স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘনিয়ে আসছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। গতবারের মতো এবারও দুই সিটি কর্পোরেশনে লড়াইয়ে নামার ব্যাপারে ইতিবাচক বিএনপি। সে হিসেবে এবারও দলটির নেতাকর্মীদের আগ্রহ মেয়র পদের প্রার্থী নিয়ে। নেতাকর্মীরা বলছেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে যাদের হৃদ্য রয়েছে, যাদের জনপরিচিতি আছে, তাদের বিবেচনা করা হোক। এক্ষেত্রে ভেঙে দেয়া হোক পরিবারতন্ত্রের চর্চা।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি-ডিএসসিসি) ভোট হবে। আর এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলে দলটি ইতোমধ্যে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত দলটি তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে দলীয় মনোনয়ন আহ্বান করেছে। এ দুই সিটিতে একাধিক প্রার্থী কাজ করলেও ডিএনসিসির মেয়র পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন।
আর ডিএসসিসির মেয়র পদে বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে দলের বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের সম্ভাবনাই এখন পর্যন্ত বেশি।
বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, আলোচনায় যিনিই থাকুন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে ভাবতে হবে ভোটার ও যারা অলি-গলি গিয়ে ভোট চাইবেন, সেই মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের কথা। যে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ রয়েছে, ভোটার ও জনপরিসরে যার পরিচিতি রয়েছে, তাকে মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করতে হবে। নির্বাচনের আগে কাউকে প্রার্থী করে মাঠে নামিয়ে দেয়া হলে ভোটাররা মৌসুমি রাজনীতিক ধরতে পারেন তাকে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিত্বের নেতাকে বিবেচনা করা উচিত।
দুই সিটিতে তাবিথ এবং ইশরাকের বিষয়ে আপত্তি তুলে তিনি বলেন, তাবিথ আউয়াল আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। মিন্টু ভাই ২০০১ সালে আমাদের দলে জয়েন করেছেন, দলের প্রতি তার যে অবদান সে অনুযায়ী দলও তাকে মূল্যায়ন করেছে। তার ছেলেকে গত নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি স্থানীয় নেতাকর্মী বা ভোটারদের সঙ্গে মিশতে পারেননি। তাবিথের আমেরিকার নাগরিকত্ব রয়েছে, তিনি ডিপ্লোম্যাটিক ডিসিপ্লিনের মানুষ, সেখানেই তিনি কমফোর্ট ফিল করেন। তার ওখানেই কাজ করা উচিত।
আমি মনে করি তাবিথের পরিবর্তে মেয়র পদে তার বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে মনোনয়ন দেয়া উচিত অথবা দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বিবেচনা করা উচিত। আলাল ওই এলাকা থেকে এমপি নির্বাচন করেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মী এবং ভোটারদের সঙ্গে তার হৃদ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দক্ষিণে ইশরাক হোসেনের কথা বলা হচ্ছে। তিনি দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। তার বাবা একজন দক্ষ সংগঠক ও বিজ্ঞ নেতা ছিলেন। দলের জন্য তার বাবা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার যে অবদান তাতে ইশরাককে একটা আসনের এমপি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে, কিন্তু মেয়র পদ আরও বড় বিষয়। বেশ কয়েকটা সংসদীয় আসন।
দক্ষিণের ক্ষেত্রে বরং আফরোজা আব্বাস (মহিলা দলের সভাপতি), আব্দুস সালাম (বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা), সালাহউদ্দিন আহমেদ (কেন্দ্রীয় নেতা), নবী উল্লাহ নবী (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা)- এদের বিবেচনা করা উচিত। মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা পাশ কাটিয়ে যদি পরিবারতন্ত্রকে গুরুত্ব দেয়া হয়, তবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে, যা দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের জন্য গতবারে আমাদের মেয়র প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। উনি তো অলমোস্ট এক ধরনের গণসংযোগে নেমে গেছেন। আর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তারাও মনোনয়নের জন্য আমাদের পর্যায়ে, বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমাদের যারা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আছেন, তারা বিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রথমে যেটা দরকার, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, কিন্তু এই নির্বাচন কমিশন অবিশ্বাস্য রকমের তৎপর সরকারের পক্ষে।
তাদের সরিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিলে সেই নির্বাচনে যেই হোক আমাদের কোন সমস্যা নেই। আর যদি দলের সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচন কমিশনে যে-ই থাকুক আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। সেক্ষেত্রে আগে যারা নির্বাচন করেছে তাদের অগ্রাধিকার থাকা উচিত। অথবা তাদের মধ্যে যদি কেউ আগ্রহী না থাকে, নতুন মুখ মানুষের সহানুভূতিতে আসে, সেদিকটা বিবেচনায় রেখে মনোনয়ন দেয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের শঙ্কা আছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। এই কমিশন ও সরকারের অধীনে জনগণ যে রায় দেয়, তা প্রতিফলিত হয় না। তারপরেও আমরা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করি বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে দাবি করে ফখরুল বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে না। তাই আমরা বিশ্বাস করি, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপিও অংশগ্রহণ করবে। এই নির্বাচনটা প্রতিযোগিতামূলক হোক, এটাই আশা করি। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার, সুষ্ঠু, এ্যাকসেপ্টেবল এবং ক্রেডিবল করতে চান। নির্বাচনে যে-ই বিজয়ী হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেরে গেলে সরকারের ওপর আকাশ ভেঙে পড়বে না। আমরা সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি নির্বাচন করতে চাই। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: