ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হত্যায় ৫ খুনী গ্রেফতার

তোবারকের চাকরিচ্যুত কর্মচারী শাহিনই খুন করায় তাকে

প্রকাশিত: ১০:১৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

 তোবারকের চাকরিচ্যুত কর্মচারী শাহিনই খুন করায় তাকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন নিকেতন আবাসিক এলাকায় নিজ ফ্ল্যাটে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শাহ মোহাম্মদ তোবারক হোসেন হত্যায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ইমন হাসান ও গোলাম রাব্বি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বাকি তিনজন -বাবুল প্রধান ওরফে বাবু, সোহেল প্রধান ও আলামিন খন্দকার ওরফে রিহানকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। বাসায় থাকা নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার লোভেই ভাড়াটিয়া খুনী দিয়ে হত্যাকা-টি ঘটায় তোবারক হোসেনের চাকরিচ্যুত কর্মচারী শাহীন। হত্যার পরিকল্পনা না থাকলেও ডাকাতির সময় বাধা দেয়ার কারণে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। গত ২৫ ডিসেম্বর নিপ্পন গলি সংলগ্ন শান্তিনিকেতন আবাসিক এলাকার ১৭৮ নম্বর ছয় তলা বাড়ির চতুর্থ তলার নিজ ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তোবারক হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত গোলাম রাব্বি, বাবুল হোসেন ওরফে বাবু, সোহেল প্রধান, ইমন হোসেন ওরফে হাসান ও মোঃ আলামিন খন্দকার ওরফে রিহানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। রবিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন জানান, নিহত ব্যবসায়ী তোবারকের দোকান ও ব্যবসার কিছু অংশ দেখভাল করত শাহিন ও শিহাব নামে দুই কর্মচারী। বিভিন্ন কাজের উছিলায় অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে শাহিনকে চাকরিচ্যুত করেন শাহ তোবারক হোসেন। এরপর থেকেই শাহিন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তোবারকের সঙ্গে শত্রুতা থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। সোহেল নামে এক খুদে ব্যবসায়ীর সঙ্গে এ বিষয়ে শাহিনের কথা হয়। তোবারক হোসেন বাসায় নগদ টাকা রাখত একথা শাহিন জানত। ওই টাকা লুটের জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক চাঁদপুর ৪ ও কুমিল্লার এক ডাকাতকে ভাড়া করে। মোহাম্মদ আলী নামে এক কেয়ারটেকার ১০ বছর আগে তোবারকের বাসায় মারা যান। তার ছেলে সাজিয়ে ইমন নামে একজনকে হাসান নাম দিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর তোবারকের বাসায় পাঠানো হয়। তোবারক হাসানকে নিজ বাসায়ই থাকার ব্যবস্থা করেন। পাশের রুমে থাকতেন তোবারকের সহকারী সাইফুল। হাসান দৈনন্দিন কাজকর্ম নজরে রাখত আর তা শাহিনকে মোবাইলে জানাত। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪ ডিসেম্বর রাব্বি বাবু, হৃদয় ও শিহাব ঘটনার আগের দিন বিকেলে চকবাজার থেকে ছয়টি ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি কেনে। সেদিনই সন্ধ্যায় তারা তোবারকের বাসায় রেকি করে। এরপর তারা ইমন ও রিমনের বাড্ডা এলাকার একটি মেসে অবস্থান নেয়। ঘটনার দিন ২৫ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের নামাজের সময় শান্তিনিকেতনের বাসার নিচে যায় তারা। বাসার দারোয়ান গেট খুলে মসজিদে গেলে ইমন নিচে নামে। তোবারকের ফ্ল্যাটে ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বি, বাবু, রিমন, শিহাব ও হৃদয়দের নিয়ে ৪ তলার ফ্ল্যাটে অবস্থান করতে থাকে। শাহিন ও সোহেল বাইরে অবস্থান করতে থাকে। হাসান ও অন্যরা ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি নিয়ে তোবারকের শোবার ঘরে ঢুকে। তারা ঘুমন্ত অবস্থায় তোবারক হোসেন ও তার সহকারী সাইফুলকে বিছানায় চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে দুজনের হাত-পা বেঁধে ফেলে। চোখে-মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তখন বাবু নামের ভাড়াটে সন্ত্রাসীও ছুরিকাঘাতে আহত হয়। তোবারক নিস্তেজ হয়ে গেলে আহত সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে আলমারিতে থাকা নগদ টাকা লুট করে পালিয়ে যায় তারা। এরপর বাড্ডার নদ্দা এলাকার একটি মেসে গিয়ে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে সবাই চলে যায়। আব্দুল বাতেন আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও রক্তমাখা দড়ি। ওই ঘটনায় জড়িত শাহিন, শিহাব ও হৃদয় পলাতক আছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তারা গ্রেফতার হলে বাসা থেকে কত টাকা লুট হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। রবিবার বিকেলেই তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় ইমন হাসান ও গোলাম রাব্বি। বাকি তিন জন বাবুল প্রধান ওরফে বাবু, সোহেল প্রধান ও আলামিন খন্দকার ওরফে রিহানকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। এ ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় নিহতের ছোট ভাই মোবারক হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, তোবারক হোসেন একাই ওই বাসায় থাকতেন। তার কিছু অনুসারী সব সময়ই তার সঙ্গে থাকতেন। তিনি চট্টগ্রামের শফি মাইজভা-ারীর অনুসারী ছিলেন। তোবারক হোসেন ছিলেন মহাখালী কাঁচাবাজারের কাছে ‘মামা প্লাজা’ নামে একটি পাঁচ তলা শপিংমলের মালিক। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ইফতেখার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, পাঁচ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে নিহত তোবারক হোসেনের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। নিহতের বড় মেয়ে বিবাহিত। এরপর ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। এক মেয়ে ব্যারিস্টারি পড়ছেন। আরেক মেয়ে এ লেভেলে পড়ে। পারিবারিক কলহের জেরে নিহতের স্ত্রী মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় থাকেন। তার সঙ্গে থাকেন দুই মেয়ে। তোবারক হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানাধীন চরপাড়া গ্রামে।
×