ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কিত রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

বিতর্কিত রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার হচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর যাচাই-বাছাই ছাড়া রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে রীতিমতো তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ জায়ার নাম রাজাকারের তালিকায় আসার পর ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে ভুলে ভরা সেই ‘বিতর্কিত’ রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার হচ্ছে। ঘটনায় বিব্রত ও ক্ষুব্ধ সরকারের নীতি-নির্ধারকদের নির্দেশে দু’একদিনের মধ্যে তালিকা প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবিলম্বে বিতর্কিত তালিকা প্রত্যাহার করে যাচাই-বাছাইয়ের দাবি উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিতর্কিত তালিকা নিয়ে রীতিমতো বিব্রত ও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে শীর্ষ নেতাদের মাঝে। বিখ্যাত সব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসার ক্ষুব্ধ সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা এনে তা যাচাই-বাছাই না করে প্রকাশ করার জন্য তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এ সংক্রান্ত গবেষকদের নিয়ে উপযুক্ত কমিটি গঠন করে তালিকা যাচাই-বাছাই করে তারপর প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুঃখ প্রকাশ, তালিকা প্রত্যাহারে দুই মন্ত্রীর ইঙ্গিত তালিকা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন আলোচনায় সামনে চলে আসা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ায় প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় সরকারী গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। একই সঙ্গে বলেছেন, ব্যাপকভাবে অভিযোগ পাওয়া গেলে তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। আর ‘দুই-একশ’ নামে ভুল হলে সংশোধন করা হবে। তবে ওই ভুলের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায় অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তালিকা হুবহু তারা প্রকাশ করেছেন, কোন পরিবর্তন করা হয়নি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নোট ছাড়াই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আমি আশা করব মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আরও নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করবে। মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, এখনও এই তালিকা সংশোধন করা সম্ভব। কে করতে পারে সঠিক ভাবে? ওই সময়কার লোকেরা। তাই তাদের জীবিত অবস্থায় প্রকাশ পাওয়ায় আমি মনে করি, তারা আহত হলেও, কষ্ট পেলেও একটা সংশোধন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি এটা ৩০ বছর পর প্রকাশ হতো, তাহলে সংশোধন হওয়ার সুযোগ থাকত না। কিছু ভুলের অভিযোগ এলেও রাজাকারের ওই তালিকা বিতর্কিত হয়নি বলেও মনে করছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। বলেন, অভিযোগ যেহেতু এসেছে... বিতর্কিত হয়ে গেল- এটা বলা যাবে না। এটা দেখতে হবে সংখ্যাটা কতজন? আমার মনে হয়, আমি যতটুকু খবর পাচ্ছি; বরিশাল বিভাগ সম্পর্কেই অভিযোগগুলো পাচ্ছি। রাজাকারের নামের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার কারণ জানতে চাইলে সোমবার মন্ত্রী বলেছিলেন ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এর কারণ হলো এই তালিকাটি ১৯৭১ সালের করা। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করেছি। মঙ্গলবার তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করব না যে আমরা করেছি। এই তালিকা আগেই করে রেখে গেছে। সেখানে কোন ইল মোটিভ থাকতে পারে। উদ্দেশ্যমূলক... ভাই, যেভাবে আসছে, আমি তো বললাম, আমরা এটায় এডিট করি নাই। আমরা এখানে দাড়ি, কমা, সেমিকোলন যেভাবে এসেছে; সেটা প্রকাশ করেছি। একজন সাংবাদিক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই ভুলের জন্য জাতির কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে কেউ কেউ দাবি করেছেন। ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দুঃখ প্রকাশ করার অর্থ যদি আপনি না বোঝেন আমি কী এটা করেছি? এটা যদি আপনি চ্যালেঞ্জ করেন, তাহলে এসে দেখে যান রেকর্ড। আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে যেটা বলছি, সেখানেই থাকেন। তালিকা আমরা তৈরি করি নাই। জাতির দাবি ছিল, তাই প্রকাশ করেছি। আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করি নাই। দুঃখ প্রকাশ করা আর ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। আমি এই কাজ না করেও দায়দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তীর মেয়ে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আমার নাম আসলে আমি যেভাবে কষ্ট পেতাম, উনারাও সেভাবে কষ্ট পেয়েছেন। সেজন্য আমি ব্যথিত। আমিও কষ্ট পেয়েছি, সেটা তো আমি বলেছি। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নোট ছাড়াই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আমি আশা করব মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আরও নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করবে। মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকারদের যে তথ্য আছে, সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়েছিল। পরে পাঠানো হয়েছে। এটি একটি দুরূহ ব্যাপার। দালাল আইনে ১৯৭২ সালে যাদের নামে মামলা হয়েছিল, তদন্ত শুরু হয়েছিল, পরে আবার কেউ কেউ মামলা থেকে প্রত্যাহার হয়েছিল, তাদের আমরা প্রাথমিকভাবে নিয়েছি। আমরা প্রাথমিকভাবে সেই মামলার বিবাদীদের নাম লিস্ট করি। পরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিই। তবে সেই লিস্টে কিছু মন্তব্য করে দিয়েছি যে, অনেক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এ হিসেবে আমরা আমাদের এখান থেকে একটি নোটও দিয়েছিলাম। সেই নোটে যাদের নামের মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, তাদের লেখা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুল করে হোক আর যেভাবে হোক এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি মনে করি আরও যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আবার তালিকা প্রকাশ করবে। আমরা যেটা পাঠিয়েছিলাম, সেখানে নোট দিয়েছিলাম এত থেকে এত নম্বরের মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে এই নোট ছাড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। রাজাকারের তালিকা তৈরি করছে কে? তালিকা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক হলেও কী অবস্থায় এরং কারা আজ তালিকা প্রণয়ন করছে মন্ত্রণালয়ের কেউই নিশ্চিত করে এখনও বলতে পারছেন না। তবে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজবীবীরা একে আমলাদের একটি চক্রের কাজ বলে অভিযোগ তুলেছেন। দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের পরিচয় জানা না গেলেও জানা গেছে, গত এপ্রিলে রাজাকারের তালিকা প্রকাশের বিষয়টি সামনে আসে। ২৮ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতন-ভাতা নেয়া রাজাকারদের তালিকা জেলা প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহের সুপারিশ করা হয়। ২১ মে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়। গত ২৮ আগস্ট আবারও তালিকা পাঠানোর জন্য তাগিদ দিয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে শুধু তালিকা সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোন তালিকা পায়নি বলে জানানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে তেমন সাড়া পায়নি। সংসদীয় কমিটির ১ ডিসেম্বরের বৈঠকেই তালিকার কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন পেশ করা হয়। জানানো হয়, চাঁদপুর থেকে নয় জন, মেহেরপুরে ১৬৯ জন, শরীয়তপুরে ৪৪ জন, বাগেরহাটে একজন এবং নড়াইল থেকে ৫০ জন রাজাকারের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খাগড়াছড়ি, মাগুরা, শেরপুর, গাইবান্ধা ও যশোরের শার্শা উপজেলায় কোন বেতনভোগী রাজাকার ছিল না। একে একে তথ্য আসছে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার তালিকায় গত রবিবার প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই করেই ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বলেন, যারা ’৭১ সালে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল, সেটুকু প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তালিকা প্রকাশ হতেই শুরু হয় বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তথ্য আসছে। রাজশাহী, বরগুনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত। এসেছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার নামও। ফলে এই তালিকা নিয়ে ওইসব এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এই তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজশাহীতে। তালিকাভুক্ত স্বাধীনতাবিরোধীদের কয়েকটি নাম নিয়ে দেখা দিয়েছে অসঙ্গতি। ফলে তালিকাটি পুনর্বিবেচনা করে আবারও সংশোধনের দাবি উঠেছে। তালিকার