ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৮ শতাধিক চলচ্চিত্রের অভিনেতা পারভেজ চৌধুরী গাঙ্গুয়া

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২ জানুয়ারি ২০২০

৮ শতাধিক চলচ্চিত্রের অভিনেতা পারভেজ চৌধুরী গাঙ্গুয়া

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা পারভেজ চৌধুরী গাঙ্গুয়া। পর্দায় তার উপস্থিতি ভয়ঙ্কর মানুষ হিসেবে। পর্দা তিনি মন্দ সব কাজকর্ম করে বেড়ান। শেষ দৃশ্যে নায়কের হাতে মার খেয়ে করুণ পরিণতি বরণ করেন। ভরাট গলার খল চরিত্রে গাঙ্গুয়া অনবদ্য এক অভিনেতার নাম। চলচ্চিত্রে তার শুরুটা মারপিট দিয়ে। নাম ছিল পারভেজ চৌধুরী। এরপর আসেন অভিনয়ে। এক সময় ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রয়াত অভিনেতা জসিম তার নাম দেন গাঙ্গুয়া। সেই নামেই খ্যাতি পান। ৪৩ বছরের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন আট শতাধিক চলচ্চিত্রে। সম্প্রতি ফিল্ম ক্লাবের নির্বাচনে ভোট দিতে বিএফডিসিতে এসেছিলেন তিনি। ভোট দেয়া শেষে নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেন। গাঙ্গুয়া বলেন, এখন বেকার জীবন পার করছেন। কেউ ডাকে না এখন চলচ্চিত্রের জন্য। সংসার চালাতে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেজ শো করে দিন পার করছেন। গাঙ্গুয়া আরও বলেন, ৪৩ বছর ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে আছি। অভিনয় করেছি আট শতাধিক চলচ্চিত্রে। উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘মাস্তান রাজা’, ‘কালিয়া’, ‘প্রেম গীত’, ‘নূরা পাগলা’, ‘জ্যান্ত কবর’, ‘ক্ষুধার জ্বালা’, ‘লাল বাদশা’, ‘ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম’, ‘তোকে ভালবাসতেই হবে’ প্রভৃতি।। এখন আর চলচ্চিত্রের সেসব দিন নেই। একযুগ ধরে শুধু প্রেমের চলচ্চিত্র বানানো হচ্ছে। ফ্যামিলি ড্রামার চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে গেছে। আগে ফ্যামিলি ড্রামার চলচ্চিত্র হতো। সেগুলোতে মানুষ নিজেদের খুঁজে পেত। কিন্তু একঘেয়েমি আসছে প্রেমের চলচ্চিত্র। তাই মানুষ দেখছে না। এছাড়া হাতের মুঠোয় ইন্টারনেটের কারণে মানুষ সারাবিশ্বের সবকিছু দেখছে যেটা আগে ছিল না। এসব কারণে মানুষ আর হলে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখছে না। এসব কারণেই চলচ্চিত্র হয় না এখন। যে কটা হয় সেখানেও ডাক পাই না। অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন পেলাম না। গাঙ্গুয়ার জয়পুরহাটে জন্ম। আট ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। চলচ্চিত্রে কাজ করছেন ৪৩ বছর ধরে। প্রয়াত নায়ক জসিম তার নাম পারভেজ চৌধুরী থেকে গাঙ্গুয়া দেন। তিনি বলেন, জসিম ভাই বলেছিলেন এই নাম দিলে ভিলেন হিসেবে আমাকে নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি যা বলেছিলেন তাই হয়েছে। দেশের মানুষের কাছে আমি এ নামেই পরিচিতি পেয়েছি। তিনি আমার ওস্তাদ। এরপর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ম্যাক্সিমাম চলচ্চিত্রে আমি ফাইটে কাজ করেছি। বর্তমানে জীবনটাকে কিভাবে উপলব্ধি করেন? গাঙ্গুয়া বলেন, প্রায়ই মনে হয় অভিনয় করতে আসার যোগফল শূন্য। আগে আমাদের লেখাপড়া কম ছিল। না বুঝেই যে কোন কিছু করতাম। শুধু অভিনয় করে জীবনের শেষে এসে এজন্য কষ্ট সইতে হচ্ছে। অবশিষ্ট বলে কিছু নেই। কারণ অভিনয় সেক্টরে পেনশনের ব্যবস্থা নেই। একজন শিল্পী চলচ্চিত্রে ৫০ বছর কাজের পর আরও ৩০ বছর বাঁচলে ওই পরের সময়টা তার কষ্টে কাটে। কারণ তার সঞ্চয় থাকে না। তবে আমার কোন কষ্ট নেই। চারপাশে ভাই বন্ধুরা অনেক কষ্টে আছে। এজন্য মাঝে মধ্যে খুব খারাপ লাগে। এত এত বছর একটা সেক্টরে কাজ করে সবাই হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছে। চলচ্চিত্রে মন্দ মানুষ হলেও বাস্তবে গাঙ্গুয়া ঠিক তার উল্টো। তিনি বলেন, আমি নামাজ, রোজা পালন করি। চলচ্চিত্রের বাইরে আর পাঁচটা মানুষের মতো সাধারণ। আমার সংসার আছে। একমাত্র মেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করে একটি কোরিয়ান স্কুলে শিক্ষকতা করছে। আমার স্ত্রী গৃহিণীর পাশাপাশি বিউটিশিয়ান। সমস্যাটা হলো আমার। অভিনয় ছাড়া আমার কোন পেশা নেই। কিছু কাজ জানিও না। স্ত্রী মেয়েরা কিছু কাজ করে বলে রক্ষা। সংসার জীবনে আমি ভীষণ সুখী একজন মানুষ। দোয়া চাই, যেন ভাল থাকি।
×