ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা নওফল হায়দার

ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো শুরু

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১১ জানুয়ারি ২০২০

ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো শুরু

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে (ফারুক রূপায়ণ টাওয়ার) ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ২২ তলা ভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ও ক্রমেই সেটি অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জনের মৃত্যু হয় এবং ৭০ জন আহত হন। দুরন্ত টিভি ও এফএম রেডিও টুডের কার্যালয় এফআর ভবনের পাশে হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের সময় এ দুটি সম্প্রচার মাধ্যমে সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন দ্রুত অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের ভেতর আটকা পড়া অনেকে ভবনের কাঁচ ভেঙ্গে ও রশি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন।এ সময় কয়েকজন নিচে পড়ে গিয়ে নিহত হন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। একই সঙ্গে বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা উদ্ধার কাজে যোগ দেন। এছাড়া ঘটনাস্থলে ৪০-৫০টি এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবা প্রদান করা হয়। বেলা ৩টার দিকে উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার শুরু হয়। এছাড়াও হেলিকপ্টার দিয়ে পাশের গুলশান-বনানী লেক থেকে পানি সংগ্রহ করে ভবনে ছিটানো হয়। বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ ব্যক্তি নিহত হন যার মধ্যে একজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক রয়েছেন। বেশ কিছু মানুষ ভবন থেকে লাফ দিতে গিয়ে মৃতুবরণ করেন। এছাড়াও ৭৩ জন আহত হন এবং শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও এ্যাপোলো হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। এফআর টাওয়ারের অগ্নিকান্ড আমাদের সামনে নিয়ে আসে যে আমরা কতটা দুর্বল এই সমস্যা মোকাবেলায়। জাতীয় কোন ডিজাস্টার হলে আমরা সেটা মোকাবেলা কোনভাবেই করতে পারব না। এখন থেকে সঠিকভাবে ও মানসম্মত পরিকল্পনা ও বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্রিয় হওয়া উচিত। আধুনিক জীবনে যেটি সব চেয়ে বড় প্রয়োজন সেটি হচ্ছে নিরাপদ পরিবেশ। যা অফিস, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে নিশ্চিত করা দরকার সবখানে। নিরাপদ পরিবেশের কথা চিন্তা করলে যেটি প্রথমেই সামনে আসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন সিকিউরিটি এবং সেফটি সরঞ্জাম। বিগত বছরগুলোতে দেশে বড় বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর এর ভয়াবহতা যে কি নির্মমতা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে। বর্তমানেও কি এর ভয়াবহতা রোধ করা গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে ১৯ হাজার ৬শ’ ৪২টি। এতে আনুমানিক ক্ষতি প্রায় ৩শ’ ৮৬ কোটি টাকা। আর এই সময়ে নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়েছে ১৩০ জন আর আহত হয়েছেন ৬৬৪ জন। রাজধানী, বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে আগুনে পুড়ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, অফিসসহ অন্যান্য স্থাপনা। সচেতনতা ও অগ্নিকা-ের কারণ চিহ্নিত করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রশিক্ষণসহ নির্বাপণের সরঞ্জাম রাখলে আগুনের ভয়াল থাবা থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। ক্রেতাদের চাপে রফতানিমুখী শিল্পকারখানার বেশিরভাগে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক ভবন, প্রতিষ্ঠান এখনও পিছিয়ে আছে। দশ বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, কেবল রাজধানীতে এই সময়ে উঁচু ভবনের হাড় বেড়েছে ৫১৪ শতাংশ। এসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কতটুকু জোরদার করা গেছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বর্তমানে নির্মিত সকল উচ্চ ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সম্পদ ও নিরাপত্তার স্বার্থে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সবার নৈতিক দায়িত্ব বলে ইসাব মনে করে। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারীভাবে সিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মিলছে এর সুফলও। এই ব্যবস্থা পুরোপুরি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি নিশ্চিত জীবনের পথে আমরা আরও এগিয়ে যাবও। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার এই পথে অগ্নিনিরাপত্তা ও সিকিউরিটি ব্যবস্থা নিশ্চিতে সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে কাজ করতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। অগ্নিনিরাপত্তা ও সিকিউরিটি ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারাও এগিয়ে এসেছেন। এখাতের ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ সংগঠন ইলেকট্রনিক্স সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)। যা ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বছর ৭ম বারের মতো তিন দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-২০২০-এর আয়োজন করা হয়েছে। যা আগামী ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি-২০২০, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের এক্সপোাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, তাইওয়ান, চীন, ভারতসহ ২৫ টি দেশের ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটির বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এক্সপোতে মোট স্টল থাকছে ৭০টি। মেলার কো-পার্টনার হিসেবে থাকছে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এবং এনএফপিএ-ইউএসএ। ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি ব্যবস্থার বিষয়ে সম্যক ধারণা দেয়ার আদর্শ স্থান হয়ে উঠবে এবারের এক্সপো। জনসাধারণ এই মেলা থেকে জানতে পারবেন আন্তর্জাতিক বিশে^ ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি খাতের উদ্ভাবিত সর্বশেষ প্রযুক্তি ও পণ্যের বিষয়ে। এসব ব্যবহারের জ্ঞান অর্জন ছাড়াও মেলা থেকে অগ্নিনির্বাপণ ও সিকিউরিটি পণ্যের স্থাপন বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে এই মেলা থেকে। মেলায় অগ্নিনির্বাপণের মহড়া থাকবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে। এছাড়া এবারের এক্সপোতে ৪টি বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে থাকছে : Electrical / Gaseous Hayard & safety, Safety & Security Budget Awareness & Importance of AMC in Engineering System Management, Cyber Security Awareness & smart City Automation এবারের এক্সপোতে নতুন আয়োজন হচ্ছে রেসিডেন্সিয়াল, কমার্শিয়াল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্থাপনায় যারা সেফটি ও সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট মান সম্পূর্নভাবে স্থাপন করেছে তাদের মধ্য থেকে সংশ্লিষ্ট বিচারকম-লীর দ্বারা ৩ টি ক্যাটাগরিতে মোট প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে। ‘আমরা নিরাপত্তায় সচেতন’ স্লোগান ইসাবের মূল লক্ষ্য। দুটি ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট প্রদর্শিত হবে : সিকিউরিটি সলিউশন্স: সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম,এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম,কারপার্কিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম,আইটি এ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি, ইন্টার ডোর ডিটেকশন সিস্টেম, মেটাল ডিটেকশন এ্যান্ড ব্যাগেজ স্ক্যানার, পাবলিক এড্রেস সিস্টেম, ইলেকট্রিক ফেন্সিং সিস্টেম। ফায়ার সেফটি সলিউশন্স: ফায়ার এস্টিংগুইসার, ফায়ার ডিটেকশন এ্যান্ড এলার্ম সিস্টেম, ফায়ার পাম্প সিস্টেম, ফায়ার হাইড্রান্ট এ্যান্ড স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম,গ্যাস সাপ্রেসন সিস্টেম,ফায়ার রেটেড ডোরস, ইমারজেন্সি লাইটিং সিস্টেম, প্যাসিভ ফায়ার প্রটেকশন প্রডাক্ট, রেসকিউ এ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোডাক্ট, ফায়ার প্রোটেকশন ভালবস এ্যান্ড ফিটিং, ফায়ার প্রোটেকশন পাইপ এ্যান্ড ফিটিং। এই মেলায় ভিজিটর হিসেবে ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে হলে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। , ইমেইল: [email protected], ফোন করেও জানা যাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে +৮৮০১৭১১১৫৮০১৩।
×