মধ্যে রাজশাহী বিভাগে রয়েছে এক থেকে ১৫৪টি তালিকা। এসব তালিকায় কয়েকশ’ ব্যক্তির নাম রয়েছে। যাদের কয়েকজনের নাম এসেছে একাধিকবার। আশ্চর্যজনকভাবে ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) নাম এসেছে খোদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর রাজশাহীর কৃতী সন্তান এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের। অথচ এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ’৭১-এর যুদ্ধের সময় থেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও আদর্শের মানুষ। ফলে এ তালিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে অসঙ্গতি। স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকাটিতে নাম রয়েছে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এ্যাডভোকেট মহসিন আলীর। নাম এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত এ্যাডভোকেট আব্দুস সালামেরও। তার পরিবারের পাঁচ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন। ওই সময় আব্দুস সালাম পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের দোসরদের ভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করেন। ৮৯ নম্বর তালিকায় থাকা পাঁচজনের মধ্যে বাকি দু’জন হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব। যদিও এই তালিকার মন্তব্যের ঘরে লেখা রয়েছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে আর কোন তথ্য নেই। সেই হিসেবে ধরা যায়, এই পাঁচ ব্যক্তি রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না বলেই তাদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, দাবি একটাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, সেই শক্তিকে যারা রাজাকার-আলবদরের তালিকায় যুক্ত করেছে সেটা কীভাবে হলো, তার উৎস কারা, সেটা খুঁজে বের করে আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে জামায়াতের দোসররা রয়েছে। তা না হলে এ ধরনের ভুলে ভরা একটি রাজাকারের তালিকা প্রকাশ হতো না। যথা দ্রুত সম্ভব এই তালিকা সংশোধনের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সারাজীবন দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাটিয়ে দিলাম আর আজ এই অভিযোগ পেলাম। আমি ব্যথিত, মর্মাহত। আমি বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিচ্ছি এবং কোনভাবেই প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমি কোন দুর্বলতা দেখাতে চাই না। অন্যভাবে সমাধান না হলে, আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। সারাজীবন বাঙালী, দেশের জন্য লড়াই করেছি। এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী হত্যা করেছিল বরিশালের আইনজীবী সুধীর কুমার চক্রবর্তীকে। তার ছেলে আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে তপন কুমারের নাম এসেছে। একই সঙ্গে আছে তার মা প্রয়াত ঊষা চক্রবর্তীর নামও। বরিশাল সদর উপজেলা অংশে ১০৭ রাজাকারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নগরের শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তীর স্ত্রী প্রয়াত ঊষা রানী চক্রবর্তী ও তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর নাম রয়েছে। তপন কুমার চক্রবর্তী বলেছেন, এটা খুবই লজ্জার বিষয়। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে শহীদ হয়েছেন। অথচ এত বছর পর রাষ্ট্র আমাকে ও আমার মাকে রাজাকারের খেতাব দিল। এই লজ্জা, দুঃখ কোথায় রাখব? তপন কুমার চক্রবর্তীর মেয়ে মনীষা চক্রবর্তী পেশায় চিকিৎসক এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব। মনীষা বলেন, এটা ভুল নয়, পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক বলেন, আমরা এমন ঘটনায় বিস্মিত, লজ্জিত। আমরা চাই, এই তালিকা সংশোধন করে ওই পরিবারের সম্মান সুরক্ষা করা হোক। বরিশালের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মিহির লাল দত্ত ও তার বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিতেন্দ্র লাল দত্তের নামও এসেছে তালিকায়। রাজাকারের তালিকায় বাবা ও দাদার নাম আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মিহির লাল দত্তের ছেলে শুভব্রত দত্ত। তিনি বলেছেন, আমার বাবা একজন ভাষাসৈনিক এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। আমার দাদা ও এক কাকা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। আমার বাবা ও শহীদ দাদার নাম কীভাবে রাজাকারের তালিকায় এসেছে, সেটা আমার বোধগম্য নয়। বরিশাল বিভাগে ছয় নারীর নাম এসেছে তালিকায়। তালিকার অনেক নামের মতো কিছু নাম নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তালিকায় বরিশাল বিভাগের ছয় নারী রাজাকারের নামগুলো হলোÑ বরিশাল নগরীর ঊষা রানী চক্রবর্তী (সিরিয়াল-৪৫), নগরীর ঝাউতলা এলাকার কনক প্রভা মজুমদার (সিরিয়াল-৩৭), উজিরপুরের বিজয়া বালা দাস (সিরিয়াল-৩৫), আভা রানী দাস (সিরিয়াল-২৭), পারুল বালা কর্মকার (সিরিয়াল-৩৩) ও বাবুগঞ্জের দেহেরগতি এলাকার রাবিয়া বেগম (সিরিয়াল-১৫১)। এদের মধ্যে ঊষা রানী চক্রবর্তী গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর মা। