ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৫ জানুয়ারি ২০২০

গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্ভাব্য আট কারণে ২০১৭-১৮ বছরের তুলনায় গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। বেড়েছে প্রাণহাণিও। ’১৯ সালে ৪ হাজার ৭০২ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২২৭ জন। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৯৫৩। এর অর্ধেকই পথচারী। অর্থাৎ গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যু বেড়েছে। এসব মৃত্যুর পেছনে বাস ও ট্রাক দায়ী। জেলাভিত্তিক দুর্ঘটনার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ, দ্বিতীয় ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাফিক আইন না জানা ও জনসচেনতার অভাবেই পথচারী মৃত্যু বাড়ছে। যদিও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ধরনের মৃত্যু অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। যদিও নিসচার প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মহাসড়কে চলা নিষিদ্ধ যানবাহনকে প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ’১৯ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসচা)। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত দুর্র্ঘটনার খবর নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন নিসচা সভাপতি ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ’১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও তা এখনও লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। তিনি জানান, অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণের অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই এসব দুর্ঘটনা হয়েছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়, ’১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৬৬১ পথচারী মারা গেছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৫০ শতাংশ। এদের কেউ গাড়ি চাপায়, কেউ পেছন থেকে ধাক্কা খেয়ে, কেউ বা গাড়ি উল্টে বা কেউ বা খাদে পড়ে মারা গেছেন। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর না হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘গত বছরের ১ নবেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হলেও তা সম্ভব হয়নি। নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। নতুন পরিবহন আইন নিয়ে চালকদের মধ্যে ভুল ধারণা দিয়েছে মালিকরা।’ নিসচা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ’১৭ ও ’১৮ সালের চেয়ে ’১৯ সালে দুর্ঘটনায় মৃত ও হতাহতের সংখ্যা বেশি। ’১৮ সালে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪৩৯ ও ’১৭ সালে ৫ হাজার ৬৪৫। ’১৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২২৭ জন। ২০১৯ সালে ২০১৮ সালের তুলনায় শতকরা ১৫ শতাংশ বেশি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শতাংশের হিসাবে যা ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ বেড়েছে। নিসচা জানায়, ’১৯ সালে ভারি যানবাহন যেমন-বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান মিলিয়ে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব যানবাহন ২০১৯ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৯ শতাংশের জন্যই দায়ী। এছাড়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা শতকরা ১৯ শতাংশ। প্রতিবেদন বলা হয়, জেলাভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে এগিয়ে ময়মনসিংহ জেলা। এরপর ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, দিনাজপুর ও কুমিল্লা জেলায় উল্লেখযোগ্য সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে রেলপথে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৬২ এবং এতে নিহত হয়েছেন ১৯৮। আহত হয়েছেন ৩৪৭ জন। নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০, এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৪ ও আহত ১৫৭। এছাড়া নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ১১০। তবে ’১৯ সালে আকাশপথে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ সময় নিসচার মহাসচিব সৈয়দ এহসানুল হক কামাল উপস্থিত ছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বিগত ২ বছরের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। নৌ-সড়ক ও রেলপথে দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ১১০ জন। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনগুলো হলো- বাস ৯৯২, ট্রাক ১ হাজার ৩৩, মোটরসাইকেল ১ হাজার ৯৮, কাভার্ড ভ্যান ১৬০, মাইক্রোবাস ১৫৮, নসিমন ৮৩, কার ৭৯টি ও অন্যান্য (সিএনজি/ভ্যান/পিক-আপ) ২ হাজার ১৭৮। এসব যানবাহনের মোট নিহত চালক হলো এক হাজার ১৯০। নিহতের মোট ২২ শতাংশ চালক। তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ময়মনসিংহ জেলায়। সেখানে ২১১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৮৮, আহত ২৬৬। এরপর ঢাকা জেলায় ৩০৯ দুর্ঘটনায় ৩৩৫ নিহত ও আহত ৩২৭ জন। এরপরই চট্টগ্রাম জেলায় ২২৬ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯৯ ও আহত ২৫৫। শরীয়তপুরে ৯ দুর্ঘটনার বিপরীতে নিহত হয়েছে ৩৫, আহত ১০। আর সবচেয়ে কম নিহত হয়েছে ঝালকাঠি জেলায়। সেখানে ১২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন ও আহত ১২।
×