরিবেশবান্ধব। তিন জন কর্মী সঙ্গে নিজে একজন, চার জনার কর্মী বাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন ডিস্পোসিবল পেপার কাপ বা কাগজের তৈরি কাপ উৎপাদনের ফ্যাক্টরি। শুরু হলো কচঈ নাম দিয়ে উদ্যোক্তার স্বপ্ন ভরা চোখে দৃঢ় পথ চলা। বর্তমানে কেপিসির কারখানায় দিনে ৩ লাখ ৬০ হাজার পিস পেপার কাপ তৈরি হয়। কয়েকটি ব্র্যান্ড এসব কাপ চা-কফি, কোমল পানীয়, দই ও আইসক্রিম বিক্রিতে ব্যবহার করে। অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নিজেদের কর্মী ও গ্রাহকদের চা-কফি ও পানি পরিবেশনের জন্য পেপার কাপ তৈরি করিয়ে নেয়। কেপিসির কর্পোরেট গ্রাহকের তালিকায় আছে পেপসি, প্রাণ, এসিআই, ইউনিলিভার, নেসলে, ইস্পাহানি, ইগলু, ডানো, বসুন্ধরা, শেভরন, এ্যাপোলো হাসপাতাল, সোনারগাঁও হোটেল, বেক্সিমকোর মতো ২৮০টি প্রতিষ্ঠান। খোলা বাজারেও পেপার কাপ বিক্রি করে তারা। সব মিলিয়ে মাসে ১ কোটি ২০ লাখ কাপ বিক্রি হয়। তবে ৯০ শতাংশই ব্র্যান্ড ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে যায়। শুরু থেকেই ভাল সাড়া পাচ্ছে কেপিসি। উৎপাদন শুরুর পরের মাসে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান শেভরন প্রতি মাসে দুই লাখ পিস কাপের ক্রয়াদেশ দেয়। প্রতি পিসের দাম ছিল ২ টাকা ২০ পয়সা। নিজেদের কর্মীদের পানি পানের জন্য এসব কাপের ক্রয়াদেশ দেয় শেভরন। কেপিসি বর্তমানে ১১ ধরনের কাগজের কাপের পাশাপাশি প্লেট বা থালা ও বাটি তৈরি করছে। প্রতিটি কাপ ৮০ পয়সা থেকে ৮ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, দুই থেকে চার টাকায় প্লেট এবং তিন থেকে চার টাকায় বাটি বানিয়ে দেয় কেপিসি। তিনি বলেন, ‘আমাদের পেপার কাপগুলো শতভাগ পরিবেশবান্ধব। এই কাপ মাটিতে ফেলে দেওয়ার ২১ দিনের মধ্যে পুরোপুরি পচে গিয়ে জৈব সারে পরিণত হয়।’
×