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় চারজনের নাম থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মজিবুল হক। আমির হামজা ওরফে রুস্তম খাঁ ও খলিলুর রহমান ওরফে মানিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মৃত্যুর পর দুই পরিবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছে। কিন্তু তাদের নাম এসেছে তালিকায়। এ ছাড়া আমজাদ আলী নামের একজনের নাম এসেছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে না গেলেও আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন। মজিবুল হকের ছেলে রেজাউল হক বলেছেন, আমার বাবা পাথরঘাটায় মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তাকে ঘিরেই এখানে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। পাথরঘাটার মুক্তিযোদ্ধা মনি ম-ল বলেছেন, বরগুনা মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত খলিলুর রহমানের নাম এই তালিকায় নেই। তবে রাজাকারের তালিকায় এক নম্বরে নাম আছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মজিবুল হকের। তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা খলিল ও আমির হামজার নাম আছে রাজাকারের তালিকায়, যা লজ্জার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুল হকের স্ত্রী মোসা. নুরজাহান বেগমের বয়স এখন ৯০ বছর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, বড় বেদনার, বড় কষ্টের। মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি যিনি এখন রাজাকারের তালিকায়। বিদায়ের বেলায় দেখতে হলো আমার স্বামীর নাম রাজাকারের তালিকায়, তাও আবার ১ নম্বরে। এখন কবর থেকে তুলে আমার স্বামীর বিচার করতে হবে? তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী মজিবুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে নামিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরে জিয়াউর রহমান তাকে ২০ লাখ টাকার বিনিময় তার দলে (বিএনপি) নেয়ার জন্য অনেকবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাননি তিনি। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রাজাকারদের নামের তালিকায় সাবেক সাংসদ ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কছিম উদ্দীন আহম্মেদ, সাবেক এমএনএ মজিবর রহমান, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মৃত ফরেজ উদ্দীন আহম্মেদ, আওয়ামী লীগ নেতা তাহের উদ্দীন সরদার, আওয়ামী লীগ নেতা মৃত মহসিন আলী মল্লিক, লাইব্রেরিয়ান মৃত হবিবর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা নজিবর রহমান, সান্তাহার কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুস শুকুরের নাম দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। আদমদীঘি উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোরশেদ খান বলেছেন, তালিকায় এই উপজেলার আওয়ামী লীগের যেসব নেতার নাম এসেছে, তাদের নেতৃত্বে এই এলাকার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এর মধ্যে কছিম উদ্দীন ও মজিবর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। পটুয়াখালীর বাউফলে রাজাকারের তালিকায় আছে মুক্তিযোদ্ধার নাম, বাদ পরেছেন আনেক চিহ্নিত রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধা এবিএম আবদুল খালেক। তার নাম লাল মুক্তিবার্তা (নম্বর ০৬০৩০২০৪১৩), মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে (নম্বর-২০২, তাং ৮/১১/২০০৪) এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদপত্র আছে (নম্বর ম-১১০৬২, তাং-১/২/২০০২। এছাড়া ১৯৯৪ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভোটার তালিকায় তার নাম রয়েছে (ভোটার নম্বর ৭৮-৩৮-৭৭-০০৩)। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত। ১৯৯৯ সালের ৬ জুন তিনি মারা যান। কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকারী তালিকাভুক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক হাওলাদারের নামও রয়েছে রাজাকারের তালিকায়। তিনি কনকদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ ইউসুফ আলী হাওলাদার বলেন, ‘আবদুল হক ন্যাপ করতেন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ করেন। