ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিল ঢাকার দুই সিটি

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিল ঢাকার দুই সিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজ সীমানায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হোল্ডিং,সড়কবাতিসহ সকল প্রকার টেক্স মওকুফ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম। একইসাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাণে তার কর্পোরেশনের দরজা সব সময়ের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খোলা থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ টি ওয়ার্ডেও ৯৮৮ টি রাস্তা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। একইসাথে মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং টেক্স যৌথভাবে সম্পূর্ন মওকুফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ও সিটি কর্পোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারের যে কোন অনুষ্ঠানে অর্ধেক ফি দিয়ে ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র। সোমবার দুপুরে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে বসবাসকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের এবং তাদের পরিবারবগের্র সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দুই মেয়র এসব ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে কয়েকশ’ অতিথি অংশ নেন। এর আগে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবর্ধনার উদ্বোধন করা হয়। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম, ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন ও মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের উপস্থিতিতে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এই উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় জাতীয় সংগীত পরবেশন করা হয়। এরপর বিভিন্ন ধর্ম থেকে পবিত্র পাঠের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু“ করা হয়। বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্মানার্থে সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের এক হাজার বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট হোল্ডিং ট্যাক্সমুক্ত ছিল। আপনাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১,৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাট আমরা হোল্ডিং ট্যাক্সমুক্ত করিয়েছি। আজকে বলতে চাই, যদি মুক্তিযোদ্ধাদের কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাাব থাকে, আমাকে জানাবেন, সেটা বাস্তবায়ন করে দেব। সেটি ২ হাজার বা ২৫০০ বর্গফুট কিংবা যাই থাকুক। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নিজেকে সফল দাবি করে দক্ষিণের মেয়র বলেন, আজিমপুর ও জুরাইন কবরস্থানে আমরা সংরক্ষিত ও নির্দিষ্ট জায়গা করে দিয়েছি সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান করতে চাইলে সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্ধেক ভাড়ায় করে দেবার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, যেগুলো বললাম, এগুলো অত্যন্ত সামান্য। আপনারা যা দিয়েছেন, তার প্রতিদানে এটা কিছুই না। মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুর কণ্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এখন বিশ্বেও দ্বিতীয় পোশপাক রপ্তানীকারক দেশ, বিশ্বের ১২৪ টি দেশে ওষুধ রপ্তানী করা হয়। সময় এখন পাল্টে গেছে। তারই নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে বাতি দিয়েছি, প্রায় ৮ থেকে ৮৫ ভাগ রাস্তা পাকা করেছি। আমরা আগামীতে দায়িত্ব পেলে এই ঢাকাকে বদলে দেবো অবশ্যই এ ঢাকা পাল্টে যাবে। মেয়র বলেন, এক মূহুর্তের জন্যও দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিনি। আমি দুস্কৃতিকারীদেও কোন রকমের পরোয়া করিনি আমি মেয়র হানিফের পুত্র আমার বাবার মতোই কোন অন্যায় কাজে ও দৃস্কৃতিকারীদের আমি পরোয়া করি না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত সুন্দর স্বচ্ছ নগরী গড়তে যা প্রয়োজন তাই করেছি। প্রতিটি মহল্লায় স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। বিনামূল্যে ঔষধ ও ডাক্তার সহ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মেয়র নতুন ১৮ টি ওয়ার্ডে নতুন ঢাকার জন্য তৈরী হওয়া ৯৮৮ টি রাস্তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান। অনুষ্ঠানে উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়া হবে। ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুই সিটিতে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তখন উত্তরের মেয়র ছিলেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ৫১২টি বাড়ি থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে। তবে এখন সব মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি হোল্ডিং ট্যাক্সমুক্ত করতে সরকারের কাছে আবেদন করা হবে। বর্তমানে উত্তর সিটিতে হোল্ডিং ট্যাক্স ৭ শতাংশ, কনসালট্যান্টি ট্যাক্স ২ শতাংশ আর সড়ক বাতি ট্যাক্স ৩ শতাংশ প্রদান করতে হয়। প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন,হোল্ডিং,কনসালট্যান্টি ও সড়ক বাতি ট্যাক্স যাতে পুরোপুরি মওকুফ করা হয়, সে বিষয়ে আমি এখান থেকে গিয়ে চিঠি লেখব। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর জন্য সব ধরনের ট্যাক্স যেন মওকুফ হয়, অনুরোধ করব। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের দেখাশোনা করাই বড় কাজ, একই সঙ্গে বড় সম্মান। এখন থেকে সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য আমার সিটি কর্পোরেশনের দরজা সবার আগে খোলঅ থাকবে। যে কোন দিন মুক্তিযোদ্ধারা আমার অফিসে আসবেন যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক আমি তাদের আগে স্বাক্ষাতকার দেবো কারণ তাদের কারণেই এদেশ স্বাধীন হয়েছে ও আজ আমি এখানে মেয়র হিসেবে দাড়িয়ে আছি। নয়তো আমি মেয়রই হতে পারতাম না। মুক্তিযোদ্ধারা ভাল থাকলে দেশ ভাল থাকবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই এদেশের সবকিছুতেই দূষণ শুরু হয়েছে।দেশদ্রোহী একটি গোষ্টি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই দেশের রাজনীতিকে দূষণ করতে শুরু করে। ৭৫ এর পরপরই দেশের সব খাতে এসব স্বার্থান্বেষি লেঅকজন নিজে নিজে কিভাবে ধনী হতে পারেন তার চেষ্টা শুরু করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে গড়া স্বাধীন বাংলা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রধান বাধা হয়ে দাড়ায়। মেয়র ৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৭১ এর ২৬ মার্চ রাজারবাগে পুলিশ লাইনের পাশে আমাদের বাসায় বাংলাদেশের দুটি পতাকা উত্তোলণ করায় আমার বড় দুই ভাই ও বাবাকে পাক বাহিনী নানারকম অত্যাচার করে। কেনো আমরা বাসায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলাম। পরে আমরা ঐ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হই। তিনি দেশ গড়তে সব সময়ই মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।
×