ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েকটি মশাবাহিত রোগ

প্রকাশিত: ১২:২১, ৭ জানুয়ারি ২০২০

কয়েকটি মশাবাহিত রোগ

মশা নিজে কোন রোগ তৈরি করে না। মশা যদি কোন জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত অবস্থায় মানুষকে কামড় দেয়, আর সেই জীবাণু যদি রক্তে প্রবেশ করে, তাহলেই শরীরে রোগ হতে পারে। এই জীবাণু হতে পারে কোন ভাইরাস কিংবা অন্য কোন পরজীবী। মশাবাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, গোদরোগ আর হালের আতঙ্ক চিকুনগুনিয়া অন্যতম। এছাড়া মস্তিষ্কে সংক্রমণ (ঊহপবঢ়যধষরঃরং), পীতজ্বর (ণবষষড়ি ঋবাবৎ) এই দুইটি অসুখও মশার কারণে ছড়াতে পারে। ১। ডেঙ্গু : ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। সাধারণত এডিস মশা এই ভাইরাসের বাহক। ধারণা করা হয় এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে রক্তনালী ভঙ্গুর হয়ে যায়, বিভিন্ন রক্ত কোষ কমে যায়, যকৃত ঠিকমত কাজ করে না। ডেঙ্গুজ্বর অনেকসময় লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও হতে পারে। তবে এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণগুলো হচ্ছে উচ্চমাত্রার জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাথা, পিঠে তীব্র ব্যথা, কাশি, বমি। সাধারণত (সব সময় নয়) জ্বর চলে গেলে শরীরে লাল দানা উঠতে পারে। আর যদি ডেঙ্গুজ্বরের রোগীর শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয় তখন হাত, পা ঠাণ্ডা হতে পারে, নাড়ি দুর্বল হয়ে এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে। আরও খারাপ অবস্থায় রোগী ‘শকে’ চলে যেতে পারে। ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য জ্বর, ব্যথা কমানো আর শরীরের পানি ও লবণের মাত্রা ঠিক রাখা। ২। চিকুনগুনিয়া : চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়। ডেঙ্গুর সাথে এর বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। তবে এই রোগে শরীর ও গিঁটে ব্যথা বেশি তীব্র হয়, অনেক সময় গিঁটের নড়াচড়া কঠিন হয়ে যায়। প্রচণ্ড মাথাব্যাথা, শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, বমি ভাব বা বমি, মাংস পেশিতে ব্যথাও এই রোগের লক্ষণ। ডেঙ্গুর তুলনায় এখানে শরীরে লাল দানা কম হয়। ইদানীং ঢাকার বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু চিকুনগুনিয়া রোগী পাচ্ছেন যারা ডায়রিয়া, শরীর ধনুকের মতো বেঁকে যাওয়া, পেতে ব্যথা, মুখে ঘা, অজ্ঞান হয়ে আসছেন। এই রোগেও জ্বর, ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার যথেষ্ট। বর্তমানে আইইডিসিআর এবং বিএসএমএমইউ চিকুনগুনিয়ার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে গবেষণা করছে। ৩। ম্যালেরিয়া : মহিলা এনোফিলিস মশা যদি প্লাজমোডিয়াম নামের পরজীবী দিয়ে আক্রান্ত হয়, আর সেই পরজীবী কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে, তবেই ম্যালেরিয়া হয়। এই জীবাণু যকৃততে সংখ্যা বৃদ্ধি করে, আর পরবর্তীতে লোহিত কণিকায় ঢুকে ভেঙে ফেলে। উচ্চমাত্রার জ্বর (অনেক সময় ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা পরপর) সঙ্গে শরীর ব্যথা, পেটে ব্যথা হতে পারে। রক্ত কমে যায়, যকৃত, প্লীহা ফুলে যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে জন্ডিস, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, ‘শক’, অজ্ঞান এসব হতে পারে। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগের সঙ্গে দেশের ভৌগোলিক অবস্থান চিন্তায় আনা হয়। ম্যালেরিয়া নাশক ওষুধে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। ৪। গোদরোগ : এর আরেকনাম ফাইলেরিয়াসিস। এটি কয়েক ধরনের কৃমি জাতীয় জীবাণু দিয়ে হয়। মশার (এবং কিছু মাছি) কামড় দিয়ে এই রোগ ছড়ায়। এটি শরীরের লসিকাগ্রন্থি আক্রান্ত করে। অনেকসময় পা, হাত ফুলে মোটা হয়ে যায়। এছাড়া কান, চোখ, অণ্ডকোষ, চামড়াতলেও এই কৃমি ক্ষতি করে থাকে। পাঠকদের জন্য কিছু বার্তা ১। এই রোগগুলো প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত টিকা আবিষ্কার হয়নি। মশা নির্মূল করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ২। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ভ্রমণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ওষুধ সেবন করা উচিত। ৩। যে কোন ভাইরাসের জ্বরে শরীরে ব্যথা, লাল দানা হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। ৪। দ্রুত ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ, যেমন ডাই-ক্লোফেনাক (ভোলটালিন) ব্যবহার করবেন না। এগুলো প্রচণ্ড বিপজ্জনক হতে পারে। ৫। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াতে এন্টিবায়োটিকের কোন ভূমিকা নেই। ৬। প্রচুর পানি পান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম আর মশারি ব্যবহার খুবই জরুরী। ডাঃ আহাদ আদনান রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা। ০১৯১২২৪২১৬৮
×