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম রাজাগারের তালিকায় এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জার ও দুঃখজনক বিষয়। রাজাকারের তালিকায় নাম রয়েছে বাউফল পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের হাচন দালালের ছেলে আনছার দালালের (৭৫)। তিনি যুদ্ধকালীন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন। এলাকায় তিনি একজন ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। রাজাকের তালিকায় তার নাম দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। ছোট ডালিমা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম মৃধা (৭৫) বলেন, ‘আনছার দালাল রাজাকার ছিলেন না। কেউ শত্রুতা করে তার নাম দিতে পারেন।’ হোসনাবাদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু মোতালেব মুন্সি (৭২) বলেন, আনছার দালাল যুদ্ধকালীন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। তার নাম রাজাকারের তালিকায় শুনতে পেয়ে খুবই কষ্ট পেয়েছি। প্রকাশিত ৬৫৯ পৃষ্ঠার তালিকায় নাম রয়েছে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের শীর্ষ নেতা গোলাম আযমের নাম রয়েছে পাঁচবার। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা খাজা মঈনুদ্দিন ও খান-এ-সবুরের নাম রয়েছে তিনবার করে। রয়েছে ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরও নামও। সাড়ে ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার তালিকা পুরোটাই এলোমেলো। কোথাও বাংলায়, কোথাও আবার ইংরেজীতে নাম লেখা রয়েছে। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, আল মুজাহিদী বাহিনীর সদস্যদের নাম আলাদা করা নেই তালিকাতে। কার কি অপরাধ সেটিরও কোন উল্লেখ নেই তালিকায়। উল্টো তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নামও। সিরাজগঞ্জ থেকে জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, সিরাজগঞ্জের প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন উত্তরাঞ্চলের বেসরকারী সেক্টর পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের’ পরিচালক, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত এমপি ও সপ্তম জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পীকার মির্জা আব্দুল লতিফের (লতিফ মির্জা) নাম আছে রাজাকারের তালিকায়! তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এক সময় সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমেরও নাম উঠেছে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায়। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। মঙ্গলবার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এটি আমলা নির্ভর রাজাকারের তালিকা। আবার কেউ কেউ বলেছেন লতিফ মির্জা ও খোরশেদ আলম মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন লজ্জার হাত থেকে। মির্জা আব্দুল লতিফের (লতিফ মির্জা) নাম রাজাকারের তালিকায় ওঠার প্রতিবাদে আজ বুধবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সান্তাহার থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, তালিকায় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কছিম উদ্দিন আহমেদ, মজিবর রহমান আক্কেলপুরী, ফরেজ উদ্দিন মাস্টার, মজিবর রহমান মাস্টার, তাহের উদ্দিন মাস্টার, ডাঃ মহসিন আলী মল্লিক, হবিবর রহমান, নজিবর রহমান সরদার, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শুকুর ও আমিরুল ইসলামসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ছাপা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়ার সান্তাহার স্বাধীনতা মঞ্চে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। স্বাধীনতা স্মৃতি মঞ্চ নির্মাণ কমিটির সভাপতি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাসেমের আহ্বানে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী, আব্দুল আলিম, আব্দুল হান্নান, আওয়ামী লীগ নেতা আবু রেজা খান, সাজেদুল ইসলাম চম্পা, কৃষকলীগ নেতা হারুনুর রশিদ সোহেল প্রমুখ। কর্মসূচীর আহ্বায়ক আবুল কাসেম জানান, চলমান কর্মসূচীর অংশ হিসাবে বুধবার সংবাদ সম্মেলন এবং আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি প্রদান এবং সন্ধ্যায় ফের অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। মাগুরা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সরকারের করা ভাতাপ্রাপ্ত