ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনস্বার্থ মামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৫ জানুয়ারি ২০২০

জনস্বার্থ মামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, জনগণের মানবাধিকার রক্ষা, সুশাসন ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জনস্বার্থের মামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মানবাধিকার বিষয়ক বিচার ব্যবস্থায় জনস্বার্থের মামলা দেশীয় মডেল হিসেবে বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। শনিবার সুপ্রীমকোর্ট অডিটরিয়ামে সুপ্রীমকোর্ট অনলাইন বুলেটিন (স্কব) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘স্ট্যান্ডিং ইন পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন : এ্যান আউটলাইন’ শীর্ষক সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও স্কব এডিটরিয়াল কমিটির সদস্য এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে আলোচনায় অংশ নেন আপীল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হসান, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ প্রমুখ। প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৯৬ সালে ড. মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ মামলা দিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট জনস্বার্থ মামলার বিষয়ে বিচারিক ভূমিকার পরিধি বাড়ানোর যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, জনসাধারণের ভুল, জনস্বার্থে ক্ষত ও সাংবিধানিক বিতর্ক সমাধানে জনস্বার্থ মামলা সাধারণ মানুষের নাগালে একটি কার্যকর বাহন। সুবিধাবঞ্চিত জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় জনস্বার্থের মামলা এখন সহায়ক। মানবাধিকার বিষয়ক বিচার ব্যবস্থায় জনস্বার্থের মামলা দেশীয় মডেল হিসেবে বিচার বিভাগকে উন্নত করতে সহায়তা করে।‘এ পদ্ধতি অত্যন্ত প্রশংসিত। তবে পাবলিক তোষণ অবশ্যই বিচারকদের প্রভাবিত করবে না এবং ব্যক্তিগতভাবে অতিরঞ্জিত না হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়ার পবিত্রতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে হবে। জনস্বার্থ মামলায় জনগণের মঙ্গলের জন্য আইন ও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের সক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের জাতির সার্বিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে হবে,’ যোগ করেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমরা যখন কোন বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দেই, অনেকেই ভাবে যে, আমরা (উচ্চ আদালত) ওভার স্টেপিং করছি। আসলে তা না। তাদের বুঝতে হবে পরিস্থিতির প্রয়োজনেই আমরা স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দিয়ে থাকি।’ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী মূলপ্রবন্ধে জনস্বার্থ মামলার বিবর্তন তুলে ধরেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং মামলা করার আইনগত অধিকার নিয়ে বৃটিশ ও ভারতের উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন তিনি। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মৌলিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রাপ্তির পথে মামলা করার আইনসঙ্গত অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জনস্বার্থ মামলায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং মামলা করার আইনসঙ্গত অধিকার নির্ণয়ে সুপ্রীমকোর্টের ইতিবাচক অবস্থান বিভিন্ন মামলার সূত্র উল্লেখ করে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারিক সক্রিয়তার ফলে জনগণ জনস্বার্থ মামলায় প্রতিকার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে তিনি জনস্বার্থ মামলার ব্যাপক আলোচলা করতে গিয়ে সংক্ষুব্ধ না ব্যক্তি এবং মামলা করার আইনসঙ্গত অধিকার নিয়ে ইংলিশ ও ভারতের উচ্চ আদালতের একাধিক মামলায় প্রদত্ত সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেন। দীর্ঘদিন পর ইংল্যান্ডে ১৯৮১ সালে সুপ্রীমকোর্ট এ্যাক্টের আওতায় যে কোন ব্যক্তি জুডিসিয়াল রিভিউ এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন অধিকার পায় যদি তার কার্যকর স্বার্থ থাকে। ভারতে ১৯৭৬ সালে মুম্বাই কামগার সাবা বনাম আব্দুল ভাই মামলায় বিচারপতি সিভি আর কৃষ্ণা আই আর জনস্বার্থ মামলা প্রবর্তন করেন। এবং ১৯৮২ সালে এসপি গুপ্তা বনাম প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া মামলায় জনস্বার্থ মামলা চূড়ান্ত স্বীকৃতি পায়। জনস্বার্থ মামলার উক্ত অগ্রগতি পাকিস্তানে ১৯৮৮ সালে বেনজীর ভুট্টো বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান মামলায় প্রতিফলিত হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোট সর্বপ্রথম কাজী মোখলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ মামলায় জনস্বার্থ মামলার ধারণাকে গ্রহণ করে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বিস্তৃতসীমা নির্ধারণ করে ৭টি সার্বজনীন তত্ত্ব চূড়ান্ত করে দেয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অনুচ্ছেদ ১০২ এর অধীন কোন পিটিশনারকে শুনতে হাইকোর্টের সম্পূর্ন এখতিয়ার থাকবে। গুরুতর সাংবিধনিক প্রশ্ন যা মৌলিক অধিকারের প্রতি হুমকি তা বিবেচনায় আদালত সংক্ষুব্ধ পিটিশনারকে শুনবে। যদি মৌলিক অধিকারের বিষয় জড়িত থাকে সেক্ষেত্রে তর্কিত বিষয় পিটিশনারের ব্যক্তিগত স্বার্থকে আঘাত না করলেও আদালত পিটিশনের বিবেচনায় নিবেন এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সংখ্যায় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, শুধু মিডিয়ার সামনে নিজেকে উপস্থাপনের জন্যই কিছু আইনজীবী জনস্বার্থের মামলার করছেন। এ ধরনের আইনজীবীরা মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়ার সামনে গিয়ে হাজির হন। এটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) এখন পাবলিসিটি ইন্টারেস্ট লিটিগেশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। জনস্বার্থের মামলা পরিচালনার নামে যারা নিজেদেরকে মিডিয়ায় উপস্থাপনে ব্যস্ত তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, কিছু আইনজীবী মামলা করেই মিডিয়ার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে মরিয়া হয়ে যায়। এতে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট হয়। জনস্বার্থমূলক মামলা শুনানি গ্রহণের ক্ষেত্রে বেঞ্চগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার।
×