রাজাকারদের তালিকা মাগুরার থানাগুলো থেকে গায়েব হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে মাগুরার বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর এ অভিযোগ করেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাইফুজ্জামান শিখরসহ বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কু-ু, সহ-সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ্, মুন্সি রেজাউল হক, আবু নাসির বাবলু প্রমুখ। তালিকা প্রত্যাহার ও যাচাই-বাছাইয়ের তাগিদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শাহরিয়ার কবির বলেন, রাজাকারের তালিকা বা যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় এটি সম্পন্ন করা হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনা আছে। তারা আমলা দিয়ে এ তালিকা প্রণয়ন করেছেন। এটা আমলাদের কাজ নয়। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক বা বিশেষজ্ঞ কাউকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। যার ফলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় এ তালিকা নতুন করে যাচাই-বাছাই করে আবারও প্রকাশ করতে হবে এবং এ কাজটি সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বলা হচ্ছে, রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে আল-বদর, আল-শামস্, আল-মুজাহিদদেরও নাম রয়েছে। এগুলো আলাদাভাবে করার দরকার ছিল। সে সঙ্গে শুধুমাত্র নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের সার্বিক পরিচয় এবং অপরাধের ধরন সম্পর্কে কোন কথা নেই। এ তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর নাম এসেছে। এটা বিস্ময়কর। রাজাকার পাকিস্তানীদের নিজস্ব বাহিনী ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানকার আনসার বাহিনীর মতো একাত্তরে রাজাকার পাকিস্তানের একটি বাহিনী ছিল। তারা বেতনভোগী ছিল। তারা প্রত্যেকেই কিন্তু যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অনেকেই সে সময় প্রাণের ভয়ে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। আবার সবাই ধর্ষণ-হত্যার সঙ্গে যুক্ত নাও হতে পারেন। অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাও করেছেন। ফলে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী নামের তালিকা হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবির জানান, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির বিভিন্ন শাখাকে ইতোমধ্যেই এ তালিকার বিষয় তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে আগামী ২০ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনটি তাদের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করবে। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলছিলেন, সব কিছু আমলাতন্ত্র দিয়ে হয় না। তালিকা তাই প্রমাণ করেছে। এ তালিকা প্রত্যাহার করতে হবে আগে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের নিয়ে কমিটি করে যাচাই-বাছাই করে তালিকা করতে হবে। এভাবে হবে না। এ তালিকা কারা করেছে কোন কর্মকর্তারা করেছে। ওখানে যারা কাজ করছেন তাদের জন্মই তো একাত্তরে হয়নি। ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডাঃ এম এ হাসান বলেছেন, তালিকা নিয়ে আমাদের কাছে বহু অভিযোগ আসছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উচিত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে তালিকা স্থগিত করা। পরে মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের নিয়ে সমন্বিতভাবে তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। শুধু আমলাদের নিয়ে এ তালিকা হবে না। এমনকি তালিকা নিয়ে যেসব বিতর্ক উঠছে, তা তদন্ত করে এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এরচেয়ে বড় প্রহসন আর কিছু হতে না। এদিকে প্রশ্ন তুলেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও রাউজান আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ফজলুল কবির চৌধুরী যদি রাজাকার হয়ে থাকে তবে কি একজন রাজাকারকে জাতির পিতার সরকার নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন? তিনি যদি রাজাকার হয়ে থাকেন তবে কি একজন রাজাকারের মরদেহ জাতির পিতার নির্দেশে সে সময় সরকারের বিশেষ বিমানে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আনা হয়েছিল? নিজের দাদার নাম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষিত রাজাকারের তালিকায় দেখে ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন রাউজানের তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরী।
×